১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


সবজি বেচে লেখাপড়ার খরচ চালায় প্রাইমারি পড়ুয়া দুই ভাই

-

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামের দুই ভাই, ছয় বছরের কামরান ও আট বছরের রেদোয়ান। নরসিংপুর আদর্শ দাখিল মাদরাসার প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তারা। বাবা সমর আলী একজন দিনমজুর। বাবার সামান্য রোজগারে অভাব অনটনের সংসার তাদের। অথচ মা-বাবার স্বপ্ন অনেক বড়। তাদের এই দুই ছেলেকে তারা ভালো আলেম বানাবেন। এ জন্য দুই ভাইকে তারা মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু রুজি রোজগার কম থাকায় লেখাপড়ার খরচ বহনে অপারগ হয়ে পড়েন মা-বাবা। কিন্তু জীবনের কাছে হেরে যাওয়ার পাত্র নয় দুই ভাই।
সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে মা রুজিনা বেগমের পরামর্শে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান করে দুই ভাই। মায়ের সহযোগিতা নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় দুই ভাই লাল শাক, পুঁই শাক, বেগুন, ডাটা, বরবটি, লাউ, পোটল, করলা ও কুমড়ার চাষ শুরু করে। কিছুদিন পরই নানা সবজিতে ভরে উঠে দরিদ্র এই বাড়ির আঙ্গিনাটি। অতি উৎসাহ নিয়ে কামরান ও রেদোয়ান সেই সবজি মাথায় নিয়ে চলে যায় নরসিংপুর বাজারে।
আসলে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে মায়ের দেখানো পথে তারা সবজি বিক্রি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সপ্তাহের দুইটি হাটবারে মাথায় করে সবজির বোঝা নিয়ে হাটে যায় সাহসী কামরান ও রেদোয়ান। দাদী মর্তুজা বেগমের সহযোগিতা তাদের আরো সাহসী করে তুলে। সবজি মাথায় নিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে দাদীর সাথে প্রতি রোব ও বুধবার তারা বাজারে যায় সবজি বিক্রি করতে। এভাবেই উপার্জন শুরু মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া রেদোয়ান ও প্রথম শ্রেণীতে পড়–য়া কামরানের। দাদী ও অন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় নিজেরাই মায়ের চাষ করা সবজি বিক্রি করে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে শুরু করে দুই ভাই।
কিন্তু শুধু মায়ের সবজি বাগানের পয়সা দিয়ে তো আর লেখাপড়ার খরচ চলে না। তাই, দুই ভাই জীবন সংগ্রামের দ্বিতীয় ধাপে পা বাড়ায়। তারা প্রতিদিন দুপুরে গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি কিনে এনে সেই সবজি নিয়ে চলে যায় নরসিংপুর বাজারে।
নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালাতেই এ ব্যবসা শুরুর কথা জানায় নরসিংপুর আদর্শ দাখিল মাদরাসার প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী কামরান ও রেদোয়ান। তারা বলে, বাবার অল্প রোজগারে সবার জন্য তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া করাটাই দ্বায়, সেখানে আমাদের লেখাপড়ার খরচ কোত্থেকে আসবে। তাই, নিজেরাই কাজ করছি। এতে আমাদের একটি বোন আছে, তার পড়ালেখারও খরচও হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নরসিংপুর বাজার জামে মসজিদের সভাপতি সাংবাদিক তাজুল ইসলাম জানান, ছেলে দুইটির সাহস ও মনোবল দেখে আমরা খুবই খুশি। আশা করি রেদোয়ান ও কামরান এক দিন অনেক বড় হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement