১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ফরিদপুরে বিরল প্রজাতির কুমির দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়

ফরিদপুরে বিরল প্রজাতির কুমির দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় - ছবি : নয়া দিগন্ত

ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে পদ্মা নদী সংলগ্ন একটি জলাধারে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে অবস্থান করছে বিরল প্রজাতির একটি মিঠা পানির কুমির। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও সেটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। এ দিকে কুমির আসার খবরে প্রতিদিন শত শত লোক ছুটে যাচ্ছে পদ্মার ওই দুর্গম চরে সেটিকে একনজর দেখার জন্য।

অন্য দিকে যেকোনো সময় ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে ভেবে এলাকাবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠা পানির এই কুমির খুবই শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় সেটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

যেভাবে নজরে এলো কুমিরটি
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো: মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, নর্থচ্যানেলের ছালাম খাঁর ডাঙ্গি গ্রামে পদ্মা নদীর সংলগ্ন রয়েছে ফালুর কুম নামে একটি খাল। প্রায় পঞ্চাশ মিটার দৈর্ঘ্য এবং এক শ’ মিটার ওই খালটিতে মাছ ধরতে গিয়ে গত ২৪ জুলাই কুমিরটি দেখতে পান হযরত মিয়া নামে এক ব্যক্তি। এরপর বিষয়টি বনবিভাগকে জানানোর পর তারা বিভিন্নভাবে সেটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এছাড়া এলাকাবাসীকে সচেতন করতে পাশের মোহন মিয়ার হাট সংলগ্ন মসজিদ থেকে মাইকিংও করা হয়।

ফরিদপুর বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে খালের মুখে হাঁস-মুরগি বেঁধে কুমিরটিকে সেখান থেকে বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়।

দফায় দফায় উদ্ধার অভিযান
এরপর ফরিদপুরে এসে বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের ১২ সদস্যের একটি দল নিয়ে গত সপ্তাহে দুই দফায় অভিযান চালিয়েও কুমিরটিকে উদ্ধার করতে পারেনি।

ওই দলের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো: মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, কুমিরটি আকারে বেশ বড়। প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুটের মতো। বৃষ্টি বা বর্ষার কারণে নদীর পানি বাড়লে কুমিরটি একা একাই সেখান থেকে বের হয়ে যেতে পারে।

04 (1)
কুমিরটি উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে বনবিভাগ


তিনি বলেন, কুমিরটি এখনো সেখানে থাকায় তারা স্থানীয়দের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করেছেন। মিঠা পানির এই কুমির সাধারণত মানুষের ক্ষতির কারণ হয় না। সেজন্য কেউ যাতে সেটিকে বিরক্ত না করে সে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে কুমির উদ্ধারের ওই অভিযানে যোগ দেন প্রায় ১০ জনের মতো স্থানীয় জেলে ও মৎস্যজীবী।

ওয়াফিজ মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বিশ্বাস ও মীর মালতেরডাঙ্গী গ্রামের চানু মোল্লা বলেন, গত ২৮ জুলাই তারা প্রথম দফায় জাল দিয়ে কুমিরটিকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর গত ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফায় আবারো জাল দিয়ে সেটি উদ্ধারে নামেন। বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এভাবে জাল ফেলার পর তিন দফা কুমিরটি জালে আটকাও পড়ে। কিন্তু প্রতিবারই জাল ছিঁড়ে বের হয়ে যায় সেটি।

কুমির দেখতে ভিড়
এদিকে পদ্মা নদী সংলগ্ন ওই কুমে আটকে পড়া কুমিরটিকে দেখতে পদ্মার ওই দুর্গম চরে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। এতে সেখানে জনমসাগমও বেড়ে গেছে।

স্থানীয় ট্রলারচালক সূর্য মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দশটি ট্রলার চলে ধলার মোড় থেকে মোহন মিয়ার হাট পর্যন্ত পদ্মা নদীর ওই পথে। প্রায় চার হতে পাঁচ কিলোমিটার এই নৌ পথে যেতেই লাগে ঘণ্টাখানেক সময়। কুমির আসার খবর শুনে প্রতিদিন এক শ’ থেকে দেড়শ’ মানুষ সেখানে যাচ্ছেন কুমির দেখতে। কোনোদিন এই উৎসুক মানুষের সংখ্যা তিন শ’ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এই ভিড় বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের উদ্বেগ
মাহন মিয়ার হাটের পল্লী চিকিৎসক হায়দার পত্তনদার বলেন, কুমির আসার খবরে স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। তারা কেউই নদীতে নামছেন না। তবে ছোটদের নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ কাটছে না।

তিনি জানান, গত ২২ জুলাই সন্ধ্যায় বড় ঢল নামে। সম্ভবত ওই ঢলে পানি বাড়ার কারণে পদ্মা নদীর সাথে সংলগ্ন ওই ফালুর কুমে কুমিরটি ঢুকে পড়ে। দিন যত যাচ্ছে তাদের মাছে উদ্বেগও বাড়ছে কুমির নিয়ে।

বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বিলুপ্ত প্রায় এই মিঠা পানির কুমিরটি এখানে এসে পড়েছে। আর বর্তমানে যেখানে কুমিরটি রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার কারণে সেটি বেরুতে চাচ্ছে না। এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পাবনা ও রাজশাহীতে এই প্রজাতির কুমির দেখার পরে দুটি পুরুষ কুমিরকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রাখা হয়। তার আগে ২০১৫ সালে মাগুরায় মধুমতি নদীতে এই ধরনের একটি কুমির দেখতে পাওয়া যায়।

বনবিভাগের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, যদি এই কুমিরটি নারী প্রজাতির হয় তবে সাফারি পার্কের পুরুষ প্রজাতির কুমিরের সাথে প্রজনন ঘটিয়ে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির কুমিরের বংশবৃদ্ধি করানো সম্ভব। নদীতে পানি কমলে সময় সুযোগ মতো কুমিরটি উদ্ধারে আবার অভিযান চালানো হবে বলে তারা জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ভুয়া তথ্য’ ছড়িয়ে কিরগিজস্তানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা রংপুরে হুমকি দাতা ইউপি মেম্বারকে তলব করল রিটার্নিং কর্মকর্তা রাইসির মৃত্যু হলে কে হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মিরসরাইয়ে ফের মিললো অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, পরে ধ্বংস প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর মারধর, মানববন্ধন সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে কম্বোডিয়ায় দু’টি চীনা যুদ্ধজাহাজ, উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন হাতিয়ায় হরিণের গোশত জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড আশুগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অটোরিকশা চালকের মৃত্যু রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার দ্রুত চাপে পড়বে : প্রত্যাশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা মহাদেবপুরে বাসচাপায় মাদরাসাছাত্র নিহত

সকল