২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
না’গঞ্জে নিম্নআয়ের মানুষের দুঃসময়

কী খেয়ে বাঁচব আমরা বলতে পারেন?

-

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা শাহেদ আলী ঘুরে ঘুরে জুতা সেলাইয়ের (মুচি) কাজ করত। সকালে কাঁধে একটা বাক্স নিয়ে প্রতিদিন বের হতো সে। রাস্তায় পাশে কিংবা ফুটপাথে বসেই জুতা সেলাই আর জুতায় রঙ করে দেয়ার কাজ করত। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চলে যেত তার টানাটানির সংসার। করোনায় কমে গেছে তার রোজগার। যা আয় করে তার বেশির ভাগই ঘর ভাড়ায় চলে যায়। কঠোর লকডাউনে শাহেদ আলীর খুবই করুণদশা। শুক্রবার বিকেলে নয়া দিগন্তকে শাহেদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, কী খেয়ে বাঁচব আমরা বলতে পারেন? কাজ নেই বললেই চলে। লোকজনের যাতায়াত কমে যাওয়ায় আমাদের আয় নেই। খুবই খারাপ অবস্থা।
শাহেদ আলী আরো জানায় ‘গেল বছরের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারিনি। যে ধার করেছিলাম সেটা এখনো শোধ হয়নি। এখন আবার সবকিছু বন্ধ করে দিছে? বাপ-দাদার কোনো সম্পত্তি নাই যে গ্রামে চলে যাব।’ কোনো সহায়তা পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে বলেন, কে করব আমাগো সাহায্য? কেউ একটা পয়সাও দেয়নি।’ সামনের দিনগুলো নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।
শুধু শাহেদ আলীই নয়, নারায়ণগঞ্জে এমন অসংখ্য নিম্নআয়ের মানুষ কঠোর লকডাউনে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কাজ বন্ধ। কীভাবে খাবার জুটবে সেটা নিয়েই চিন্তা তাদের। খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিয়ে কি মানুষকে ঘরে বন্দী রাখা যাবে? মানুষের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলেও না খেয়ে মরতে চাইবে না বলে মনে করছেন অনেকে। জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে বিপর্যয়ের শঙ্কা আরো বাড়বে। বেশির ভাগ দিনমজুরের এখন তেমন কাজ নেই। কঠোর লকডাউনের ফলে কর্মহীন অলস সময় পার করছে পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে সংসারের অভাব-অনটনে অর্ধহারে-অনাহারে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
নারায়ণগঞ্জের কালিবাজার চারারগোপ এলাকায় রিকশা নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে আছেন শাকিল। বৃদ্ধা নানী ও তার মাকে নিয়েই তার সংসার। লকডাউনের কারণে যাত্রী না পেয়ে, এখন ক্লান্ত তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “লকডাউন দিছে দিনমজুরকে মারার জন্য, খাইয়া আছি নাকি পাথর পেটে চাপা দেই কেউ জানে না।
তার সাথে কথা বলতে বলতেই চোখ পড়ে ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধার দিকে। চারাগোপ ফলের বাজারের পাশের সড়কে কাঁঠালের বিচি কুড়োচ্ছেন। একটু কাছে গিয়ে দেখা যায় তার পলিথিনের ব্যাগে অল্পসংখ্যক কাঁঠালের বিচি। কথা বলে জানা যায়, অচল ছেলে ও তার পরিবারের দেখাশোনা তিনিই করেন। মানুষের থেকে সাহায্য নিয়েই তাদের আহারের ব্যবস্থা করেন।
সড়ক থেকে কাঁঠালের বিচি কুড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন, “করোনা নাকি বাড়ছে। মানুষ রাস্তায় বের হয় না। বাসায়ও ঢুকতে দেয় না। সাহায্য করে না কেউ। ঘরে টাকা নাই। বিচি রাইন্ধা খামু।
প্রায় একই গল্প কথা শোনা যায় ৫ নম্বর ঘাট এলাকা মাঝি দাদনের কাছে। নৌকার সাথে তার জীবিকা বাঁধা থাকায় আটকে গেছে জীবিকার পথ। লকডাউনে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় সামান্য আয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “যাত্রী নাই, নৌকার ভাড়া হয় না, ইনকাম হইবো কেমনে? যা কামাইতাছি ওইটা ঘরের ভাড়া দেওন লাগব। তিন বেলা ডাল-ভাত খামু সেই অবস্থাটাও নেই।


আরো সংবাদ



premium cement