মহামারী করোনা সংক্রমণের মধ্যেও পেঁয়াজের দাম ক্রেতার নাগালেই মধ্যেই ছিল; কিন্তু দিন তিনেক আগে ভারত এর রফতানি বন্ধ করায় হঠাৎ করে অস্থির হয়ে উঠছে পেঁয়াজের বাজার। রফতানি বন্ধের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ‘নিজেদের সঙ্কটের’ কথা জানিয়েছে। ভারতে দুই সপ্তাহ আগে দাম বাড়তে থাকে। আর কয়েক দিন আগে থেকেই আমাদের দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে ওই দিন থেকেই চলছে পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড। এক দিনের ব্যবধানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দর এখন শতক ছুঁই ছুঁঁই। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা রেকর্ড ছুঁয়েছিল। কিন্তু এবার এখনই কেন দাম বাড়ল এর কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারছেন না।
দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় এখন পেঁয়াজের চাহিদা কম। আর আমাদের যা পেঁয়াজ মজুদ আছে, তা দিয়ে ভালোভাবেই চলার কথা। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিও হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়। সরকারি তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষণের অভাবে পচে নষ্ট হয়ে যায় ৩০ শতাংশ বা সাড়ে সাত লাখ টন। ইতোমধ্যে ভারত থেকে আট লাখ টনের বেশি আমদানি করা হয়েছে। তবু অযৌক্তিভাবে দাম বাড়ছে। পণ্যটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি চলছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। কয়েক দিন আগে থেকে দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কম হওয়া এবং সে দেশে মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় ভারত পেঁয়াজ রফতানি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়। ওই দিন বিকেল থেকেই ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এক দিকে আমদানিকারকদের কারসাজি, অন্য দিকে দাম বেড়ে যাওয়ার খবর শুনে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে পেঁয়াজ কিনছেন। ফলে দ্রুত দাম বাড়ছে। কারসাজি করে দাম বাড়ানো হলেও এ নিয়ে সরকারের কোনো তৎপরতা নেই বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, আড়তে মূল্য বৃদ্ধি পেলে তাদেরও বেশি দামেই আনতে হয়। এতে তাদের আরো লোকসান। কারণ, কম দামে আনলে যে লাভ, দাম বেশি হলে সে তুলনায় ক্ষতি। তখন পুঁজির অভাবে কম করে পণ্য আনতে হয়। লাভও কম হয়।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে অসহায় করে ফেলেছেন। তবে এটিও সত্য, চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ চাহিদা মেটাতে যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি করে, তার ৯০ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। ভারত রফতানি বন্ধ করায় এখন বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে, যাতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। লক্ষণ দেখে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই শক্ত হাতে ব্যবস্থা না নিলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে।
আমরা মনে করি, দেশের বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে ভারত ছাড়াও বিকল্প দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে হবে। শুধু ভারতের ওপর নির্ভর করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আর কিছু দিন আগে পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তা নাকচ করেছে রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। তবে পেঁয়াজের বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ৫ শতাংশ না হলেও কিছুটা আমদারি শুল্ক ছাড় দেয়া যায় কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে পারে এনবিআর।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা