০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বাঁধ নিয়ে ব্যবসা চলছে!

লোভ ভালো নয়

-

বন্যার কবল থেকে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষার্থে প্রত্যেক বছর বাঁধ সংস্কার এবং ক্লোজার-অর্থাৎ বাঁধের ফাটল রোধে তৈরি করা হয় বড় বাঁধÑ নির্মাণের জন্য সরকারকে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ এ সুযোগে ‘বাঁধ ব্যবসায়’ চালানোর অভিযোগ উঠেছে মহলবিশেষের বিরুদ্ধে। এদের উদ্দেশ্য বাঁধ কেটে দেয়া, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের টাকায় ভাগ বসাতে কমিটি বা পিআইসিতে অনুপ্রবেশ, অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে দুর্নীতি করা, অপ্রয়োজনেও প্রকল্প বানিয়ে অসদুদ্দেশ্য হাসিল প্রভৃতি। একটি জাতীয় দৈনিকের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে প্রসঙ্গক্রমে আরো জানানো হয়, বাঁধ ব্যবসায়ে মেতে ওঠা লোকজনের কারণেই হাওর এলাকার সমস্যার কার্যকর সুরাহা হয় না, যদিও বাঁধের কাজ ও ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর হাওর এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল ৭৪৫টি বাঁধের। এবার তার চেয়ে ১১১টি বেশি কমিটি গঠনের কথা জানা যায়। বাঁধের ভাঙনে গতবারের ১৩৫টি ক্লোজারের সংখ্যা এবার আরো বাড়ানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রশাসনিক নজরদারি অপর্যাপ্ত বলে কিছু লোক বর্ষার দিনে হাওরে বাঁধের মূল অংশ কেটে দিয়ে কৃত্রিম ভাঙন সৃষ্টি করে এবং সেখানকার কাজ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যেমনÑ সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরপাড়ের গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘হাওর রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে কেটে বড় বড় ভাঙন বানিয়েছে একটি চক্র। এরপর তারা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে (পিআইসি) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতলবে জনপ্রতিনিধিসহ নেতাদের কাছে তদবির করছে। মামুদপুরের বাসিন্দাদের বাধা ঠেলে গত বছর এ হাওরের বাঁধ কেটে দিলেন একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ফলে জমি নষ্ট হয়েছে এবং খাল গভীর হয়ে গেছে, যা ভরাট করতে অনেক মাটির প্রয়োজন। অথচ এখানে বাঁধ কাটার কোনো দরকারই ছিল না।’ অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রামের মানুষকে পাল্টা দোষারোপ করে বলেছেন, ‘ওরা চেয়ারম্যানের যোগসাজশে এটা করেছে। আমি কিছু জানি না।’ অপর দিকে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বিনা এখতিয়ারে কেন বাঁধ কাটতে যাবো?
এ দিকে অবৈধভাবে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ঘনিয়ার বিলসংলগ্ন বাঁধ এবং শনির হাওরের বাঁধ কেটে বৃহৎ ভাঙন তৈরি করা হয়েছে। মহালিয়া হাওরের স্থানে স্থানে বড় গর্ত করে বড় অঙ্কের বরাদ্দ হাতিয়ে নিয়ে সরকারের অর্থের অপচয়ের চেষ্টাও চলছে। কথিত বাঁধব্যবসায়ীদের এসব দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ফলপ্রসূ ভূমিকা না নেয়ায় এলাকাবাসী অসন্তুষ্ট। এ সংস্থার একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী বলেছেন, ‘মামুদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী হালির হাওরের বাঁধ প্রতি বছর কাটা হয় নিষ্কাশনের প্রয়োজনে। এবারো একই কারণে তা হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাঙন রাতের আঁধারে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তৈরি করেছে।’ হাওরের ‘কৃষি ও কৃষকরক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’ মনে করে, বাঁধে নৌযান চলাচল কিংবা পানি বের হওয়ার অংশে রাবার ড্যাম দিয়ে বাঁধ কাটার মতো অন্যায়কে প্রতিরোধ করা যায়। আসলে, অসাধু বাঁধব্যবসায়ীদের সাথে পাউবো কর্মকর্তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। সুনামগঞ্জের ডিসি বলেন, বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য উপজেলায় কমিটি রয়েছে। এতে সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার প্রতিনিধিও থাকেন। এ বছর এই কমিটি অনুমোদন না করলে কোনো প্রকল্প গৃহীত হবে না এবং পিআইসি গঠিত হবে সতর্কতার সাথে।
হাওর হচ্ছে বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার। হাওরের জন্য উল্লিখিত বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তিদের সততা, দায়িত্ববোধ ও ন্যায়নিষ্ঠা এ জন্য অপরিহার্য।
এখন থেকে আর সংশ্লিষ্ট অসৎ চক্রকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না এবং হাওরের বাঁধগুলোর যথাযথ সুব্যবস্থাপনা জাতীয় স্বার্থেই নিশ্চিত করা হবে বলে দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রত্যাশা। মনে রাখা দরকার, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’।


আরো সংবাদ



premium cement