গরিবদের সাহায্য অব্যাহত রাখুন
- ১৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
করোনাকালে গরিব মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক জরিপে বিপুল দুর্নীতির তথ্য-পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এর আগে সাহায্য কার্যক্রম চলার মধ্যেই তালিকা বাতিল ও নবায়ন করতে হয়েছে বারবার। এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশ হয়েছে।
টিআইবি নগদ প্রণোদনা আর ওএমএসের কার্ড-সংক্রান্ত গরিব মানুষদের সহায়তা ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৩৫টি জেলার এক হাজার ৫০ জন নগদ উপকারভোগী এবং ৩২ জেলার ৯৬০ জন ওএমএস কার্ডধারীর সাক্ষাৎকার নেয়। করোনাকালে ১৬ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ওই জরিপে সাক্ষাৎদাতাদের ১২ শতাংশ বলেছেন, নগদ সহায়তার তালিকায় নাম উঠাতে তাদের তদবির, অনুরোধ, ঘুষ ও দলীয় আনুগত্যের প্রমাণ দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশকে আড়াই হাজার টাকা পেতে ২২০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। নগদ প্রাপ্ত টাকার প্রায় ৯ শতাংশ তাদের নগদেই দিতে হয়েছে। এর আগে আরো যেসব দুর্নীতি হয়েছে তা যোগ করলে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের এ জন্য ব্যয় করতে হয়েছে। ওসব কাজের মধ্যে ছিল প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশ জোগাড় করতে হয়েছে ৩৬ শতাংশকে এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রমাণ দিতে হয়েছে ১০ শতাংশকে। টিআইবির জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ শতাংশ বলেছেন, ‘তাদের নগদ টাকা হাতে পেতে অনিয়মের শিকার হতে হয়েছে।’ মনে রাখতে হবে, তালিকায় স্থান পাওয়া একটা বিশাল অংশ বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুগত। তারা আদৌ হয়তো গরিব মানুষের তালিকায় পড়েন না। এ ধরনের লোকেরা অবৈধ সুবিধা পাওয়ার পর সাক্ষাৎকারে অনিয়ম বা দুর্নীতির ব্যাপারে না জানানোই স্বাভাবিক। অন্য দিকে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৫ শতাংশ জানিয়েছেন, ওএমএসের চাল পেতে তাদের নানা অনিয়মের শিকার হতে হয়েছে। কেউ চাল পরিমাণে কম পেয়েছেন। কেউ চাল কিনতেই পারেননি। এ ছাড়া চাল বিতরণের কাজে রয়েছে স্বজনপ্রীতি।
টিআইবির ওই জরিপ তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সাথে করা নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র নিয়ে অর্থাৎ যারা সরকারি সাহায্য পাওয়ার জন্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে করা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র এখানে প্রকাশ পেয়েছে। এ নিয়ে দুর্নীতি শুরু হয়েছে তারও আগে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্রকে নগদ সহায়তার ঘোষণা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা পৌঁছানোর কথা। তালিকা প্রণয়নের শুরুতে দেখা গেল, সংশ্লিøষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বজনদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা নিজেদের লোকদের তালিকায় ঢুকিয়ে নেন। বহু উপজেলায় দেখা যায়, তালিকায় গরিবদের চেয়ে এ ধরনের সুবিধাভোগী বেশি। একটি মাত্র মোবাইল নম্বরের বিপরীতে বহু সুবিধাভোগীর নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় সরকারকে পুরো তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা করতে হয়েছে। খবরে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৩ জন আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন। অনিয়ম অসঙ্গতির কারণে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৮৯১ জনকে বাদ দিয়েছে সরকার।
দরিদ্রদের জন্য সরকারের সামান্য অর্থ ও চাল নিয়ে দুর্নীতি করতে ও একশ্রেণীর মানুষ কুণ্ঠা করছেন না। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার সামান্যই তৎপর। বরং বরাবরের মতো সরকার এসব দুর্নীতি নিয়ে সাফাই গাইতে বেশি উৎসাহী। করোনার অভিঘাতে পর্যুদস্ত অর্থনীতি এবং জনসাধারণের একটা বিশাল অংশ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছেন। এখনো তাদের অর্থ ও চাল সহায়তা দরকার। দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার আকার হিসাব মতে খুব কম নয়। প্রয়োজন দক্ষ ও অনিয়মমুক্ত ব্যবস্থাপনা, যা করতে সরকার বরাবর ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি, দরিদ্র মানুষের অধিকার রয়েছে সাহায্য পাওয়ার। দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যতটা পারা যায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গরিবদের কাছে নগদ অর্থ ও চাল পৌঁছানো অব্যাহত রাখতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা