৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আল্লাহর তিনটি প্রশ্ন

-

দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবচেয়ে বড় এবং সত্যিকার কল্যাণকামী আমাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য। প্রমাণ মহান আল্লাহর শিখানো দোয়া। যিনি দোয়া কবুল করবেন তিনি দোয়া শিখিয়ে বা লিখিয়ে দিয়েছেন। যথা- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! দয়া করে আমাদেরকে দান করুন কল্যাণসমূহ পার্থিব জীবনে এবং দান করুন কল্যাণসমূহ পারলৌকিক জীবনে এবং আমাদেরকে রক্ষা করুন ভয়াবহ আগুনের শাস্তি থেকে’ সূরা বাকারা, ২০১।

মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মানবজাতি, ফেরেশতা, জিন ইত্যাদিসহ সব প্রাণিকুলের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পবিত্র কুরআনে আমাদেরকে প্রশ্নবোধক বাক্য দ্বারা আমাদের বোধোদয়ের জন্য জ্ঞাত করেছেন। যথা- আল্লাহর একটি প্রশ্ন ‘আ-আনতুম আলামু আমিল্লাহ।’ অর্থ : ‘হে গোলামগণ! তোমরা কি বেশি জ্ঞানী, না কি আমি (আল্লাহ) বেশি জ্ঞানী? এমন কোনো মুমিন মুসলিম নেই আমার বিশ্বাস যিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন যে ‘হে আল্লাহ আমি/আমরা আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী এবং আপনি আমার/আমাদের চেয়ে কম জ্ঞানী।’ কিন্তু বাস্তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই তাদের চিন্তাচেতনা, কর্মকাণ্ড ইত্যাদিতে তাদেরকে পরিচিত করে আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী হিসেবে এবং তা প্রমাণ করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ বিধান দিয়েছেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চুরি করলে হাত কেটে দেয়ার জন্য। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আল্লাহ হলেন- মহা পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী। সূরা আল-মায়েদা, আয়াত : ৩৮।

আলোচ্য আয়াত দ্বারা চুরির শাস্তি হাত কাটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কিন্তু আমরা অধিকাংশ মানুষই চুরির শাস্তি হাত কাটার পরিবর্তে জেল বা জরিমানার বিধান রেখেছি, যা প্রমাণ করে এ বিধান দাতাগণ ‘আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী’। (নাউযুবিল্লাহ) তেমনি করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ‘সুদ’ হারাম করেছেন। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘আল্লাহ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ হালাল করেছেন এবং ‘সুদ’ হারাম করেছেন।’ সূরা বাকারা, ২৭৫। অথচ বিশ্বে সুদের ব্যাপকতা সর্র্বজনবিদিত। যা প্রমাণ করে এই ‘সুদ প্রথা’ প্রবর্তনকারীগণ আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী। (নাউজুবিল্লাহ) তেমনি করে মদ্যপান করা, মদ কেনাবেচা ইত্যাদি আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু ‘মদ কেনাবেচা’ এবং ‘মদ্যপান করা’ বিশ্ব¦ব্যাপী বিস্তৃত যা সর্বজনবিদিত। প্রমাণস্বরূপ আরো অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবচেয়ে বড় এবং সত্যিকার কল্যাণকামী আমাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য। প্রমাণ মহান আল্লাহর শিখানো দোয়া। যিনি দোয়া কবুল করবেন তিনি দোয়া শিখিয়ে বা লিখিয়ে দিয়েছেন। যথা- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! দয়া করে আমাদেরকে দান করুন কল্যাণসমূহ পার্থিব জীবনে এবং দান করুন কল্যাণসমূহ পারলৌকিক জীবনে এবং আমাদেরকে রক্ষা করুন ভয়াবহ আগুনের শাস্তি থেকে’ সূরা বাকারা, ২০১। অসীম উদারতা কাকে বলে! এমনকি অগ্নিদগ্ধ শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার দোয়া তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে যা মানবজাতির জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ। শতভাগ সত্য কথা আল্লাহর সকল গুণাবলি অসীম যথা- জ্ঞান, ক্ষমা, দয়া, শক্তি, সম্মান দান, অসম্মান করা ইত্যাদি।

আল্লাহর অন্য আরেকটি প্রশ্ন ‘আফা হাসিবতুম আন্নামা খালাকনাকুম আবাছাও ওয়া আন্নাকুম ইলাইনা লা-তুরযাউন।’ অর্থ: ‘হে গোলামগণ! তোমরা কি মনে করেছ আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং নিশ্চয়ই তোমরা কি আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না?’ সূরা মুমিনুন, আয়াত : ১১৫। আমার বিশ্বাস কোন মুমিন মুসলিম আল্লাহর এ প্রশ্নের জবাবে কখনই এমন উত্তর দিবেন না যে ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে অকারণে বা অনর্থক সৃষ্টি করেছ’ এবং এমন জবাবও দিবেন না, ‘আমরা তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করব না’। বরং নিশ্চয়ই জবাব দিবেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ, তিনি আমাদেরকে উদ্দেশ্যহীনভাবে বা অনর্থক সৃষ্টি করেননি বরং আমাদেরকে সৃষ্টির পশ্চাতে তার (আল্লাহর) অকল্পনীয় মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘ তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে আবির্ভূত করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে মানুষদেরকে (যথাসাধ্য) বিরত রাখো ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চলো। সূরা আলে-ইমরান, ১১০। আল্লাহর এ বাণীটি বিশদ আলোচনাযোগ্য কিন্তু সঙ্গতকারণে সংক্ষেপে এটুকুই বলছি যে আল্লাহর এ উদ্দেশ্য আমরা মানুষেরা যদি সাধন করি ব্যাপক হারে সম্ভব হলে শতভাগ তাহলে বিশ্বশান্তি আটলান্টিক মহাসাগরের খরস্রোতের অবিরাম বিশ্বব্যাপী প্রবাহিত হতে থাকবে অশান্তির নাম গন্ধও থাকবে না। তা ছাড়া আল্লাহর অন্য উদ্দেশ্য মানবসৃষ্টির পেছনে তারা (মানবজাতি) আল্লাহর দাসত্ব করা বা আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা পালনের জন্য। সূত্র : সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ


আরো সংবাদ



premium cement