১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ অমানবিক প্রথা ‘আম-কাঁঠালী’

-

দেশের পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত আছে মেয়ের বাড়িতে গাড়িভর্তি ফল পাঠানোর প্রথা। এটিকে ‘আম-কাঁঠালী’ বলা হয়। তবে শুধু আম আর কাঁঠাল নয় এই মৌসুমের প্রায় সব ফলই পাঠাতে হয়, যা চরম রকমের একটি অমানবিক প্রথা হিসেবে রূপ নিয়েছে। প্রথা অনুসারে মেয়ের বাড়িতে গাড়িভর্তি ফল পাঠাতে গিয়ে অনেকেই পড়ছেন চরম আর্থিক সঙ্কটে।
ভাঙছে অনেক সংসার। নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। এ নিয়ে ঘটছে হত্যার ঘটনাও। কিন্তু এই প্রথা বন্ধে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, বৃহত্তর সিলেটে কি কোনো সচেতন মানুষ নেই; যারা এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেবেন?
এ নিয়ে অনেক কথা আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে এবং তা সমূলে বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপরে সোচ্চার পূর্বাঞ্চলবাসী। বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাস এলে মেয়ের বাবা তার স্বামীর বাড়িতে বেশি বেশি করে আম-কাঁঠাল পাঠাতে হবে। স্বামীর পরিবার এটা বাধ্যবাদকতা করে দিয়েছে বহু আগে থেকে। তবে এই প্রথা ধনী পরিবারের জন্য আনন্দের আর গরিব পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক।
আম-কাঁঠালী এ রেওয়াজ বা প্রথাটা মনে হয় বাংলাদেশের অন্য কোথাও চালু নেই। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর সিলেটের শহর, বন্দর কিংবা পল্লী-গাঁয়ের আনাচে-কানাচে ওই প্রথাটা চালু আছে। যার ফলে ধনী পরিবার প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আনন্দ চিত্তে অনায়াসে মেয়ের স্বামীর বাড়িতে আম-কাঁঠাল পাঠিয়ে দেয়। যাতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে গরিব পরিবার তথা নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য তা দেয়া কষ্টদায়ক ও অভিশাপস্বরূপ।
মেয়ের বিয়ে হলেই রমজানে তার স্বামীর বাড়ি ইফতারি দেয়ার মতো বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আম-কাঁঠাল দেয়ার বিপদটা চেপে বসে মেয়ের বাবার ওপর।
মৌসুম আসার সাথে সাথে স্বামীর পরিবার মেয়ের পরিবারকে আম-কাঁঠাল পাঠাতে বারবার চাপ প্রয়োগ করে থাকে। এ সময় মেয়ের পরিবারকে স্বামীর পরিবারের কর্তা তাও বলে দেন যে, আমার আত্মীয়-স্বজন (কুটুম) খুব বেশি আম-কাঁঠাল বাড়িয়ে দেবেন কিন্তু। নইলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। মেয়ের পরিবার ধনী হলে তা সাথে সাথে পাঠিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে মেয়ের পরিবার গরিব হলে বিপত্তি। তখনই উভয় পরিবারে মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ। পরে মেয়ের অভাবগ্রস্ত পিতা বাধ্য হয়ে মেয়ের সুখের কথা ভেবে ধারকর্জ করে আম-কাঁঠাল পাঠাতে বাধ্য হন।
বলা বাহুল্য, আম-কাঁঠালী বলতে শুধু আম আর কাঁঠাল সীমাবদ্ধ নয়। এগুলোর সাথে যোগ হয় আনারস, লিচু, আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, লটকন, তরমুজ ও মিষ্টান্ন দ্রব্যসহ বিভিন্ন স্বাদের পানীয়। একেকটি পরিবারকে প্রতিবারে আম-কাঁঠাল দিতে অবস্থা বুঝে ২০-৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়। অভাবগ্রস্ত পরিবারের বাবারা ঋণ টানতে টানতে একসময় নিঃশেষ হয়ে যান।
সচেতন নাগরিকদের মতে, পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর সিলেটে ইফতারিসহ আম-কাঁঠালী প্রথা জঘন্য অপরাধ। এ প্রথাটি চিরতরে বন্ধ হোক এটাই কামনা করেন তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পড়লে শিগগিরই বন্ধ হবে ইফতারিসহ আম-কাঁঠালী প্রথাটি।

 


আরো সংবাদ



premium cement