করোনার প্রভাবে বেসরকারি খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঋণের জন্য প্রকৃত উদ্যোক্তারা ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হয়ে ফিরছেন। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না করলেও সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে অতি উৎসাহী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ ব্যাংক এ মুহূর্তে ঋণ দেয়া ঝুঁকি মনে করছে। এ কারণে নিশ্চিত মুনাফা লাভের জন্য সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের গতকাল ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ মাসের ২৩ দিনে ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২১ জুলাই ১০ বছর মেয়াদি বিল বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের জোগান দেয়ার জন্য নিলামের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নিলামে ৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা নিয়ে হাজির হয় ব্যাংকগুলো। কিন্তু ওইদিন ১৩৬টি দরপত্রের বিপরীতে ২৭টি দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এর বিপরীতে এক হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়। এর আগের অকশান ছিল ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের। ১৪ জুলাই ওই বন্ডের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই দিনেও সরকারের ঋণ দেয়ার জন্য ৬ হাজার ৫১২ কোটি টাকা নিয়ে হাজির হয় ব্যাংকগুলো। ১২৮টি দরপত্রের বিপরীতে ওইদিন ৫৯টি দরপত্র গ্রহণ করে আড়াই হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়।
বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে সরকারি ঋণে বেশি উৎসাহী হওয়ার কারণ কী, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক পূবালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আব্দুল হালিম চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, প্রথমত, বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়া হচ্ছে না কথাটি ঠিক নয়। তবে ব্যাংক চায় যাকে ঋণ দেয়া হবে দিন শেষে তার কাছ থেকে সুদে আসলে ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা। এ নিশ্চয়তা যেসব উদ্যোক্তার কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে ঋণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক যদি কোনো প্রকল্প পর্যালোচনা করে দিন শেষে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না পায় তাহলে সেখানে ব্যাংক বিনিয়োগ করছে না। তিনি জানান, বর্তমানে করোনাকালে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ঋণ নিতে চাচ্ছেন না। কারণ তাতে তো দিন শেষে ব্যবসা-পরিচালনা করে সুদে আসলে ব্যাংকের অর্থ ফেরত দিতে হবে। কিন্তু করোনার এই প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ নিতে চাচ্ছেন না। এরপরেও ব্যাংক প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে ঋণ দেয়ার জন্য সবসময়ই প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, এ কারণে বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতেই টাকা রয়েছে। অর্থ অলস বসিয়ে রাখলে তহবিল পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। আমানতকারীদের অর্থ দিন শেষে সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে। এ কারণে ব্যাংকগুলো সরকারি বিল বন্ডেই বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগ চাহিদা বাড়লে আবার তা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা হবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অনেক উদ্যোক্তাই তাদের কাছে অভিযোগ করছে ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না। সরকার গত এপ্রিলে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। দীর্ঘ প্রায় চার মাস অতিক্রান্ত হলেও ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে মাত্র সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন ঝুঁকিহীন খাতে অর্থাৎ সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি উৎসাহী। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগমুখী করতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ২১ জুলাই ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৭৭ বেসিক পয়েন্ট কমিয়ে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ৫ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহারও ৭ দশমিক ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ মুনাফা পাচ্ছে ৯ শতাংশ। বিপরীতে সরকারি বন্ডের সুদহার ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। এ কারণে সরকারি বিল ও বন্ডের সুদহার কমিয়ে আনা হচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়ানো পর্যন্ত এ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা