ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ে প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে মেলা। দেওয়ান শাগের শাহে্র বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। এবারো কাটাগড়ে বসছে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর বাংলা চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে তিন দিন ব্যাপী মেলা শুরু হলেও রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী। ফার্নিচারসহ বিভিন্ন মিষ্টি-সামগ্রীর মেলা চলে এক মাস ধরে। ১২ চৈত্র মূল মেলার দিন দেওয়ান শাগের শাহ রহ.) এর ওরস। এ কারণে ওই দিন লোক সমাগম বেশি হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো ভক্ত, ফকির-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে।
দেখা যায়, মাজারের পাশে প্রায় সহস্র একর এলাকাজুড়ে মেলা বসেছে। পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, যাদু ও নাগরদোলা বসেছে মেলায়। এছাড়া ফার্নিচার, সাজ-বাতাসা, মিষ্টির দোকান, হোটেল, বাহারি খাবারের দোকান, নানা ধরনের খেলনার দোকান গড়ে উঠছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, মেলা শুরুর সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারোর। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.)। ধারণা করা হয় ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথম দিকে মারা যান তিনি ।
তার মৃত্যুর দিন ভক্তরা জড়ো হয়ে ওরসের আয়োজন করে। কালক্রমে সে ওরস ঘিরে জমে ওঠে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা।
স্থানীয় কলিমাঝি গ্রামের বাসিন্দা এস এম মহব্বত বলেন, প্রতি বছর এ মেলা ঘিরে অত্র এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলা ঘিরে অন্তত আশপাশের কয়েকশত গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে। আমার জন্মের আগে তো বটেই আমার বাপ-দাদার জন্মের আগে থেকে এ মেলা চলে বলে মুরব্বিদের মুখে শুনে আসছি।
বনমালীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, শুরুর প্রায় এক মাস আগে থেকে এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলার সময় আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার রীতি চালু রয়েছে। এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলায় গ্রামের বাড়িতে আসার। আশপাশের শতাধিক গ্রামের মানুষ কাজের জন্য যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন তারা এই মেলা উপলক্ষে বাড়িতে অর্থাৎ নাড়ির টানে প্রাণের মেলায় ছুটে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসরাফিল মোল্লা বলেন, কাটাগড়ের মেলার প্রধান ঐতিহ্য হচ্ছে চিনির তৈরি সাজ-বাতাসা ও কদমা। মেলায় আগতরা মাটির পাতিলে(খুঠি) সাজ-বাতাসা ও কদমা কিনে বাড়ি ফেরেন। সেটি কেনার পরে আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহের (রহ.) আস্তানার ওপর ছিটিয়ে থাকেন। এভাবে প্রায় কয়েকশ মণ সাজ-বাতাসা ও কদমা ছিটানো হয়।
রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও লাখো মানুষের ভিড় জমেছে মেলায়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা সমাপ্ত হবে বলে আশাকরি।
শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: কামাল আহমেদ বলেন, কাটাগড়ের মেলা এ এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। মেলা ঘিরে আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। কাছে-দুরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এ মেলায়।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।