২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট : বাংলাদেশের ৪টি ভাবনার বিষয়

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলছেন, দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। - ছবি : বিবিসি

শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে বাংলাদেশ দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে।

এই ম্যাচ দিয়ে ঘটনাবহুল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ হবে বাংলাদেশের।

এখন পর্যন্ত টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

প্রথম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৫৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আনন্দ খানিকটা ম্লান হয়ে এখন টেস্ট সিরিজ নিয়ে দলের ভেতরে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে।

যদিও টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলছেন, দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু ব্যাটসম্যান মুমিনুল কিংবা অধিনায়ক মুমিনুলকে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে না।

মুমিনুলের অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিং
মুমিনুল হকের শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে, অর্থাৎ ঠিক এক বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে।

এরপর তিনি দুইবার মাত্র ৫০ বা তার বেশি রান তুলতে পেরেছেন, এর মধ্যে একবার জিম্বাবুয়ের হারারেতে, আরেকবার নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গুইয়ে, যে টেস্টে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয় পায়।

এরপর মমিনুল হক চার ইনিংসে ০, ৩৭, ০ ও ২ রান তোলেন।

মুমিনুল হকের অধিনায়কত্ব একই সাথে তার ব্যাটিংয়েও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

তিনি বলছেন, মুমিনুল যেখানে ব্যাট করেন সেখানে ব্যর্থ হলে গোটা দলের ওপরই প্রভাব পড়ে।

তবে মুমিনুল নিজেও একটা মানসিক অস্বস্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।

‘ব্যাটিং নিয়ে ভাবলেই তার কিন্তু হচ্ছে না। একটা দলের নেতা তিনি, অনেক সিদ্ধান্ত, অনেক দায়। এই বিষয়গুলো তার মনে প্রভাব ফেলছে।’

ম্যানেজমেন্টও এসবে জড়িত থাকে, কিন্তু সবার ফোকাসে থাকেন মুমিনুল।

শুধু মুমিনুলই নন মুশফিকুর রহিমও ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় কাটাচ্ছেন না।

এটাকে ‘ব্যাডপ্যাচ’ বলছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

‘এই ধরনের ব্যাডপ্যাচ গোটা দলেই প্রভাব রাখে। এবং ওরা তো মিডল অর্ডারে খেলে। ওখানে যদি উইকেটে টিকতে না পারে সেটা মুশকিল হয়ে যায় বাকিদের জন্য।’

মুশফিকুর রহিম শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন প্রায় ২ বছর ২ মাস আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

শেষ ফিফটিও করেছেন সাত ইনিংস আগে।

একটি খারাপ সেশনই ম্যাচ হারার জন্য যথেষ্ট
কখনো কখনো একটি ভালো সেশন ম্যাচ জয়ের জন্য যেমন যথেষ্ট, ঠিক সেভাবে একটি খারাপ সেশনেই বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যেতে পারে বলছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

‘দেখেন টেস্ট ম্যাচ জিততে যা যা করতে হয় বাংলাদেশ সবই করেছে। শেষ ইনিংসে যেটা হয়েছে এটা কেউই অনুমান করতে পারেনি। এর আগ পর্যন্ত ২০ উইকেট নিয়েছে, জয়ের একটা ভালো ইনিংসকে কেন্দ্র করে প্রথম ইনিংসটায় ভালো করেছে।’

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ যে টেস্ট ম্যাচটি জিতে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে আশা জাগিয়েছিল সেখানেও একটা সেশনে ইবাদতের বোলিংই গোটা সমীকরণ বদলে দিয়েছিল।

এবারে সেটা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেশভ মহারাজ।

তিনি নিজের ঘরের মাটিতে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে কোনো সুযোগই দেননি।

এই ধরনের মুহূর্তের জন্য সাবধান থাকতে হবে বলছেন বিশ্লেষকরা।

টেস্ট ক্রিকেটে এসব জায়গায় সাবধানী পদক্ষেপ গোটা ম্যাচের ফলে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

পেস বোলারদের উইকেট, কিন্তু বাংলাদেশী পেসাররা ইনজুরিতে
বাংলাদেশের দুই ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম চোট পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এটা গোটা দলের ভারসাম্যেই প্রভাব ফেলবে।

টিম ম্যানেজমেন্টও কোনো চমক ছাড়াই স্কোয়াড নামাতে মোটামুটি বাধ্য।

কারণ অতিরিক্ত পেসার একজনই আছেন- আবু জায়েদ রাহী। ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়া এই পেসার দলে অনিয়মিত। প্রায় চার বছরে খেলেছেন মাত্র ১৩টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ।

প্রথম টেস্টে একজন স্পিনার নিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হলেও, দ্বিতীয় টেস্টে একের বেশি স্পিনার নেয়ার সম্ভাবনা কম।

পোর্ট এলিজাবেথ ঐতিহাসিকভাবেই পেস বোলারদের জন্য সহায়ক উইকেট। এখানে সিম ব্যবহার করে বোলাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন।

ম্যাচের আগে বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখানে বাতাসের মতিগতি বোঝা জরুরি। যদি বাংলাদেশের বোলাররা বাতাস কাজে লাগাতে পারেন একই সাথে ব্যাটসম্যানরা বাতাস সামলাতে পারেন তবে ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আসতে পারে।’

অ্যালান ডোনাল্ড নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা পেস বোলারদের একজন ছিলেন।

তিনি এই মাঠে সাত ম্যাচ খেলে ৪০টি উইকেট নিয়েছেন।

প্রথম টেস্টে সৈয়দ খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদের বোলিংয়ে সন্তুষ্ট ডোনাল্ড।

বাংলাদেশ পরিচিত ফাঁদেই পা দিচ্ছে কেন
কেশভ মহারাজের কাছে শেষ ইনিংসে ৭ উইকেট দেয়ার পর থেকেই এই প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে যেই বাঁহাতি স্পিনাররাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই বাঁহাতি স্পিনারের হাতেই মাত্র ১৯ ওভারের মধ্যে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ।

এটা রীতিমতো অপরাধ বলছেন মুমিনুল।

কিন্তু এর আগেও বাংলাদেশ এভাবে কোনো একজন বোলারের হাতে ম্যাচের শেষ ইনিংসে উইকেট খুইয়েছে।

বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানে ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি বলছেন, ‘বাংলাদেশের এটা হয়েই আসছে। হয়তো কিছু রান বেশি বা কম করে, কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাট করতে পারে না এটা বাংলাদেশের জন্য নিয়মিত ঘটনা।’

তিনি বলছেন, ‘ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ নিয়মিতই ভালো খেলে। একই সাথে বাংলাদেশের সেরা দলটাই ওয়ানডে খেলে। টেস্টে দেখা যায় আজ সাকিব নেই, কাল তামিম নেই। মুমিনুল অধিনায়ক হিসেবে তরুণ। সেরা দলটা ঠিক পাওয়া যায় না। তাই সব মিলিয়েই একটা নেতিবাচক জায়গায় থাকে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement