সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি; ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
- কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ০১ জুলাই ২০২০, ২১:১৩
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নদী অববাহিকার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিহতি আরও অবনতি হয়েছে। অনেক স্থানে নদী ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে নদীর পানি তীব্র গতিতে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে মানুষের বাড়ীঘর, ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। অনেকেই বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। সহায়সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষেরা।
গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ডপয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ৬ টায় বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে আগামী ৪৮ ঘন্টা যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এ দিকে যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টানা চারদিন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষের ঘর-বাড়িতে ঢেউ খেলছে বন্যার পানি। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বন্যা কবলিত মানুষদের নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় করে চলাচল করতে হচ্ছে। যারা ঘর বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানির অভাবে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যায় পাঁচটি উপজেলার ৩১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ ‘ ১৬টি গ্রামের ২৪ হাজার ৯শ’ ২৪টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২শ’ ৮০টি ঘরবাড়ি আংশিক, ২২টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধ এবং প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ১২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে নদীবেষ্টিত জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ২৫২০ হেক্টর জমির পাট ও তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে এবারে আকস্মিক বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাজিপুর উপজেলায়। বুধবার সকাল ৬ টায় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনানদীর বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরো বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। শুভগাছা ইউনিয়নের বীরশুভগাছায় এ বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্মিত সেতুটি বন্যার পানির স্রোতে দেবে গেছে। সোমবার থেকে সেখানে পাউবো এবং স্থানীয় লোকজন সেতুটি রক্ষায় কাজ করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেতুটির পাশের পুরাতন ওয়াপদা বাঁধেও ধস নেমেছে।
এদিকে চরগিরিশ ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র পাকা রাস্তার জোড়া সেতুটি পানিতে তলিয়ে গেছে। বাহাদুরের ঘাট থেকে ভেটুয়া ঘাট হয়ে এই সেতু পার হয়ে কাজিপুর উপজেলায় যেতে হয়। পাশাপাশি দুটি সেতু একসাথে হওয়ায় স্থানীয়রা এটিকে জোড়া ব্রিজ বলে। গত বছর বন্যায় ব্রিজটির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে একপাশে দেবে যায়। তারপরেও ওই সেতু হয়েই যাতায়াত চালু ছিলো। কিন্তু এ বছরের বন্যায় সেতুটি দিয়ে চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।
চরগিরিশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, বন্যায় ব্রিজটির ক্ষতি হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে এর সংস্কার করা জরুরি। কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম শাহা আলম মোল্লা জানান, এরই মধ্যে বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে ২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বন্যার্তদের জন্যে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা