বিশেষত বছর ১১ ধরে ছাত্রলীগ মূলত আলোচনায় এসেছে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই কিংবা টেন্ডারবাজির কারণে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কাজে খুঁজে পাওয়া না গেলেও বারবার তাদের ন্যায্য আন্দোলনে হামলা চালিয়েছেন সরকারের মদদপুষ্ট সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের মতো আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ এখন যা করছে, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করে ফের সংবাদের শিরোনাম হলো ছাত্রলীগ। বুয়েটের ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক ও বেদনার। এ নৃশংস ঘটনা শুধু আবরারের বাবা-মা, স্বজন কিংবা প্রতিবেশীদের বেদনাবিধুর করেনি; দেশের সবার মনে তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছে; গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর প্রমাণ মেলে সোস্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়ায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগের নাম। গণমাধ্যমের হিসাব মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এ সময়ে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্য সংগঠনের ১৫ জন। ভালো কাজে ছাত্রলীগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে, এমন নজির নিকট অতীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অতীতের গৌরবময় কাজের ধারাবাহিকতা এর বর্তমান নেতৃত্বে ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। কোনো কিছুতেই থামছে না ছাত্রলীগ। চাঁদাবাজি আর নির্মাণকাজ থেকে কমিশন দাবিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। দীর্ঘ সময় মূল দল ক্ষমতায় থাকায় দেশের প্রায় সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একচেটিয়া প্রভাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দল টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভাড়ায় খাটার অভিযোগ উঠছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছেও এ সংগঠনের কিছু নেতা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ক্যাসিনো, জুয়া ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে যুবলীগ, কৃষক লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে গত রোববার রাতে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাড়িতে পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকমতো হচ্ছিল না, তাই ছুটি শেষ হওয়ার আগেই গত রোববার বুয়েটে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ওই রাতেই এমন নৃশংসভাবে জীবন দিতে হলো তাকে। ঘটনাটি এতই পৈশাচিক যে, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম সাধারণত লাশের ছবি ছাপে না। কিন্তু এর ভয়াবহতা ও নৃশংসতার কথা বিবেচনা করে তার লাশের ছবি ছেপেছে অনেক পত্রিকা। অভিযোগ উঠেছে, ফেসবুকে কোনো একটা বিষয়ে মতপ্রকাশের কারণে আবরার নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার। একটি স্ট্যাটাসের জন্য কাউকে এভাবে জীবন দিতে হবে, তা আমাদের কল্পনাতীত। এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে, যাতে দোষীরা কোনোভাবেই পার পেয়ে না যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, ভেবে দেখলে সত্যিই তা হতাশাজনক। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আর কী বাকি থাকল আমাদের? এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসিদের দুর্নীতি ফাঁস হচ্ছে। অন্য দিকে শাসক দলের ছাত্রসংগঠনের সাথে জড়িত যুবকেরা নৃশংসতা করছে। এর ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, এতে করে দেশ-জাতি অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। সরকারদলীয় লোকজনের নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি মিলবে কিভাবে, এর কোনো উত্তর কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু এমন দমবন্ধ ও গুমোট পরিস্থিতি থেকে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। এই দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
আমরা মনে করি, ছাত্রসংগঠনকে ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট রেখে ছাত্রনেতা-কর্মীদের শুদ্ধ করা যাবে না। বুয়েটে যা ঘটেছে তা শুধু মর্মান্তিকই নয়, ন্যক্কারজনকও বটে। সন্ত্রাসী বা অপরাধীর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই। আবরার হত্যায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু গ্রেফতার করলেই চলবে না। অতীতে এমন অনেক ঘটনার বিচার না হওয়ার নজির রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা ছাড়া পেয়ে গেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকার এর দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। তাদের বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাও সরকারের কর্তব্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা