৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বৈশ্বিক হালাল পণ্যবাজার

রফতানির নতুন দিগন্ত

-

করোনাকালে এক বছর ধরে বিশ্ব-অর্থনীতিতে চলছে মন্দাভাব। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে দেশে দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশেও সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের অর্থনীতির প্রধান দু’টি খাত হচ্ছে, তৈরী পোশাক রফতানি এবং প্রবাসী আয়। কিন্তু করোনার কারণে এই দু’টি খাতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। কত দিনে খাত দু’টি ফের আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে বলা মুশকিল। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা এবং গতিশীল রাখতে নতুন উদ্যোগের বিকল্প নেই। খুঁজতে হবে বৈচিত্র্যময় রফতানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার। এই বিবেচনায়, বাংলাদেশ বৈশ্বিক হালাল পণ্যবাজারে প্রবেশের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে দেশের রফতানি আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। বৈশ্বিক হিসাব মতে, বিশ্বে আড়াই লাখ কোটি ডলারের মতো ‘আন্তর্জাতিক হালাল বাজার’ রয়েছে। এটি ধরতে চায় বাংলাদেশ। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, বৈশ্বিক এই বাজারে ভালো অবস্থান নিতে পারলে রফতানি আয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
জানা গেছে, এ বাজারে রফতানি বাড়াতে দুবাইভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল হালাল অ্যাক্রিডিটেশন ফোরামের’ (আইএইচএএফ) সদস্য পদ প্রাপ্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডের’ (বিএবি) মাধ্যমে এ ফোরামের সদস্য পদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। আইএইচএএফের সদস্য পদ লাভে বিএবিকে সম্মতি দিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় বাংলাদেশের চাঁদা প্রদান সংক্রান্ত সচিব কমিটি’। একই সাথে চাঁদার হার নির্ধারিত হলে সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বর্তমান বিশ্বে ১৮০ কোটি মুসলিম ভোক্তার পণ্য ও সেবার চাহিদার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক হালাল পণ্য, কাঁচামাল ও সেবার বাজার। ‘দ্য গ্লোবাল হালাল ইন্ডাস্ট্রি : অ্যান ওভারভিউ’-এর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক সেবা খাত ছাড়াই বর্তমানে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের মূল্য প্রায় ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর এ বাজারের আকার বাড়ছে প্রায় ২০ শতাংশ হারে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘হেক্সা রিসার্চ’-এর মতে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১২ দশমিক ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
হালাল পণ্যবাজার দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে বিভিন্ন দেশে হালাল পণ্যের সনদদাতা একাধিক সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এসব সংস্থার মান প্রদান সক্ষমতার প্রত্যয়ন দিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মান প্রত্যয়নকারী সংস্থা গড়ে উঠেছে। হালাল সনদ প্রদানে বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আর দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএইচএএফ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হালাল পণ্য ও সেবার সনদ প্রদানকারী সংস্থার অ্যাক্রিডিটেশন দিয়ে থাকে। বর্তমানে ৩৬টি দেশ ‘আইএইচএএফ’-এর সদস্য। এর মধ্যে ২৯টি দেশ ফোরামের পূর্ণাঙ্গ সদস্য, দু’টি সহযোগী এবং পাঁচটি অ্যাফিলিয়েট সদস্য। সংস্থার প্রধান কাজ হচ্ছে, ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক হালাল অ্যাক্রিডিটেশনের মান ও পদ্ধতি নির্ধারণ; সদস্য দেশগুলোর অ্যাক্রিডিটেশন সংস্থার সাথে পারস্পরিক স্বীকৃত চুক্তি সই; হালাল শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা।
বাংলাদেশ মুসলিম উম্মাহর অংশ হওয়ায় এ কথা বলা যায়, হালাল পণ্য রফতানির মাধ্যমে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ নয়, হালাল খাদ্যশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের বিকাশ ঘটাতে পারে। দেশে সৃজনশীল উদ্যোগ নিলে বিশ্ববাজারে সম্ভাবনাময় এই হালাল খাতের অবস্থান আরো সুসংহত হবে। একই সাথে এ খাতে রফতানি আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। হালাল পণ্য বাজারজাতকরণে দেশের বহু ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে হালাল সনদ গ্রহণে উদ্যোগী হবে। হালাল পণ্য সম্পর্কে বেশি করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করলে ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement