দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে র্যাগিংয়ের নামে একধরনের অপসংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর চরম নিষ্ঠুর শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত প্রথম বর্ষের ছাত্ররা। একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইরা র্যাগিংয়ের নামে ছোট ভাইদের অপমান, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন করার মাধ্যমে বরণ করেন। এমন রুচিহীন সংস্কৃতির প্রচলন কারা করেছে জানা নেই। তবে এসব অন্যায্য কাজকে কোনোভাবেই ভালো বলার অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে র্যাগিংকেন্দ্রিক নির্যাতনের প্রসঙ্গ সবার মুখে মুখে। বাস্তবে এর বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর সাথে ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় রাজনীতির মিশ্রণে ভয়াবহ এক ককটেল তৈরি হয়েছে। এর ফলে কেবল ভোগান্তি ও লাঞ্ছনাই বেড়েছে নবাগত ছাত্রদের। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যার পর ছাত্ররা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই প্রেক্ষাপটে গত রোববার উচ্চ আদালত র্যাগিংয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত বছরের অক্টোবরে উচ্চ আদালতে এক আইনজীবী র্যাগিংয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’জন বিচারকের একটি বেঞ্চ গত রোববার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে এই কমিটি। শিক্ষার্থীদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় র্যাগিংয়ের কার্যক্রম রোধে নীতিমালা প্রণয়নে বিবাদিদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না উচ্চ আদালতের আদেশে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশে স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিবাদিদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরাই মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। কিন্তু নিজ উদ্যোগে ছাত্রদের কল্যাণে তারা যথাসময়ে এগিয়ে আসতে পারেননি। ফলে ব্যাপারটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
আবরারের হত্যার পর আন্দোলনের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও একই সময় দায়িত্ব ছিল র্যাগিংয়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত ছাত্ররা চরমভাবে র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময় খবর হয়েছে। প্রতিবেশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের সাথে যুক্ত হয় রাজনৈতিক হয়রানি। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি এখন প্রায় একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আন্দোলনের মুখে বুয়েটে র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলো তদন্ত করা হয়। দোষী সাব্যস্ত বিভিন্ন হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রের বিরুদ্ধে শস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় র্যাগিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারে।
র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এখন একটি আইনি ভিত্তি পেতে চলেছে। এখন প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্র অনেক উচ্চ ধারণা নিয়ে প্রবেশ করেন। শুরুতে অপমান, লাঞ্ছনা কিংবা চরম নির্যাতনের শিকার হলে তার ধারণা স¤পূর্ণ বদলে যায়। অনেক সময় ছাত্রটি মানবিক বৈকল্যের শিকার হতে পারেন। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরিবর্তে তিনি রোগগ্রস্ত হয়ে যেতে পারেন। আমরা জানি না এত দিনে কতজন ছাত্র এমন রোগগ্রস্ত হয়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো জরিপ রয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটা সত্য যে, এ ব্যাপারটি যতটা গুরুত্ব পাওয়ার দরকার ছিল সেটি পায়নি। একজন আইনজীবী ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে নিয়ে গেছেন। আদালতের একটি বেঞ্চ প্রাথমিকভাবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করব উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে র্যাগিংয়ের বিষয়টি দেখবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুস্থ-সুন্দর রাখার জন্য সবাই এগিয়ে আসবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা