ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় জয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস। চতুর্থ উইকেটে লিটনকে ১৮৯ রানের জুটি গড়ে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন সাকিব। ম্যাচ সেরা সাকিব নিজে করেছেন ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রান। ১৬টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। সাকিবকে দুর্দান্ত সঙ্গ দেয়া লিটন ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৯ বলে অপরাজিত ৯৪ রান করেন।
এমন দুর্দান্ত জয়ের পরও আগামী ম্যাচগুলোতে আরও ভালো খেলার কথা জানালেন সাকিব। তিনি জানান, বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য পুরনে আগামী ম্যাচগুলোতেও বাংলাদেশকে ভাল খেলতে হবে।
গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফুরফুরা মেজাজে থাকা সাকিব বলেন, ‘আর চারটি ম্যাচ আছে। আমরা সেমিফাইনাল খেলতে চাই। সেমিফাইনাল খেতে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে পাশাপাশি আমাদেরকে প্রত্যেককে অবদান রাখতে হবে। এখন ভালো করছি। সামনেও ভালো করবো সেটাও নিশ্চিত হতে হবে।’
বল হাতে ২ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং লাইন-আপকে প্রথম ধাপে চুরমার করে দেন সাকিব। নবম ওভারে উইকেটে গিয়ে শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন তিনি। নিজের এই পারফরমেন্স ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর সাকিব, ‘এই মুহূর্তে আমি ব্যাটিং, বোলিং ও লিডারশিপ দিয়ে দলের অবদান রাখার চেষ্টা করছি। আমি এ ধারাবাহিকা ধরে রাখতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল পারফর্ম করবো। দলের হয়ে অবদান রাখবো। এখন ভালো সময় যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কি নিজের সেরা ফর্মে আছেন সাকিব? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘রানের কথা যদি চিন্তা করি তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। এর আগেও কয়েকবার ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু এর মানে এই না যে ভালো অবস্থানে থেকে বড় স্কোর করবো। ভালো অবস্থানে থেকেও বেশি রান করা সম্ভব হয় না। সব মিলিয়ে আছি ভালো অবস্থানে। সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করবো। আসলে একটা ব্যাটসম্যান যখন ধারাবাহিক ব্যাটিং করতে থাকে, তখন বল ভালোভাবেই দেখতে পারে। এখন সময় ভালো যাচ্ছে। ধারাবাহিক থাকলে সব সময়ই রান করা যায়। আমি এখন সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করবো।’
ম্যাচ জয়ের জন্য শুধুমাত্র ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংই যথেষ্ট নয়, মানসিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকাটাও খুব বেশি জরুরি বলে মনে করেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘মাইন্ড সেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে মানসিক ফিটনেসটা বেশি কাজ করে। ফিটনেসটা ভালো থাকলে খুবই ভালো। যত বেশি শক্ত ও সাহস রাখা যায়, মাঠে তত বেশি ব্যাটিং করেন বা বোলিং করবেন ওই সময়টায় হেল্প করবে। নিজ থেকে যদি মনে না করেন জিততে পারবেন না, তাহলে জিততে পারবেননা। যখন মন থেকে চাইবেন যে জেতা সম্ভব, আমি জিততে চাই তাহলে দেখবেন জিতবেন। হয়তো সব সময় হবে না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই হবে।’
দলীয় ৫২ রানে সৌম্য সরকার ফিরে যাবার ক্রিজে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী হন সাকিব। তখন দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ২৭০ রান। এ অবস্থায় ২২ গজে তামিমের সাথে ম্যাচ জয়ের পরিকল্পনা সাড়েন সাকিব। এই পরিকল্পনা পড়ে লিটনের সাথেও করেছেন তিনি। কি ছিলো তামিম-সাকিব-লিটনের পরিকল্পনা? সাকিব বলেন, ‘আমি আর তামিম যখন ব্যাটিং করছিলাম তখন ঠিক করছিলাম যে আমরাই শেষ করবো। আমি ওকে দুবার বলেছিলাম। লিটনের ব্যাটিংয়ের সময় দুজন দুজনকে বলেছি শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে। নট আউট থাকতে হবে। আমরা অনেক বাজে বল পাচ্ছিলাম যেগুলো চার হচ্ছে। তাই প্রেসার নিতে হয়নি ভালো বল মারার জন্য। আমাদের দু’জনের ভেতরে অনেক বার কথা হয়েছে যে, দু’জন চাইলেন শেষ করা সম্ভব। একজন আরেকজনকে বারবার স্মরণ করে দিয়েছি।’
৩২২ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এর আগে এত বেশি রান তাড়া করে কখনো ম্যাচ জিতেনি টাইগাররা। ৩শ’ বেশি রান টার্গেট পেয়েও ৫১ বল বাকি রেখে ম্যাচ জয় প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এর পেছনে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ অনেক বেশি সহায়ক হয়েছে জানান সাকিব। পাশাপাশি কোচিং স্টাফদের অবদান স্বীকার করলেন তিনি, ‘আমি তো মনে করি এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নতুন একটা লেভেল এটি। আয়ারল্যান্ডের কয়েকটা ম্যাচ আমাদেরকে বেশ হেল্প করেছে। আমরা ওখানে প্রতিটা ম্যাচ চেজ করে জিতেছি এবং কোনো সময় মনে হয়নি আমরা চাপ নিয়ে ব্যাটিং করেছি। বড় শট খেলতে হবে সেটা খেলেছি। কিন্তু সঠিক ক্রিকেটিং শট খেলেছি। বড় বড় দেশ এগুলো করে থাকে। আমরা ওই ধরণের চেষ্টা করছি। কোচিং স্টাফের অনেক ক্রেডিট যাওয়া উচিত। আগে যেটা হতো আমরা ড্রেসিং রুমে প্যানিক করে ফেলতাম। এখন যেটা ভালো জিনিস হচ্ছে ড্রেসিং রুমে কোচিং স্টাফরা ক্লাম থাকে, প্যানিক করার সুযোগটা আসে না। দেখা যায় কেউ রেডিও শুনছে, কেউ গল্প করছে। কোনো স্টেজে কেউ প্যানিক হয় না। স্বাভাবিকভাবে এটা একটা ছোঁয়াচে জিনিসের মতো। একজনের ধরলে আরেকজনের অটোমেটিক ধরে যায়। কোচিং স্টাফরা এই বিষয়টা ড্রেসিং রুমে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
ম্যাচ জয়ের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি সাকিব। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সব রকমের শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের উপর সমর্থন বজায় রাখুন। আমার মনে হয় দল ভালো করছে। সবসময় আপনারা আমাদের যেভাবে সমর্থন দেন, সেভাবে সমর্থন দিয়ে গেলে আমরা আরও ভালো করবো।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা