০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ছাত্রলীগের হামলা

কর্তৃপক্ষ নির্বিকার কেন?

-

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর উপর্যুপরি হামলা করে চলেছে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন। তাদের ওপর অন্যায় হামলার পর যারা সহমর্মী হয়েছেন, তাদের ওপরও নির্দয় হামলা, লাঞ্ছনা ও অপমান নেমে এসেছে। প্রথমে প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে গিয়ে পুলিশের আক্রমণের শিকার হয়েছেন অভিভাবকেরা। তাদের ওপর অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে পুলিশভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষকেরা জড়ো হলে তাদেরও অপমান ও লাঞ্ছিত করা হয়। ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এর মধ্যে এক ছাত্রী ক্যাম্পাসে চরমভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার একটি ঘটনা তার ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কি আদৌ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যÑ এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কারণ, এখানে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক কেউ নিরাপদ থাকতে পারছেন না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রোববার আবার হামলা চালাল ছাত্রলীগ। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ব্যানারে ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করে। ওই কর্মসূচি থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অশালীন ভাষায় কটূক্তি করা হয়। শিক্ষকদের পাশাপাশি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক নেতা রাশেদের দরিদ্র মা-ও ছিলেন। তিনিও কটূক্তির শিকার হন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা ‘পাকিস্তানের রাজাকার শিক্ষকদের বহিষ্কার করতে হবে’, ‘শিক্ষকেরা জামায়াত-শিবিরের দোসর’, ‘পাকিস্তানি রাজাকার পাকিস্তান চলে যা’Ñ এ ধরনের আরো আপত্তিকর অশ্রাব্য স্লোগান দিতে থাকে। তারা আন্দোলনকারীদের মাইক বন্ধ করে দেয়ার জন্য হামলে পড়ে। এ অবস্থায় আন্দোলনকারী শিক্ষক-ছাত্ররা শহীদ মিনার এলাকা ছাড়তে চান। মিছিল নিয়ে তারা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের দিকে যেতে চান। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ তাদের ওপর পেছন থেকে হামলা চালায়। এ সময় গায়ে ধাক্কা দিয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয় শিক্ষকদের। তাদের হামলায় কয়েকজন শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। আক্রমণ থেকে বাঁচতে ছাত্রীরা আশপাশের আবাসিক এলাকায় আশ্রয় নেন। বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাওয়া শিক্ষকেরা প্রশাসনিক নেতৃত্বে আছেন বলে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ নিরাপদ নই।’ স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেনÑ ছাত্রলীগের মাস্তানেরা তাকে মোটরসাইকেলে চেপে ফলো করে ভয় দেখানোর জন্য। আরো দু’জন পদব্রজে তাকে অনুসরণ করে। অন্য দিকে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে তার সহপাঠীসহ নির্দয়-নির্মমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে। তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল দুষ্কৃতকারী ছাত্র বলে অনুমান করা হয়। মেয়েটি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সেই করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র ও শিক্ষকদের যখন এই করুণ দশা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন নির্বিকার। তাদের যেন কোনো ধরনের দায়িত্ব-কর্তব্য নেই। সুপ্রিম কোর্টের ১৩ জন আইনজীবী এ ঘটনার পর ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত পরশু আইনি নোটিশ পাঠিয়ে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় দু’টির ভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারদের কাছে দু’টি নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, যদি তারা হামলার ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে ব্যর্থ হন। আমরাও মনে করি, কর্তৃপক্ষ অন্যায়কারী ছাত্রলীগ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement