২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অধ্যাপক সৈয়দ আলী আশরাফের জন্মবার্ষিকী আজ

অধ্যাপক সৈয়দ আলী আশরাফ - ছবি : সংগৃহীত

স্বাধীনতা উত্তর বাংলা সাহিত্যে ‘বিশ্বাসী নান্দনিকতা’র অগ্রদূত কবি ও গদ্যশিল্পী সৈয়দ আলী আশরাফ। সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্যে বিশ্বাসের যে অনুরণন সৃষ্টি করেছেন পরবর্তীতে তা অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ পরবর্তী কাব্যধারায় আধুনিকতার ভেলকিবাজিতে যে ‘লিভারপুল কবিকুল’ তৈরি হয়েছিল, যারা কবিতা ও সাহিত্যে অবিশ্বাস, অবক্ষয়, নৈরাজ্য ও নাস্তিকতাকে শিল্প করতে চেয়েছেন সৈয়দ আলী আশরাফ সেখান থেকে পাশ কাটিয়ে শিকড়ের টানে ফিরে যান বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের কাছে। গড়ে তোলেন আপন কাব্যভূবন। ত্রিশের পাঁচ বিখ্যাত সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সত্তর দশকের শেষ অবধি বাংলা কবিতা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আধুনিকতার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে ভুলে যায় শেকড়ের টান। বিশ্বাসের স্তুতি। এই কারণেই উত্তর আধুনিক বাংলা সাহিত্যে প্রধান অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সৈয়দ আলী আশরাফ ছিলেন মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান ও শিক্ষার ইসলামীকরণের আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজসহ বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিক্ষা ও সাহিত্যে তার বিশেষ অবদানের উপর বিদেশে দু’টি পিএইচডি থিসিসসহ ইতোমধ্যে তিনটি পিএইচডি এবং দু’টি এমফিল থিসিস রচনা করা হয়েছে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ ইসলামিক অ্যাকাডেমি থেকে ড. শেখ আবদুল মাবুদ সম্পাদিত দু’টি স্মারক ভলিওম প্রকাশ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আশরাফ ১৯২৫ সালে ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী জেলার নবাবগঞ্জে আগলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা শহরেই পার করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান বিদেশে। সেখানে ভর্তি হন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ফিটজউইলিয়াম কলেজ (কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) থেকে অনার্স এবং পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শুরু করেন চাকরি জীবন, তারপর ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৯৭৪ সালে ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মক্কায় অবস্থিত বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জেদ্দায় বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি ১৯৮০ সালে ওআইসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের মহা-পরিচালক হন। তিনি ক্যামব্রিজের ইসলামিক অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও মহা-পরিচালকও ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর আগ পর্যস্ত তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট, শুক্রবার সকালে কেমব্রিজের নিজ বাস ভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরবর্তিতে ৮ আগষ্ট ঢাকার সাভারে দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে তাকে দাফন করা হয়।

সৈয়দ আলী আশরাফ শুধু কবিতা, গদ্য, অনুবাদ, ভ্রমণ বিষয় লেখেননি, লিখেছে অগণিত ইংরেজী প্রবন্ধ। যা দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে,

তার প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থ-কবিতা : চৈত্র যখন (১৯৫৭), বিসংগতি (১৯৭৪), হিজরত (১৯৮৪), রূবাইয়াতে জহীনি (১৯৯১), প্রশ্নোত্তর (১৯৯৬)। অনুবাদ : ইভানকে ক্লেয়ার গল (অনুবাদ : ১৯৬০), প্রেমের কবিতা (সৈয়দ আলী আহসানের সাথে যৌথ)। গদ্যগ্রন্থ : কাব্যপরিচয় (১৯৫৭), নজরুল জীবনে প্রেমের এক অধ্যায়, রূপ বাংলা (১৯৯৫), বাংলাসাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য (১৯৬২), সংসদ যুগ : পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের ইতিকথা, অন্বেষা (আধ্যাত্মিক জীবনের বর্ণনা), সাহিত্য বিচার, কাব্যসংকলন (১৯৬৭)।

সৈয়দ আলী আশরাফের কবিতা (১৯৯১)। ইংরেজীতে : Ed. The other Harmony, Muslim Tradition in Bengali Literature (১৯৮২), Literature, Society and Culture (১৯৪৭-১৯৭২), Muslim Education: Aims and Objectives of Islamic Education: Curriclum and teacher Education-etc.

তার সম্পাদনায় বাংলাসাহিত্যে প্রথমবারের মতো সংকলিত হয় ‘হামদ : আল্লাহর প্রশস্তি কবিতা’ এবং কবি ইশারফ হোসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘রসুল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা’ সংকলনের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও উৎসাহ দাতা।

এছাড়া তিনি ‘দিলরুবা’ সাহিত্য পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে কবি ও প্রাবন্ধিক খোরশেদ মুকুল লিখিত ‘কবি ও গদ্যশিল্পী সৈয়দ আলী আশরাফ’ নামে একটি গ্রন্থ অচিরেই প্রকাশ করবে, ইনশাআল্লাহ।

জন্মদিনে এই মহামনীষীকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। এ বছর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতিষ্ঠিত আশরাফ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও দারুল ইহসান ট্রাস্ট, সাভারস্থ মাদরাসা তাফিজুল কুরআনুল করিমসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
সবার আগে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের মার্কিন ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার ৯০০ নির্বাচনের আগে ‘সিএএ’ চালু করে ভোট টানার কৌশল ব্যর্থ বিজেপির ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ পালনের আহ্বান কানাডায় বেকারত্ব বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে রাফাতে ইসরাইলি হামলায় এক পরিবারের ৯ সদস্য নিহত আজ ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতারের মধ্যেই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত হলান্ডের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ম্যানসিটির জয় হাম্বানতোতা বিমানবন্দরের ‘দখল’ ভারত ও রাশিয়ার! ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার অভিনেত্রীর লাশ, পাওয়া গেছে রহস্যজনক হোয়াটসঅ্যাপ নোট

সকল