২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বর্ণপদকের ডাবল হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের ভিন্নরকম একটি দিন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অন্নপুর্না পর্বতের উচ্চতা প্রায় চারহাজার ফুট উপরে। সকালের সুর্যের আলোতে চিক চিক করছিল পর্বতের চূড়া। সারা পৃথিবীতে এমন দৃশ্য বিরল। রোববার সেটিকেও যেন হার মানালো বাংলাদেশ আরচারির ছয় সৈনিক এবং মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যরা। শুধু সাত স্বর্ণপ্রাপ্তিই নয় আজ আরচারির আরো চারটি ইভেন্টে জিততে পারে স্বর্ণ। সুযোগ থাকছে ব্যাক্তিগতভাবে রুমান সানা, ইতি খাতুনের হ্যাটট্রিক স্বর্ণপদকের।

কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের ২০ টি ডিসিপ্লিনের মাঝে এসেছে পাচটি স্বর্ন। কারাতে থেকে তিনটি, তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিং থেকে একটি করে। এদিকে পোখারায় পাচটি ডিসিপ্লিনের মাঝে এখন পর্যন্ত পদক এসেছে ৯টি। ভারোত্তোলনে দুটির পর গতকাল আরচারি থেকে ছয়টি ও মেয়েদের ক্রিকেট থেকে একটি। ২০১৬ সালে পদক ছিল মাত্র চারটি। ২০১০ সালে ঢাকার আসরে পদক ছিল ১৮টি। আট দিন শেষে গেমসে বাংলাদেশের মোট স্বর্ণ পদক এখন ১৪। গেমসের বাকি রয়েছে আর দু’দিন। হাতছানি দিচ্ছে আরেকটি রেকর্ডের। এবারের গেমসে আর মাত্র চারটি স্বর্ণ দূরে সেই রেকর্ড স্পর্শ করতে।

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ১৪ স্বর্ণ জয়ের পর খানিকটা নির্ভার, ‘আমরা এ রকম কিছুই প্রত্যাশা করেছিলাম। আরচ্যারি, বক্সিং, কুস্তি, পুরুষ ক্রিকেটের স্বর্ণের লড়াইয়ে রয়েছি আমরা। আশা করি আরো বেশ কয়েকটি স্বর্ণ আসবে।’

অন্নপুর্না পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত পোখারা রঙ্গশালা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। যেখানে এসএ গেমসের ক্রিকেট, আরচারির ফাইনাল। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরিবেশ উধাও হয়ে গেল বাংলাদেশ অ্যাথলেটদের মনের জোর এবং আত্মবিশ্বাসের কাছে। পদক জয়ের পথে ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত হতে লাগলো প্রকৃতি ও পরিবেশ। এমন আলোর ছটায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট। উপমহাদেশের ইতিহাসে একদিনে এক ইভেন্ট থেকে ছয়টি স্বর্ণপদক জয় করে বিরল কৃতিত্ব স্থাপন করলো দেশের অ্যাথলেটরা। স্বর্ণের ডাবল হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হলো।

আরচারি গ্রাউন্ডের পাশেই ক্রিকেট স্টেডিয়াম। শুধু আরচারিই নয়- বাংলাদেশের মেয়েরা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে উপহার দিয়েছে আরো একটি স্বর্ণ। দুই মাঠেই বাংলাদেশের সাপোর্টারদের আনন্দের ধ্বনি শুনা যাচ্ছিল। কেউ কি কল্পনা করেছিল এমন দিন আসবে বাংলাদেশের। হেসেছে পোখারা, হেসেছে বাংলাদেশ। যেখানে পোডিয়ামে একবার জাতীয় সঙ্গীত বাজার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর। সেখানে একদিনেই এক মঞ্চে সাত সাতবার বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজা চাট্টিখানি কথা নয়।

একদিনে সাত স্বর্ণপ্রাপ্তিতে খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন ফেডারেশন ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের উতসবের প্রকাশটা ছিল কিছুটা ভিন্ন। খেলোয়াড়দের মতো হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপারটা ছিল না। বিওএ সহ সভাপতি বশির আর মামুনকে যেমন মাঠের পাশে থেকে ‘কামন গার্লস’, ‘গুড ফিল্ডিং’, ‘ক্যাচ ইট’ বলতে শুনা গেছে তেমনি আরচারির সেক্রেটারি রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলকে দেখা গেছে স্বর্ণজয়ীদের জড়িয়ে ধরে সাবাশী দিতে। কিংবা হ্যাটট্রিক স্বর্ণের আগে টেনশানে খেলাই দেখেননি। বসেছিলেন অফিসের পিছনের বারান্দায়। শেফ দ্যা মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর স্বভাবসুলভ হাসিতেই ছিলেন। মনে মনে ভাবছিলেন একটি স্বর্ন যদি হ্যান্ডবল থেকে পাওয়া যেতো। তবে বাংলাদেশ পুরুষ হ্যান্ডবল দল পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। বিওএ উপমহাসচিব আশিকুর রহমান মিকুর আনন্দের মাঝে নিজের ডিসিপ্লিন ভলিবলের কথাও হয়তো মনে পড়েছে। বিওএ সদস্য এবং বাস্কেটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকারের হয়তো কোন জায়গায় খটকা ছিল।

বাংলাদেশ আরচারি দল গতকাল দলগত ৬ টি ইভেন্টের মধ্যে ৬ টি গোল্ড মেডেল জয় করেছে। আজ একক ইভেন্টে ৪টি গোল্ড মেডেল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আরচারি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় দিনে রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশের মো: রুমান সানা, মোহাম্মদ তামিমুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হাকিম আহমেদ রুবেল ৫-৩ সেট পয়েন্টে শ্রীলংকাকে, মহিলা ইভেন্টে ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায় ৬-০ সেট পয়েন্টে শ্রীলংকাকে, রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে রুমান সানা ও মোসাম্মৎ ইতি খাতুন ৬-২ সেট পয়েন্টে ভূটানকে, কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টের ফাইনালে  সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ২২৫-২১৪ স্কোরে ভূটানকে, মহিলা দলগত ইভেন্টে ফাইনালে সুস্মিতা বনিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায় ২২৬-২১৫ স্কোরে শ্রীলংকাকে এবং সর্বশেষ কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে ফাইনালে সোহেল রানা ও সুস্মিতা বনিক জু্িট ১৪৮-১৪০ স্কোরে নেপালের প্রতিযোগিকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন।

কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল জানান, ‘অধ্যাবসায়, কম কথা বলা, নিয়মিত প্রশিক্ষনে ধীরে নিজেকে তৈরি করার ফসল এই পদক। আমি কখনো আগ বাড়িয়ে বলিনা এটা করবো, ওটা জিতবো। ফল হলে সবাই দেখবে। বিশ্বাস আছে তীরন্দাজদের প্রতি। তারা দেশকে নিরাস করেনি বরং উতসাহ দিয়ে গেছে পরবর্তী প্রজন্মেকে।’


আরো সংবাদ



premium cement
দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

সকল