চট্টগ্রাম নেমে যা জানালেন বন্দীদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১৪ মে ২০২৪, ২২:৩৭
দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় পর স্বজনদের মাঝে ফিরেছেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে পৌঁছে স্বজনদের বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
এদিন বিকেল ৪টার দিকে তাদের বহন করা লাইটারেজ জাহাজ এমভি জাহান মণি-৩ এনসিটি জেটিতে নোঙর করার পর অপেক্ষমান স্বজনদের মাঝে একে একে নেমে আসেন নাবিকরা। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে তাদের দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা।
এনসিটি জেটিতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিল নাবিকদের বিপুল সংখ্যক স্বজন, জাহাজের মালিক পক্ষসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশে পৌঁছে বন্দরের জেটিতে নামার পর নাবিকদের স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরে। নাবিক ও স্বজনের চোখে ছিল আবেগের কান্না, মুখে ছিল আনন্দের জোয়ার।
বন্দরে পৌঁছে জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম বিদেশী নৌ-বাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারো প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন রশিদ বলেন, ‘প্রথম দিন যখন আমরা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে।’
মৃত্যুর হুমকি ছিল জানিয়ে ক্যাপ্টেন রশিদ বলেন, ‘আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছিল। আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি। সেফটি অফ লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মো: আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘বীভৎস দিন থেকে আলোর দিনে ফিরেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়া করবেন।’
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও সচিব মো: ওমর ফারুক, কেএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া অ্যানকারেজ এরিয়ায় নোঙর করে এমভি আবদুল্লাহ। ২৩ নাবিককে নিয়ে লাইটার জাহাজটি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুতুবদিয়া থেকে রওনা হয়। জাহাজটির দায়িত্ব নিতে নাবিকদের নতুন একটি দল সোমবার রাতেই জাহাজে পৌঁছান।
মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা পরিবহন করে আমিরাত যাওয়ার সময় কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ৩২ দিন পর গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি মুক্ত হয়।