২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইয়াওমুল জুমা

-

সব প্রশংসা সেই রবের জন্য যিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান আবার দিনকে প্রবেশ করান রাতের মধ্যে। দিন আর রাতের এই পালাবদলে আমরা অতিবাহিত করি একেকটি দিবস। এরূপ প্রতি ছয়টি দিবস অতিবাহিত হয়ে সপ্তম দিবসে আগমন করে ইয়াওমুল জুমা তথা জুমার দিন। আর এই দিন অন্য দিনের তুলনায় অধিক শ্রেষ্ঠ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যার উপর সূর্য উদয় হয়েছে তার মধ্যে উত্তম দিন হলো জুমার দিন’ (মুসলিম-২০১৪)।
এই দিনে মুসলিমরা সমবেত হয় তাই এই দিনকে ইয়াওমুল জুমা বলা হয়। আগে ইহুদিরা ইয়াওমুস সাবত তথা শনিবার, খ্রিষ্টানরা রোববারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে নেয়। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে শুক্রবার নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করেছেন। জাহেলিয়াতের যুগে এই দিনকে ইয়াওমে আরুরা বলা হতো, পরবর্তীতে আরবে কাব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ইয়াওমুল জুমা রাখেন (তাফসিরে মারেফুল কুরআন)।
ইয়াওমুল জুমা তথা জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। জুমার দিনে মুসলিমরা সমবেত হয়ে জুমার সালাত আদায় করেন, এছাড়া এই দিনে এমন কিছু সময় রয়েছে যে সময়গুলোতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের দোয়া কবুল করে থাকেন। তাই আসুন জেনে নেই জুমার দিনের বিশেষ কিছু তাৎপর্য-
১. জুমার সালাত আদায় : আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! যখন জুমার দিন আজান হয়ে যায় তোমরা বেচাকেনা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর স্মরণে (সালাতে) ধাবিত হও, এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে’ (সূরা জুমা-৯)।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ যখন জুমার সালাতের সময় হয়ে যাবে তখন তোমরা তোমাদের বেচাকেনা তথা দুনিয়াবি সব ব্যস্ততা বন্ধ রেখে আল্লাহর জিকির তথা জুমার সালাতে শরিক হও। আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ার ব্যস্ততা আমাদেরকে অধিক ফজিলতপূর্ণ জুমার নামাজ থেকে বিরত রাখছে। জুমার সালাত আদায়ে আমাদের জন্য কী উত্তম রাখা হয়েছে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। চলুন জেনে নেই- হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান (মধ্যবর্তী দ্বীনের সগিরা গুনাহসমূহ) মাফ করে দেয়, যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম-৫১৪)।
হজরত আউস ইবনে আউস আস সাকাফি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা: থেকে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে ও করাবে অতঃপর সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে কোনো কিছুতে সওয়ার হওয়া ব্যতীত হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের খুব কাছে বসে খুতবা শুনবে এবং কোনোরকম অনর্থক কাজ করবে না তার প্রতি কদমে এক বছর নফল রোজা ও নামাজ আদায়ের সওয়াব দান করা হয়’ (বুখারি-৯১০)।
২. জুমার সালাত পরিত্যাগের শাস্তি : হজরত আবদুুল্লাহ ও আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- হুজুুর সা: মিম্বরে দাঁড়িয়ে ইরশাদ করেছেন- ‘সাবধান! লোকেরা যেন জুমার সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে। অন্যথায় আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (মুসলিম-২০৩৯)।
রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন’ (আবু দাউদ-১০৫২)।
৩. পবিত্রতা অর্জন করা : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজের জন্য আসে সে যেন গোসল করে নেয়’ (বুখারি-৯১৯)।
রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র আরো বলেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল জরুরি। আর সে মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে’ (বুখারি-৮৮০)।
৪. বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা : হুজুর সা: বলেন, ‘তোমরা জুমার দিনে প্রচুর পরিমাণে দরূদ পাঠ করো। নিশ্চয় তোমাদের দরূদ অবশ্যই আমার কাছে পেশ করা হয়’ (মিশকাত-১৩৬১)।
৫. বেশি বেশি দোয়া করা : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: একবার জুমার খুতবায় বলেন, এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যেকোনো মুসলমান সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করেন আল্লাহ তাই দেন। তিনি হাতের ইশারা দিয়ে বোঝালেন যে, সেই মুহূর্তটি অতি সংক্ষিপ্ত’ (বুখারি-৬৪০০)।
রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘দোয়া কবুলের সময় হলো ইমাম মিম্বরে বসার পর থেকে নিয়ে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়’ (মুসলিম-২০১২)।


আরো সংবাদ



premium cement