২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কালো টাকার বিশেষ সুযোগ বাজেটে

অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : বাসস

কালো টাকার মালিকদের জন্য সুসংবাদ! তারা এখন থেকে কালো টাকা কোনো ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর এই সুযোগটি করে দিয়েছে এবারের বাজেট। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী অ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগের অর্থের ওপর ১০ ভাগ হারে কর প্রদান করা হলে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। এ সংক্রান্ত একটি বিধান আয়কর অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।’ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এই দুই জায়গায় ১ কোটি টাকা কর দিয়ে যে কেউ তাদের ১০ কোটি কালো টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করতে পারবেন। টাকার উৎস সম্পর্কে আয়কর অফিস কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে কি না সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কিছু বলেননি। 

গতকাল বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট বক্তৃতা। বাজেট বক্তৃতার নামকরণ করা হয়েছেÑ সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ- সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের। ’ এর আগে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক দিন জ্বরে ভোগাজনিত অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার হাঁপিয়ে উঠেন। এ সময় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী কয়েকবার অর্থমন্ত্রীকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বাজেট বক্তৃতা পড়ে শেষ করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পাঠ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বলে জানা গেছে। 
অর্থমন্ত্রীর চোখে দেশে কোনো বৈষম্য নেই!

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতার ৯৮ পৃষ্ঠায় জোর দিয়ে বলেছেন, ‘অর্থনীতির সকল এলাকায় আজ ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান। পাশাপাশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। দেশের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে আজ নেই কোনো মৌলিক বৈষম্য। নেই কোনো ব্যবধান।’ কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এই বাক্যের সাথে বাস্তবতার তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অর্থনীতির সকল এলাকায় আজ ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান।’ কিন্তু গেল মঙ্গলবারই বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেছেন, বিগত ১০ বছরে এবারই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে । সামষ্টিক অর্থনীতিতে চিড় ধরেছে। ব্যাংকিং খাতে এ যাবত নেয়া বর্তমান সরকারের সব সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর হয়েছে। লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে, কমছে রিজার্ভ। কৃষকদের সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে আজ নেই কোনো মৌলিক বৈষম্য। নেই কোনো ব্যবধান।’ গত মাসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক উন্নয়ন ভাবনা : বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অঞ্চলভিত্তিক বরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, পাবনাÑ এ পাঁচ জেলায় এডিপির প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ দেয়া হয়। এ পাঁচ জেলায় বরাদ্দের পরিমাণ ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া পাঁচ জেলা হলো নীলফামারি, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, মাগুরা এবং জয়পুরহাট। এ পাঁচ জেলায় এডিপি বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।
শুধু কি তাই, পাঁচ বছর পরপর বিবিএস খানা আয়-ব্যয়ের জরিপ করে। সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৮৮-৮৯ সালে আমাদের বৈষম্য পরিমাপের জিনি সূচক ছিল দশমিক ৩৭। এখন এটি হয়ে গেছে দশমিক ৪৮ শতাংশ। কোনো দেশের আয়বৈষম্য সূচক দশমিক ৫০ হলে, তখন ওই দেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বৈষম্য একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে ধরা হয়। বাংলাদেশ আয়বৈষম্যের বিপজ্জনক পর্যায়ের প্রান্তসীমায় অবস্থান করছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। 
অর্থমন্ত্রীর দাবি, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না?

বাজেট বক্তৃতার ১২ পৃষ্ঠায় অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘আমরা ২০১৯-২০ এর বাজেটটিতে দেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে তেমন কোনো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করি নাই। ’ এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। বাজেটে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যার ফলে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেমন কমবে, ঠিক তেমনি বাড়বে। যেমন বাচ্চারা হয়তো আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে। কিন্তু এই বাজেটের ফলে আইসক্রিম কিনতে এখন থেকে বাড়তি পয়সা গুনতে হবে। কারণ বাজেটে আইসক্রিমের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। 
শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোন ছাড়া এখন দিন কাটানো কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। কত প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথাই না মোবাইল ফোনে বলা হয়। কিন্তু আগামীতে কথা বলায় সাবধান থাকতে হবে। কারণ কথা বলুন বা নেট দেখুন- আগামীতে কিন্তু এ খাতে বেশি পয়সা খরচ করতে হবে। কারণ বাজেটে মোবাইল ফোনের সিম/রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন এই শুল্ক ছিল ৫ শতাংশ। বাজেটে তা বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। 
এ ছাড়া মোবাইল ফোন কিনতে এখন থেকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। কারণ আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের আমদানি শুল্ক আড়াই গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ছোট শিশুদের গুঁড়ো দুধের দামও আগামীতে বেড়ে যাবে। কারণ এর ওপরও আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। 

বাজেটের আকার বিশ্লেষণ : এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি। 
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। এই ঘাটতি পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে। বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।

অর্থমন্ত্রীর আশা, বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া যাবে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। 
২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান : আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্বের অবসান ঘটানো হবে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এক দিকে শ্রমবাজারে বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তির আগমন, অন্য দিকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমে যাওয়ার বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছে এবং এর সমাধানে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্বের অবসান ঘটানো হবে।’

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল মেয়াদি সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক কোটি ৪০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলওর হিসেবে, এই সময়ে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত নভেম্বরে তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৭ শতাংশ জানিয়ে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হার এশিয়া ও প্রশাস্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে শুধু পাকিস্তান।
১০% প্রতিবন্ধী নিয়োগ দিলে ৫% কর মওকুফ : কোনো প্রতিষ্ঠানে তার মোট কর্মীর মধ্যে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় করের পাঁচ শতাংশ মওকুফ করবে সরকার। বাজেট বক্তৃতায় কামাল বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার জন্য আমাদের সরকার অনেক কাজ করছে। আয়করেও আমরা এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। একটি হিসেবে দেখা গেছে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ কোনো না কোনো প্রতিবন্ধী। এ বিবেচনায় কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী নিয়োগ দিলে সে প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় করের ৫ শতাংশ কর রেয়াত প্রদানের প্রস্তাব করছি।’

বিশেষ সুবিধা না দিলে অতিরিক্ত ৫% কর : অন্য দিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) প্রতিবন্ধীদের যাতায়াত ও সেবা গ্রহণে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা না করলে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা দিলেও ২০২০-২১ কর বছর থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
বাজেটে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ ৬১ হাজার কোটি টাকা : যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে আগামী অর্থবছরে মোট ৬১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী । বিদায়ী অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা।
সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার ও নতুন সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজগুলোর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ আরো বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলছে এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৭ শতাংশের কথা জানানো হয়।

কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে ভর্তুকি পাবেন কৃষক : কৃষি খাতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফসল কর্তন ও তার পরবর্তী কার্যক্রমে যান্ত্রিকীকরণ উৎসাহিত করা হবে এবং এ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষককে ভর্তুকি প্রদান করা হবে।’ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাসায়নিক সারে প্রণোদনায় ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার তথ্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান প্রধান রাসায়নিক সারের আমদানি মূল্য কোনো কোনো সময় বৃদ্ধি পেলেও কৃষকদের স্বার্থে বর্তমান সরকার দেশীয় বাজারে সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রেখেছে যা পরোক্ষভাবে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে।
চালু হবে শস্যবীমা : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির পর আর্থিক ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শস্যবীমা চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতায় কামাল বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। এ থেকে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি হতে কৃষকদের রক্ষার্থে শস্যবীমা একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হবে।

‘এ ছাড়া বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট সম্পদের বীমা দেশীয় বীমা কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক কোম্পানির সাথে যৌথ বীমা সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হবে। লস অব প্রোফিটের জন্য বীমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। কারখানা শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনাজনিত বীমা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’
বাজেট বক্তৃতার বিভিন্ন খাতের কিছু ইতিবাচক পরিসংখ্যান : বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছেÑ এক বছরের কম বয়সী শিশুদের শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৪৫ থেকে ২৪ জনে নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ১ দশমিক ৭২ জনে নেমে নেমে এসেছে। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ২০০৬ সালের ৪৬টি থেকে বেড়ে ১১১টি হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ২০০৬ সালের ৬৫ বছর থেকে বর্তমানে ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে। ঝরে পড়ার হার ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮০টি থেকে ১৪৮টি হয়েছে। দেশে হাইটেক পার্কের সংখ্যা ২৮টি। 
২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় প্রায় ৫৪৩ ডলার থেকে সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে এক হাজার ৯০৯ ডলার হয়েছে। জাপানের স¤্রাট মেইজির মতো প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার ঘোষণা। সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক ঝুঁকি হ্রাসে টাঙ্গাইলের কালিহাতি, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’ পাইলট আকারে চলমান রয়েছে। 

ক্যানসার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সাভারে তিনটি আধুনিক ল্যাবরেটরিজ নিউক্লিয়ার মেডিক্যাল ফিজিকস ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব। যুবকদের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগ (স্টার্ট আপ) সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। পরিবহন খাতে এক লাখ দক্ষ পেশাদার গাড়ি চালক তৈরির বিশেষ কার্যক্রম চলমান
চার হাজার ৮০৮টি পোশাক কারখানার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন কারখানা প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৭০৬টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় মহাসড়কে ১২১টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement