৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুন্দরবন ঘেঁষে আশ্রয়ণ প্রকল্প

আদালতের নির্দেশ কেন মানা হয়নি?

-

সুন্দরবনের জমি দখল করে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এ প্রকল্পের কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন। সুন্দরবনকে ঘিরে এভাবে দখলের প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্প হবে জনবসতিপূর্ণ। বন বিভাগ এ প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও প্রশাসন একে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি সর্বোচ্চ আদালত প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি উপেক্ষা করে বাগেরহাটের সোনাতলা এলাকায় বনের পাঁচ একর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে মাটি ভরাটের ছবিসহ বিস্তারিত তুলে ধরে জানানো হয়েছে, আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে শতাধিক পরিবারের আশ্রয় মিলবে বলে প্রচার করে স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধভাবে অর্থ আদায়ে লিপ্ত। জানা যায়, শরণখোলা উপজেলায় সুন্দরবন-সংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা মৌজার পাঁচ একর জমিতে মার্চ মাসে মাটি ফেলার কাজটি শুরু হয়। স্থানটি সংরক্ষিত বনের মাত্র ৫০০ ফুট দূরে। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মোতাবেক, সুন্দরবনের চার পাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা ‘পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন’ হিসেবে স্বীকৃত। এতে বলা হয়েছে, এই এলাকায় ভূমি বা পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট বা পরিবর্তিত হবেÑ এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তদুপরি, ২০১৩ সালে একই উপজেলার দাসের ভারানি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এর একই ধরনের কাজ পরিবেশগত কারণে বাতিল হয়েছে। সুন্দরবনের সম্পদ তথা জীববৈচিত্র্যের স্বার্থে ২০০৫ সালে সোনাতলা আদর্শ গ্রাম প্রকল্পও স্থগিত রাখা হয়েছিল। এর আগের বছর বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ভোলা নদীর চরে ‘আদর্শ গ্রাম’ প্রকল্পের উদ্যোগ নিলে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে রিট করে এর বিরুদ্ধে। তখন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। একই চরে আবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়ার বিরোধিতা করে বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তদুপরি, একটি মানবাধিকার সংগঠন সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মার্চ মাসে হাইকোর্টে রিট করেছে। আদালত সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখা এবং এই অরণ্য ঘেঁষে যে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে, সেগুলো উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেনি আজো। এমনিতেই এলাকাটিতে দস্যুতা, লুণ্ঠন, পাচার প্রভৃতি চলে আসছে প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে।
শরণখোলার ইউএনও বলেছেন, ‘নদী ভরাট হওয়া সম্পত্তির মালিকানা জেলা প্রশাসনের এবং বনের ওপর বসতির প্রভাব পড়বে না।’ তিনি আদালতের নির্দেশ না পাওয়ার কথা জানান। অপর দিকে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোলা নদীর চর সুন্দরবনেরই অংশ বিধায় এখানে বন্দোবস্ত দেয়ার সুযোগ নেই। বন ঘেঁষে বসতি গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা চললে ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ হুমকির মুখে পড়বে। তাই জীববৈচিত্র্যসহ বনজ সম্পদ রক্ষার্থে প্রকল্পটি বাতিল করা জরুরি।’ আলোচ্য আশ্রয়ণ প্রকল্পটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণামাফিক গৃহীত। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পরিচালক বলেছেন, ‘নির্মাণাধীন প্রকল্পের সম্পত্তি সুন্দরবনের কি না তা জানা নেই। এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। ফাইলপত্র না দেখে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’
প্রশ্ন হলোÑ খোদ সরকারপ্রধানের দফতরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক যদি নিশ্চিত না হন যে, বিতর্কিত প্রকল্পের স্থানটি সুন্দরবনের না অন্য কারো সম্পত্তি, তাহলে কিভাবে এর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন? অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশ মান্য করে সুন্দরবন রক্ষা করা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। সবার প্রত্যাশা, অবিলম্বে প্রকল্পের কাজ স্থগিত রেখে জীববৈচিত্র্যসহ অরণ্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement