যানবাহন চলাচলব্যবস্থা আগের পর্যায়ে ফিরে এসেছে। কিশোরদের আন্দোলন যে পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা জাগিয়েছিল, সেটি দেখা যাচ্ছে না, বরং আন্দোলনের সাথে জড়িতদের আটক করে বিচারের তোড়জোড় চলছে। আন্দোলনকারীদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাংবাদিকেরা। এর আগে আন্দোলনকারীদের ওপরও একই গোষ্ঠী আক্রমণ চালিয়েছিল। এদের আটক ও বিচার করার কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ‘ট্রাফিক সপ্তাহ’ ঘোষণা করে রাস্তায় এক ধরনের রিহার্সেল চলছে। ট্রাফিক সপ্তাহ আরো তিন দিন বাড়িয়ে ১০ দিন করার ঘোষণা এসেছে। বাস্তবে পুরনো লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি, অদক্ষ চালক এবং অনুমতিহীন গাড়ি ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে।
ট্রাফিক সপ্তাহের সাত দিনে এক লাখ ২৯ হাজার ৮৭১টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। একই সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। ৪৬ হাজার ৭২৩ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিন হাজার ৭৭৭টি যানবাহন আটক করা হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িকে অন্য একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় রাজধানীতেই। তখন ওই গাড়ি চালাচ্ছিল সহকারী। চালক ও গাড়ি আটক হয়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় রয়েছে। সম্ভবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িকে ধাক্কা দেয়ায় এই বিচারপ্রক্রিয়া গতি পেতে দেরি হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, রাজধানীসহ সারা দেশে যানবাহনের পরিস্থিতি আগের মতো। অর্থাৎ, ট্রাফিক সপ্তাহ একটি আইওয়াশ মাত্র।
ঢাকায় পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রাণহানির একটা বড় কারণ হচ্ছে চুক্তিতে গাড়ি চালানো। মালিক দেখেন, তার চুক্তির টাকা পেলেন কি না। অন্য দিকে, চালক ও তার সহকারীদের টার্গেট থাকে, কত বেশি আয় করা যায়। মালিকের চুক্তির টাকা উঠিয়ে এরপর নিজেদের আয় বাড়িয়ে নিতে তারা হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। যত বেশি ট্রিপ দিতে পারেন, ততই তাদের ‘আয়’ বেশি হবে। একই সময় যাত্রী নিয়ে চলে কাড়াকাড়ি। এসব করতে গিয়ে রাস্তায় পথচারীরা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেল কি চাকার নিচে পড়ল, সেদিকে হুঁশ থাকে না চালকদের। গাড়ির ফিটনেস ও চালকের বৈধতা একটি বড় ব্যাপার। আর এগুলো নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে মালিক, চালক, পুলিশ, বিআরটিএসহ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রতিটি পক্ষ নিয়ম অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করলে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ে অরাজকতা থাকার কথা নয়। প্রত্যেকের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখলে হতাশাজনক খবর বেরিয়ে আসবে। মালিক ব্যস্ত তার কাক্সিক্ষত অর্থ ঠিকভাবে আদায় হচ্ছে কি না তা নিয়ে। একইভাবে, চালক ও তার সহকারীরা নিজেদের আয় নিয়ে ব্যস্ত। ট্রাফিক পুলিশের কথা না বলাই ভালো। এবারের আন্দোলনে ব্যাপারটি আরো প্রকট হয়েছে। চালকের বৈধতা, ফিটনেসহীন গাড়ি ধরা, নিয়মবহির্ভূত গাড়ি ধরার পরিবর্তে তারা ব্যস্ত থাকেন ‘বাড়তি কামানো’র বেআইনি ধান্ধায়। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেছে সরকার, যদিও সরকারের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দ্বিচারিতা রয়েছে। এক দিকে দাবি মেনে নিয়েছে, অন্য দিকে আন্দোলনকারী অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। যদি সরকার দাবি মেনে নিয়ে থাকে, তাহলে বিআরটিএ, মালিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ কেন করা হচ্ছে না? এখনো কেন ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারছে?
বালক ও কিশোরদের আন্দোলন একটি সংস্কারের সূচনা করেছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তা করার প্রতিশ্রুতিও সরকার দিয়েছে। এখন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের কার্যক্রম দেখতে সবাই আগ্রহী। তড়িঘড়ি ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করে সরকার এ দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় আর না নামা এবং অবৈধ চালকদের গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখাই প্রধান কাজ। ট্রাফিক পুলিশ এসব দেখভালের জন্য রাস্তায় সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন, এমনটি সবার প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা