২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নবায়ন না হওয়ায় দুর্ঘটনাঝুঁকি বাড়ে

-

শহরাঞ্চলের আবাসিক অথবা অনাবাসিক সব ধরনের ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন হয় না বলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এই কাজটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সঠিকভাবে করতে পারলে রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যেত। এ ছাড়া নানা ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে নগরের শৃঙ্খলা ও সক্ষমতা বাড়াতে সিটি করপোরেশনগুলোতে প্রকৌশলী নিয়োগের পাশাপশি পর্যাপ্ত নগর পরিকল্পনাবিদ এবং স্থপতি নিয়োগেরও ব্যবস্থা করা উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘নগরে অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা উপরি উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, সেবাসংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার মাধ্যমে নগর এলাকায় অগ্নিঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নগরে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। নগর এলাকার সঠিক পরিকল্পনা, ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণ, কার্যকরী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নজরদারি থাকলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না। 

পরিকল্পনা সংলাপের শুরুতে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান ‘অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অগ্নিকাণ্ডের উদাহরণ টেনে এর সাথে পরিকল্পনাগত, প্রকৌশলগত ও ব্যবস্থাপনাগত বিভিন্ন সমস্যার যোগসূত্র তুলে ধরেন। এ ছাড়াও এ সংক্রান্ত বিদ্যমান  আইন ও বিধিমালার সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার আশু প্রতিকারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ড্যাপ প্রকল্পের পরামর্শক পরিকল্পনাবিদ হিশাম উদ্দীন চিশতি, ব্র্যাকের নগর পরিকল্পনাবিদ ওয়াসিম আকতার, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মোহাম্মদ এজাজ প্রমুখ।  বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ভবন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ভবনের বাসিন্দারাই থাকেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর ফায়ার ড্রিল করে তাদেরই ভবনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখার দিকে নজর রাখতে হবে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর পরপর অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে ভবন মালিকদের বাধ্য করতে হবে। এটা করা হলে ভবনের নিরাপত্তার দিকটা উঠে আসবে এবং ভবন নিরাপদ হবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সব অনুমোদন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  

ড্যাপ প্রকল্পের পরামর্শক পরিকল্পনাবিদ হিশাম উদ্দীন চিশতি বলেন, একটি ইমারত সব ধরনের নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের সর্বপ্রথম দৃষ্টি রাখতে হবে। পরে কমিউনিটির সাথে সংযুক্তি বৃদ্ধি করে জনসচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেষ্ট হতে হবে।

ব্র্যাকের নগর পরিকল্পনাবিদ ওয়াসিম আকতার বলেন, নগর অঞ্চলে নি¤œ আয়ের জনবসতি অর্থাৎ বস্তিতে বসবাসকারীদের সমস্যাগুলো ভিন্নতর। বস্তিতে অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তার কোনো মাপকাঠি নেই, ফলে সমস্যাগুলো অনেক সময় নীতিনির্ধারকদের সামনেই আসে না। 

অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মোহাম্মদ এজাজ বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে নতুন কোনো এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে, নিরাপত্তা বিধানসহ সকল কিছুর পরিকল্পনা প্রথমেই অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। এরপর স্থানীয় পরিকল্পনা কমিশন ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদান করেন। কিন্তু ঢাকার চিত্র পুরোটাই আলাদা। সেখানে অনেক ভবনের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, ভবন নির্মাণ ও নকশা অনুমোদনপত্র সঠিক থাকে না। 

সভাপতির বক্তব্যে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঝুঁকি কমাতে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও ভবন নির্মাণের সময় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রগুলোতে মানসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement