০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পাগলা মসজিদে মিলল পৌনে ৮ কোটি টাকা

-

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল রেকর্ড পরিমাণ টাকা। মোট টাকার পরিমাণ সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। মসজিদের ৯টি দানবাক্স বা সিন্দুক খুলে এসব টাকা পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে টাকাগুলো গণনা করতে। এই মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে রেকর্ড পরিমাণ এত টাকা আর কখনো পাওয়া যায়নি। চার মাস ১১ দিনে মসজিদের দান বাক্সে এ টাকা জমা পড়ে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপারের মোহাম্মদ রাসেল শেখের তত্ত্বাবধানে মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। দানবাক্স থেকে টাকা বের করে ২৭টি বস্তায় ভরা হয়। এরপর বস্তাবন্দি টাকাগুলো নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। শুরু হয় গণনা পর্ব। টাকাগুলো গণনা করতে লোক লাগে ২০৬ জন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে গণনার কাজ। দান বাক্স খুলে টাকাগুলো যখন ২৭টি বস্তায় ভরা হয় কমিটির লোকজন তখনই ধারণা করেছিল এবার টাকার পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। নগদ টাকা ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারো দানবাক্সে মিলেছে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রূপার বিপুল অলঙ্কার!
এবার অলঙ্কারের পরিমাণ পাঁচ কেজি ছাড়িয়ে গেছে বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির এক সদস্য। টাকার পরিমাণ নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ। টাকা গণনা শেষে রাত ২টায় নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মহুয়া। সাধারণত তিন মাস পর পর মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। করোনার পর থেকে বাক্স খোলার সময়ের কিছুটা হেরফের হয়। তাছাড়া রমজান মাস থাকার কারণে এবার বাক্সগুলো খুলতে একটু দেরি হয়। এবার চার মাস ১১ দিন পর খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের দানবাক্স।
এর আগে সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর এ মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে সর্বোচ্চ ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তারও আগে গত ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছির মসজিদের সিন্দুকগুলো। তখন পাওয়া যায় পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। গত বছরের মে মাসের ৬ তারিখে দানবাক্স থেকে মিলেছিল পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায় ৪ কোটির বেশি টাকা। স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এ কারণে মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের থাকে অনেক কৌতূহল। তাই গণনা শেষে প্রতিবারই জানিয়ে দেয়া হয় টাকার অঙ্ক। তবে স্থানীয়রা অনেকে বলেছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত।
সকালে দানবাক্স বা সিন্দুক খোলার সময় মসজিদে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড়সড় দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।
সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো ধরাধরি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ। পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে।
মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছে যথাক্রমে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।


আরো সংবাদ



premium cement