০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মা : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ

-

মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষের বিকল্প কল্পনা করা সম্ভব হলেও মা-বাবার বিকল্প নেই। মা-বাবা উভয়ই সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তবে মায়ের ব্যাপারটি কিছুটা ব্যতিক্রম। সন্তানের জন্যে উভয়ই কষ্ট স্বীকার করেন। কিন্তু মায়ের কষ্ট কিছুটা ব্যতিক্রম। কত রাত মাকে অনিদ্রায় কাটাতে হয়। সন্তানের আরাম-আয়েশের জন্য। এ ক্ষেত্রে বাবার কষ্ট একটু কম। সন্তান গর্ভকালীন দীর্ঘ সময় যে কষ্ট দুর্ভোগ ভোগ তা মাকেই স্বীকার করতে হয়। তখনকার সময় মাকেই একা দু’জনের খাবার খেতে হয়। নিজের জন্য আবার সন্তানের জন্য। মায়ের ক্যালসিয়াম-ভিটামিন ক্ষয় রূপসৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য মন-মানসিকতার অবনতি হয় সন্তানের জন্য। নাড়ির মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাঁর কুদরতি সাহায্যে সন্তানকে খাবারের জোগান দেন। সন্তানের রক্ত-মাংস, হাড়, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সবই আল্লাহ পাক মায়ের খাবার ও শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দান করেন। সন্তান নেয়ার যন্ত্রণা, প্রসববেদনা ও প্রসব যন্ত্রণা মাকেই ভোগ করতে হয়। এমনকি মায়ের পেট কেটে অঙ্গহানি করে সন্তানের মুখ দেখার অভিলাষ ও বাসনা ত্যাগ-যাতনা একমাত্র মা-ই বরদাশত করতে সক্ষম। পৃথিবীতে যা নজিরবিহীন। এত কিছুর পরও রক্তাক্ত মা সন্তানের মুখ দেখে যেন বিশ^ শান্তি ও আনন্দ খুঁজে পান। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই; এর চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ যার এক টুকরো সান্ত¡নার বাণী আর হাত বুলানো জগতসংসারের সব দুঃখকষ্ট মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় তিনিই হলেন মা। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম সা:-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার? নবী করিম সা: বলেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি আবার জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি আবারো জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি আবারো জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার বাবার’। (বুখারি ও মুসলিম) নারী জীবনের একমাত্র পূর্ণতা ও সফলতাই রয়েছে নারীর মাতৃত্বে। মানব বংশবিস্তার নারীর মাতৃত্বেরই সুফল। যে নারী মা হতে বঞ্চিত সে যেন পৃথিবীর সব কিছু থেকেই বঞ্চিত। এ জন্যই হজরত আয়েশা রা: নবী সা:-এর সব স্ত্রীর মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও নিঃসন্তান হওয়ায় আম্মাজান হজরত খাদিজা রা:-এর সমতুল্য হতে পারেননি। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা: কর্তৃক মাতৃত্ব তথা মা হওয়ার সৌভাগ্য একমাত্র খাদিজা রা:-এর নসিব হয়েছিল। জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হজরত ফাতেমা রা: হজরত খাদিজা রা:-এরই মেয়ের নাম এবং জান্নাতের যুবকদের দুই সর্দার হজরত হাসান ও হুসাইন রা: হজরত ফাতিমা রা:-এর দুই ছেলের নাম। নারীর মাতৃত্বের বিকাশ না ঘটলে এমন আরো হাজারো লাখো কোটি মহামনীষীর পৃথিবীতে আগমন ঘটত না। একমাত্র মাতৃত্ব দ্বারাই একজন নারীর নারিত্ব ও স্ত্রীত্বে পূর্ণতা আসে। নারীর এই মাতৃত্ব রক্ষার প্রকৃত ব্যবস্থাপনা হলো নারীর উদর, যা সর্বজন স্বীকৃত মানুষ তৈরির ‘পবিত্র এক খোদায়ি কারখানা’ সে কারখানার পূর্ণ সংরক্ষণ করতে হবে। মাতৃত্বের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ আবশ্যক। আর সেটি হলো- একমাত্র ‘ইসলামের পবিত্র বিধান পর্দা।’ পর্দার মাধ্যমেই একজন নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে। পর্দার বিধান পালনে অভ্যস্ত নারী নিজের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকিও কমায়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে। মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪২১)
লেখক : চিকিৎসক, কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement