২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খামারিরা মহাবিপাকে

দুধ-মুরগির ক্রেতা নেই অথচ খাবার কিনতে হচ্ছে চড়া দামে
-

করোনার প্রভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশে মুরগি এবং দুধের খামারিরা। সারা দেশ অচল হয়ে পড়ায় গরুর দুধ এবং লেয়ার মুরগির ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দাম পাওয়া যাচ্ছে না ডিমেরও। চাহিদা না থাকায় উৎপাদিত মুরগির বাচ্চা বিক্রি করতে পারছেন না তারা। অথচ এদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য চড়া দামে খাবার কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এসব খামারের মালিকরা যেকোনো মূল্যে বাঁচার রাস্তা খুঁজছেন। এমতাবস্থায় শ্রমঘন এবং সম্ভাবনাময় এ শিল্পের প্রতি সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সংশ্লিøষ্টরা।
পোলট্রি শিল্প খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন তিন হাজার ২৭ টন মুরগির গোশত উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বাজারে ক্রেতা না থাকায় ৭০ শতাংশ মুরগিই অবিক্রীত থাকছে। প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হচ্ছে চার কোটি ৬৬ লাখ পিস। কিন্তু বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে। প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় গড়ে ২৬ লাখ ৭২ হাজার পিস। এই বাচ্চার ৯০ শতাংশ এখন বিক্রি হচ্ছে না। দিনে পোলট্রি খাদ্য উৎপাদিত হয় ৯ হাজার ৮৬৩ টন। বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ। পোলট্রি খাতের এই সঙ্কটে চরম হতাশায় আছেন খামারিসহ উদ্যোক্তারা। তাদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি আরো দু-এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে।
দুগ্ধ খামারিদের অবস্থা আরো খারাপ। ৪০ থেকে ৫০ টাকার দুধ এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি করার জন্যও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সারা দেশের দুগ্ধ খামারে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বড় খামারিরা বিকল্প ব্যবস্থায় সামান্য হলেও দুধ প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন; কিন্তু করোনার ধাক্কায় ছোট খামারিদের পথে বসার উপক্রম। অবস্থা এমন হয়েছে, দুধ বিক্রির টাকায় যাদের গরু এবং নিজেদের খাবার চলে, বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা খাবেন কী? আর গাভীকে খাওয়াবেন কী? এমতাবস্থায় গাভীর খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে নামমাত্র মূল্যে সারা জীবনের উপার্জনের মাধ্যমটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দুধের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৯৯ লাখ টন। করোনার কারণে বর্তমানে ৯৫ শতাংশ দুধ বিক্রির জায়গা বন্ধ রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় পাবনা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা দুধ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। সামান্য দুধ পানির দরে বিক্রি করা গেলেও বড় অংশই অবিক্রীত। অনেকে ক্রিম আলাদা করে রাখছেন। কেউ কেউ ঘি বানানো শুরু করেছেন। এতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে প্রান্তিক খামারিদের ওই সুযোগ নেই। তারা অনেকেই ইতোমধ্যে পথে বসেছেন।
দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামার রয়েছে। এর ওপর নির্ভরশীল প্রায় সোয়া কোটি মানুষের জীবিকা। বাংলাদেশে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো উৎপাদিত দুধের মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিদিন সংগ্রহ করে। বাকি দুধ খামারিরা মিষ্টির দোকান ও বাসাবাড়িতে বিক্রি করেন। তাদের মজুদ করার সক্ষমতা নেই। এ মুহূর্তে ক্রেতা নেই। দামও পাচ্ছেন না। এখন উৎপাদিত দুধের প্রায় ৯৫ শতাংশ গন্তব্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক খামার বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দুধের বার্ষিক উৎপাদন দেড় কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে করোনার ধাক্কা সব এলোমেলো করে দিচ্ছে।
এ দিকে সরকারি-বেসরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশের পোলট্রি শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। মুরগি ও বাচ্চা উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্য তৈরি, পোলট্রি খাদ্য, ওষুধ, সরঞ্জাম ও রি-সাইক্লিংসহ নানাভাবে তারা সম্পৃক্ত। খামারি থেকে শুরু করে এ শিল্পে ছোট-বড় মিলিয়ে সম্পৃক্ত আছেন কয়েক লাখ উদ্যোক্তা। বর্তমানে সারা দেশে শুধু ৮৮ হাজার মুরগির খামার রয়েছে। এসব খামারে ২০৬টি বিডার্স ফার্ম বা হ্যাচারি বাচ্চা উৎপাদন করে সরবরাহ করছে। এ ছাড়া অনিবন্ধিত অসংখ্য ক্ষুদ্র হ্যাচারি আছে। নিবন্ধিত ফিড মিল আছে ২১৭টি। দেশে ৩০টির মতো কোম্পানি প্রাণিসম্পদের জন্য ওষুধ উৎপাদন করছে। এ ছাড়া ওষুধ সরবরাহকারী পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। পোলট্রির হিমায়িত প্রক্রিয়াজাত শিল্প রয়েছে প্রায় ১২টি। করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব উপ খাতই।
উৎপাদিত পোলট্রির বেশির ভাগই অবিক্রীত থাকছে জানিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প সমন্বয় পরিষদের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান গতকাল মঙ্গলবার নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের গ্রামভিত্তিক অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোলট্রি। গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান এ চাকা বর্তমানে ঘুরছে না বললেই চলে। খামারিরা তাদের উৎপাদিত মুরগি বিক্রি করতে পারছেন না। এ কারণে নতুন বাচ্চা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু পোলট্রির উৎপাদন বন্ধ রাখা যাবে না। চাহিদা না থাকায় অনেকে বাচ্চা ফ্রি দিলেও নিচ্ছে না। ফলে মাটিতে গর্ত করে ফেলে দিতে হচ্ছে। খামার থেকে বাজার পর্যন্ত পরিবহন ও শ্রমিকের অভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে মুরগি ও ডিমের তেমন ক্রেতাও নেই। সার্বিকভাবে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হঠাৎ করে চাহিদা বাড়লেও বাজারে ডিম ও মুরগি দেয়া সম্ভব হবে না। তখন অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ডিম, মুরগি, দুধ ও মাছ উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার দাবি জানান এ নেতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না মিয়ানমারে ফিরল সেনাসহ আশ্রিত ২৮৮ জন

সকল