০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পচা শামুকেও পা কাটে

-

জনৈক রাজপুত্র সম্পর্কে শুনেছি যে, সে খাটো ও অত্যন্ত কুশ্রী ছিল। তার অন্য ভাইয়েরা ছিল লম্বা ও সুশ্রী। একদা রাজা অপছন্দনীয় ও তাচ্ছিল্যভাবে তার দিকে তাকালেন। কিন্তু ওই রাজপুত্র ছিল জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। ফলে স্বীয় বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে পিতার তাচ্ছিল্যভাব বুঝে ফেলল এবং আদবের সাথে বলল, হে পিতা! খাটো, কুশ্রী জ্ঞানী অধিক শ্রেয়, অযোগ্য, নাদান সুশ্রীর তুলনায়। কারণ এটা জরুরি নয় যে, যে জিনিস পরিমাপে বড় হবে তা মূল্যেও চড়া হবে। কথায় আছে, আরবি ঘোড়া যতই দুর্বল ও চিকন হোক না কেন, তথাপি শক্তিশালী গাধার দল থেকে ভালো। রাজপুত্রের এই অমূল্য বাণী শুনে রাজা হেসে দিলেন। রাজদরবারের সবাই খুশি হলেন। কিন্তু তার অন্য ভাইয়েরা তার কথায় মনোক্ষুণœ হলো। এই জন্যই জ্ঞানীগণ বলেন, কোনো মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দোষ ও গুণ গোপন থাকে। প্রত্যেক জঙ্গলের ব্যাপারে এই ধারণা পোষণ করা উচিত নয় যে, এটা নিরাপদ। এমনো হতে পারে যে, সেখানে হিংস্র প্রাণী ঘুমিয়ে আছে। শেখ সাদী বর্ণনা করেন, কিছু দিন পর রাজার শত্রুরা তার রাজ্যের ওপর আক্রমণ করার উপক্রম হলো। শত্রু দল যখন চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলল এবং আক্রমণ করতে আরম্ভ করল। তখন তাদের মোকাবেলা করার জন্য সর্বপ্রথম রণক্ষেত্রে যে বীর পুরুষ অবতরণ করল সে আর কেউ না, সে হলো রাজার কুশ্রী পুত্র। রাজপুত্র নির্ভীকতার সাথে যুদ্ধ ময়দানে নামল এবং বলতে লাগল, আমি ওই কাপুরুষ নই, যাকে যুদ্ধের ময়দান থেকে তোমরা পালাতে দেখবে। বরং আমি ওই ব্যক্তি যে যুদ্ধ করতে করতে নিজের মস্তক দিয়ে দেবো। এটা বলে প্রবল গতিতে শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ করল এবং শত্রু দলের কয়েকজন শক্তিশালী বীরকে প্রতিহত করল। যখন পিতার সামনে এলো তখন পিতার পায়ে চুম্বন করে বলতে লাগল, হে মহান ব্যক্তি! আপনি আমাকে তুচ্ছ ভেবেছিলেন। কিন্তু স্মরণ রাখবেন, মোটাতাজা শরীর দেখলেই ভালো ও জ্ঞানী ভাববেন না। কেননা রণাঙ্গনে দুর্বল ঘোড়াই উপকারে আসে। আর মোটাতাজা প্রতিপালিত গাভী কোনো কাজে আসে না। বর্ণিত আছে যে, শত্রু দলের সদস্য ছিল অসংখ্য আর এরা ছিল স্বল্পসংখ্যক। রাজার দলের কিছু সদস্য সাহস হারিয়ে পলায়ন করতে চাইল। তখন রাজপুত্র সেøাগান দিয়ে বলে উঠল, হে যোদ্ধারা! তোমরা স্বরাষ্ট্রের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাও। শত্রুদের ভয়ে মহিলাদের বেশ ধরো না। তার কথা শুনে আরোহীদের সাহস বেড়ে গেল এবং সবাই একসাথে শত্রু দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তুমুল লড়াইয়ের পর রাজার সৈন্যরা বিজয়ী হলো এবং শত্রুদের উপযুক্ত শিক্ষা দিলো। রাজা এই দৃশ্য দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তার কুশ্রী পুত্রকে চুম্বন করে বুকে জড়িয়ে নিলেন। তারপর থেকে রাজা তার খাটো পুত্রকে অধিক মহব্বত করতেন এবং নিজের কাছে রেখে দিলেন। এমনকি কিছু দিন পর রাজা তাকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করলেন। কিন্তু এটা দেখে রাজার অন্য পুত্ররা সহ্য করতে পারল না এবং সুযোগ বুঝে একদিন তার কুশ্রী ভাইয়ের খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলো। তাদের এই কুকর্ম তাদের এক বোন ঘরের জানালা দিয়ে দেখে ফেলল। রাজপুত্র যখন খাবারের টেবিলে বসল তখন তার প্রত্যক্ষদর্শী বোন কৌশলে জানালা আঘাত করল। আর এতে রাজপুত্র তাদের চক্রান্তের কথা বুঝতে পেরে খাবার থেকে বিরত থাকে আর বলে, এটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় যে, জ্ঞানীরা মারা যাবে আর মূর্খরা রাজত্ব করবে। রাজা যখন তাদের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন তখন অন্য পুত্রদের ডেকে উপযুক্ত শাস্তি দিলেন। আর প্রত্যেককে তাদের মর্জি মোতাবেক রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নিযুক্ত করলেন যাতে করে পরবর্তীতে কোনো প্রকার ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। কেননা প্রবাদ আছে, দশজন ফকির একই কম্বলের নিচে ঘুমাতে পারে, কিন্তু দু’জন রাজা একই রাজ্যে রাজত্ব করতে পারে না। সাধকগণ অর্ধেক রুটি নিজে আহার করেন। অপর অর্ধেক নিঃস্বদের মাঝে বিতরণ করে দেন। আর রাজা যদি একটি রাজ্য বিজয় করেন তাহলে আরেকটি রাজ্য বিজয় করার আশায় থাকেন।


আরো সংবাদ



premium cement