১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


সেজানের কারখানায় ছিল শিশু ও কিশোর শ্রমিক

সেজানের কারখানায় ছিল শিশু ও কিশোর শ্রমিক - ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় কাজ করতেন শিশু ও কিশোর শ্রমিকরাও। এমনই এক কিশোর শ্রমিক রাকিব হোসেনের (১৭) ছবি নিয়ে কারখানার সামনে অপেক্ষা করছিলেন তার বাবা।

রাকিবের বাবা কবির হোসেন জানান, রাকিব গত এক বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করছে। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর বারবার কল করেছেন তার ফোনে। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘কেউই আমার ছেলের খোঁজ দিতে পারছে না’।

কারখানার সামনে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সাথে কথা বলে নিখোঁজ এমন ৯ জন শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায় যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

সাত মাস ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরির (সেজান জুসের কারখানা) নুডলস ম্যাকারনি শাখায় কাজ করতেন স্মৃতি (১৩)। তার সাথে কাজ করা বেশিরভাগ শ্রমিকই শিশু বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার ঘণ্টাখানেক আগে ছুটি পাওয়ায় বেঁচে যান স্মৃতি।

নিখোঁজ আরেক শ্রমিক ১৪ বছর বয়সী ফারজানা। গত তিন বছর ধরে পাঁচ হাজার টাকায় এ কারখানায় কাজ করছিলেন বলে জানান তার মা ঝরনা বেগম। মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে তিনি কারখানা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন।

নিখোঁজ আরেক শ্রমিক ১৪ বছর বয়সী ফারজানা। গত তিন বছর ধরে পাঁচ হাজার টাকায় এ কারখানায় কাজ করছিলেন বলে জানান তার মা ঝরনা বেগম। মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে তিনি কারখানা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন।

১৬ বছর বয়সী মৌমিতা জানান, হাসেম ফুডস কারখানায় সেজান জুস, চানাচুর, সেমাই, চকলেটসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন আগুন লাগে তখন কাজে ছিলেন না। এ কারণে প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু ফারজানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কারখানার সামনে দিনভর ঘুরেছেন এমন এক নারী কিশোরগঞ্জের ঝুমা বেগম। বোন ইশরাত জাহানের ছবি হাতে নিয়ে ঘুরছেন সবার দ্বারে দ্বারে। তিনি বলেন, আমার বোনকে খুঁজে পাচ্ছি না। মানুষ বলছে, লাশগুলো নাকি চেনার উপায় নেই।

তবে এ ব্যাপারে হাসেম ফুডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসক) কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের কারখানায় কোনো কিশোর শ্রমিক কাজ করে না। তবে তার দাবি, শ্রমিকদের স্বজনেরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না।

পুলিশের করা নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকায় ৪৮ জনের নাম রয়েছে। যাদের বেশির ভাগের বাড়ি কিশোরগঞ্জ ও ভোলায়। এ ছাড়া নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, যাদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে, তাদের সবাই নিখোঁজ।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল ইসলাম বলেন, লাশের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement