১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

-

বহুল আলোচিত পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলার এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকরের চূড়ান্ত আপিল শুনানির অপেক্ষায়। আর এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে হওয়া মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষী দিয়েছেন ১৮৫ জন। আর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিল এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এখন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, এ মামলাটির আমরা দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেবো। বিচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে এ বছরই উদ্যোগ নেয়া হবে। আসামি পক্ষের প্রস্তুতির জন্য একটি সময় পাবেন। তারপরও তারা প্রস্তুতি নিতে না পারলে আমরা উদ্যোগ নেবো। মোট কথা এ মামলা দ্রুত শুনানি করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তবে ২০৩ জন আসামির পক্ষে আপিল আবেদনকারী আইনজীবী আমিনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, চলতি বছর এ মামলার আপিল শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আপিল আবেদনের আরো কিছু কার্যক্রম বাকি আছে। অনেক আসামির মামলার সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে। মামলার প্রস্তুতি নেয়াসহ আরো বেশ কিছু কার্যক্রম বাকি থাকায় এ বছরই আপিলের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো: শওকত হোসেন, বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ পিলখানা হত্যা মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণার দুই বছরের বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে নিম্ন আদালতের দেয়া ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। খালাস পান ৪৫ জন।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দু’টি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। এ মামলার আপিলের শুনানির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ বছরই আপিল বিভাগে শুনানি হবে বলে আশা করছি। সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগে আমরা আবেদন জানাব। এ বিষয়ে ২০৩ জন আসামির পক্ষে আপিল আবেদনকারী আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে ৯ জন আসামির পক্ষে সব কাগজপত্রসহ আপিল করেছি। এতে প্রায় আট থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি আসামিদের পক্ষে অব্যাহতি আবেদন করা হয়। শুধু মেমো অব আপিলের মাধ্যমে আবেদন করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে অনুমতি চাইলে প্রধান বিচারপতি তা গ্রহণ করেন। বাকি আপিলগুলো মেমো দিয়ে দাখিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক আসামির ক্ষেত্রে মামলার সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে। প্রধান বিচারপতি শুনানির দিন নির্ধারণ করবেন। আমরা আপিল বিভাগে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরব। আশা করি আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবো।
পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর ২০৪ জন আসামি পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন। খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ আসামির ক্ষেত্রে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এখন এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে ঘটে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে। মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement