১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো যাত্রাবাড়ীতে ৯ ফলের আড়ত মালিককে জরিমানা

-

অপরিপক্ব আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বাজারে দেদার বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন সংবাদে গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফলের আড়তে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০০ মণ কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম জব্দ করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ৯টি ফলের আড়তকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে ছিলেন বিএসটিআই ও কৃষি অধিদফতর ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
র্যাব বলছে, ল্যাংড়া আম জুন মাসে এবং হিমসাগর আম চলতি মাসের শেষে বাগান থেকে পাড়ার কথা। জব্দকৃত আম সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
এর আগে রাজধানীর ফল ব্যবসায়ীদের সাথে র্যাবের এক বৈঠক হয়। সেখানে ফল ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে অপরিপক্ব আম তারা বাজারে তুলবে না। তবে প্রতিশ্রুতির পরও বেশি মুনাফার লোভে বাজারে আম বিক্রি করতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সকালে বিভিন্ন আড়তে অভিযান চলার টের পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ সময় ৯টি আড়তে অভিযান চালায় র্যাবের দল। এ সময় আমে কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগে মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের নন্দন সরকারকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মেসার্স সাদ্দাম ট্রেডার্সের সাদ্দাম হোসেনকে চার লাখ, নাঙ্গলকোট বাণিজ্যালয়ের ইয়াসিন মজুমদারকে চার লাখ টাকা, শাহ চন্দ্রপুরী সবজি ভাণ্ডারের লিটনকে এক লাখ টাকা, নান্নু এন্টারপ্রাইজের জামাল খানকে তিন লাখ টাকা, বন্ধু বাণিজ্যালয়ের দুদু মিয়াকে দুই লাখ টাকা, মাদারীপুর বাণিজ্যালয়ের চাঁন মিয়াকে দুই লাখ টাকা, সজীব ট্রেডার্সের মিলনকে তিন লাখ টাকা এবং সাবিহা বাণিজ্যালয়ের হাসান মাহমুদকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সাদ্দাম হোসেন নামে অভিযুক্ত এক আম ব্যবসায়ী আমে কেমিক্যাল মেশানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এখানে আম পেকে গেছে, দ্রুত নিয়ে যাও। আমরা নিজেরাও জানি আম পাকেনি; কিন্তু তাদের চাপাচাপিতে আমাদের আম কিনতে হয়েছে। আম এনে দেখি এগুলো পাকেনি। তাই কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে।
অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, যারা আমের ব্যবসায় করে তারা কেউ চাষি না, তারা ব্যবসায়ী। তারা এরই মধ্যে আমের বাগান কিনে ফেলেছে। তাদের মধ্যে আগে বাজারে আম নেয়ার একটি প্রতিযোগিতা কাজ করে। তাই তারা মনে করেছিল আম এখন বাজারে এনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করবে। তাই এগুলো এনে বিক্রি করছিল।
তিনি আরো বলেন, বাজারে এখন শুধু গুটিআম থাকার কথা। ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে অপরিপক্ব হিমসাগর আমকে পরিপক্ব করে তুলছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আরো ১৫ দিন আগে থেকে বাজারে হিমসাগর আম দেখা যাচ্ছে। ল্যাংড়া আসতে আরো আটদিন বাকি। এগুলো সব কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। এ বিষয়ে হাইকোর্ট একটা আদেশও দিয়েছেন। তাই বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এই অভিযান।
সারোয়ার আলম জানান, রাজশাহীর বাগান থেকে হিমসাগর আম পাড়ার কথা আগামী ২৮ মে। এরপর তা ঢাকায় আনার কথা। এমন নির্দেশনা ছিল রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের। এ ছাড়া সাতক্ষীরার ল্যাংড়া ৬ জুনের পর বাজারে আসার কথা। কিন্তু এই হিমাসগর ও ল্যাংড়া আম এখনই ঢাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারের অন্যান্য ফলে কেমিক্যালের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিলে বাজারে ফলের অবস্থা ভালো। আগে ফরমালিন মেশানোর মতো ঘটনা ঘটত, সেটা এখন নেই। এ বছর শুধু আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর পেয়েছি।
অভিযানে র্যাবের সাথে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিরা। তারা জানান, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আমগুলো পাকানো হয়েছে। তাদের মতামত পেয়েই প্রায় চার মণ আম জব্দ করা হয়। পরে একটি পিকআপ ভ্যানের চাকার নিচে পিষ্ট করা হয় আমগুলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement