থাইল্যান্ডের একটি গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে বের করে আনার অভিযান শুরু হয়েছে রোববার। এখন পর্যন্ত চার কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি এই নয়জনকে উদ্ধারেও গতকাল অভিযান শুরু হয়েছে।
বন্যার পানিতে নিমজ্জিত গুহার একটি শুকনো উঁচু জায়গাটিতে দুই সপ্তাহ ধরে এই দলটি অবস্থান করে। গত ২৩ জুন গুহাটি দেখতে গিয়ে আটকে পড়ে ওই কিশোররা এবং তাদের কোচ। তাদের নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১০ দিন পর প্রথম ওই শিশুদের খুঁজে পেয়েছিল ব্রিটিশ ডুবুরিরা।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ১৩ বিদেশী ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অভিজাত শাখা থাই নেভি সিলের পাঁচ সদস্য এই উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে প্রথম, ৫টা ৫০ মিনিটে দ্বিতীয় ও এর ১৬ মিনিট পর তৃতীয় কিশোরকে গুহার ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে আসা হয়। প্রথম দিনের অভিযানে মোট চারজন কিশোরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আটকে পড়া বাকি সদস্যদের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বের করে আনা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঝুঁকির কথাও অস্বীকার করছেন না কর্তৃপক্ষ। তারা কেন গুহার ভেতরে গিয়েছিল এখনো পর্যন্ত এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ১২ কিশোর ফুটবলার তাদের টিমের কোচসহ গুহার ভেতরে গিয়েছিল ২৩ জুন। কিশোর ছেলেরা ফুটবল প্র্যাকটিস করতে সকাল ১০টার দিকে ন্যাশনাল পার্কে গিয়েছিল। তারপর তাদের সহকারী কোচ একাপোল ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিও পোস্ট করেছিলেন সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফুটবল দলটি গুহার ভেতরে ঢোকার পর থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হতে শুরু করে। সেখানে জমে যাওয়া জঙ্গলের পানিও ঢুকে যায় গুহার ভেতরে। পানি এত বেড়ে যায় যে একপর্যায়ে গুহায় প্রবেশের মুখও বন্ধ হয়ে যায়। গুহার ভেতরে পানির উচ্চতা খুব দ্রুত বেড়ে গেলে কোচসহ কিশোর ফুটবলাররা ভেতরে আটকা পড়ে যায়। আরো উঁচু জায়গা খুঁজতে খুঁজতে তারা চলে যায় গুহার আরো গভীরে। থাম লুয়াং নামের গুহাটি ১০ হাজার ৩১৬ মিটার লম্বা। থাইল্যান্ডে যত গুহা আছে, দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে এটি চতুর্থ। ৭ জুলাই স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারীরা গুহার ওপরের পাহাড়ে এমন একটি সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন যা দিয়ে কিশোররা যেখানে আছে সেখানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। তখন নতুন করে আশার সৃষ্টি হয় যে কিশোরদের হয়তো এই সুড়ঙ্গ দিয়ে বের করে আনা সম্ভব হতে পারে।
এই গুহাটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে অনেক গল্প চালু আছে। এর নামকরণ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। গুহাটির নাম থাম লুয়াং-খুনাম নাং নন। এর অর্থ হলো-পাহাড়ের ভেতরে বিশাল এই গুহায় ঘুমিয়ে আছেন একজন নারী। এই পাহাড়েই জন্ম হয়েছে এক নদীর।
দক্ষিণ চীনের চিয়াং রুং শহরের এক রাজকন্যা একজন অশ্বারোহী পুরুষের সাথে সম্পর্কের পর গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারা তখন সমাজের ভয়ে ভীত হয়ে শহর থেকে পালিয়ে দক্ষিণের দিকে চলে আসেন। যখন তারা এই পাহাড়ি এলাকায় এসে পৌঁছান তখন রাজকন্যার প্রেমিক তাকে বলেন সেখানে বিশ্র্রাম নিতে। তিনি খাবারের সন্ধানে বের হয়ে যান। তখন রাজকন্যার বাবার লোকেরা তাকে দেখতে পায় এবং তাকে হত্যা করে। রাজকন্যা সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করে তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি যখন নিশ্চিত হন যে তার প্রেমিক আর ফিরে আসবে না তখন তিনি তার চুলের একটি ক্লিপ নিজের পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। তারপর তার লাশটি তখন একটি পর্বতে পরিণত হয় এবং তার শরীর থেকে যে রক্ত ঝরেছিল সেটি প্রবাহিত হয়ে নাম মায়ে সাই নামের এক নদীর জন্ম হয়।
স্থানীয় বান জং গ্রামের একজন নেতার বরাত দিয়ে স্থানীয় থাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ১৯৮৬ সালে এই গুহার ভেতরে একজন বিদেশী পর্যটক নিখোঁজ হয়েছিলেন। সাত দিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে নিরাপদে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় কোনো বন্যা ছিল না।
চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকও ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ওই গুহার ভেতরে নিখোঁজ হন। তিন মাস তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় একটি পত্রিকা বলছে, চীনা ওই শিক্ষক ন্যাশনাল পার্কের একটি দোকানে তার সাইকেল জমা রেখে দোকানদারকে বলেছিলেন তিনি মেডিটেশন বা ধ্যান করার জন্য গুহার ভেতরে যাচ্ছেন। তখন তার খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। গুহার ভেতরে তাকে পাওয়া না গেলেও তিন মাস পর তাকে পাশের একটি অবকাশ কেন্দ্রে পাওয়া যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা