০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জীবন থমকে আছে একটি লাল সিগন্যালে

-

বছর ঘনিয়ে গেল। মহামারী আর থামার নামগন্ধ নেই। তবে আমাদের জীবন থমকে আছে। ঠিক যেন একটি সিগনালে, যেখানে লাল রঙটি দিব্যি জ্বলে আছে। সবুজ রঙটির জন্য আমরা প্রাণপণে অপেক্ষা করছি কিন্তু সিগনাল ছাড়ছে না। ঠিক যেন মাঝপথে সব থমকে আছে। এ যেন এক ভাষাহীন গল্প। এই ভাষাহীন গল্পের মঞ্চে অভিনয় করে যেতে হচ্ছে আমাকে এবং আপনাদের। যথাসময়ে যা হবার কথা ছিল তা হয়ে আর উঠল না। কে জানে হয়তোবা এই মহামারী শেষ হওয়ার আগে আমিইবা না আপনি শেষ হয়ে যাই। গত মহামারীতে যে লিখা শুরু করে শেষও করে ফেলেছিলাম। বছর ঘনিয়ে আদৌ সেই মহামারী লেখাগুলোকে ছাড়েনি। নতুন করে আর তেমন কিছু লেখার শক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। ভাবছি আরেকটা বইয়ের কাজ না হয় শুরু করলাম। তাতে কি! আমার পুরনো লেখার কপি তো এখনো সেই ঘরের এক কোণেই পড়ে আছে। সেটা না ছাপাতে পারলাম। না পারলাম নতুন কোনো লেখার সন্দিহান করতে। পৃথিবীর এই অসুখ বোধয় একদিন সেরে যাবে। তবে হয়তো আমার মনের অসুখ আর দেহের অসুখ থেকে আমি আর পরিত্রাণ পেতে পারব না।
এই অসুখ যে আমার কতবড় ক্ষতি করে ফেলল তা হয়তো কারোর কল্পনারও বাইরে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, একদিন আমি আমার বইয়ের কপিটি হাতে চোখ ভরা অশ্রু ফেলতে ফেলতে বাড়ি যাই। তার কারণটি না হয় অজানা থাক। তবে আমি যদি কখনো অনেক বড় কিছু লিখে ফেলি। আমি আমার সেই একলা চলা দিনটির কথা ভুলব না।
আমি নিজেকে আসলে লেখক হিসেবে দাবি করি না। যার লেখাই ছাপা হয়নি সে আবার কেমন লেখক। তবে সেটাও ভুলে গেলে চলবে না লেখকের সব সমগ্রতা তার পাঠকদের ঘিরে। লেখা ছাপা হয়নি তাতে কোনো কষ্ট নেই। তবে আমার সেই যতেœ গড়া লেখা কয়েকটা মানুষ পড়ার আগ্রহে দিন গুনছে তা ভেবে বড় আফসোস হয়। তবে সে আফসোস পাঠকদের ঘিরে নয়। নিজেকে ঘিরে। বড় একটা দায় মাথার উপর চেপে আছে বোধহয়। মাঝে মধ্যে নিজের গড়া শব্দগুলোকে বড় অসহায় মনে হয়। ছাপার আগেই যে শব্দগুলোতে ধুলাবালি জমে একাকার হয়ে থাকবে তেমনটা তো হবার ঠিক কথা ছিল না।
ভেবেছিলাম এই বছরটি গত তিনটি বছরের মতো পানসে হলেও শুধু আমার এই বইটি ছাপানোর আনুষ্ঠানিকতায় জীবনের শ্রেষ্ঠ বছর হিসেবে জায়গা দখল করে নিবে। তবে আমি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি পৃথিবী ঘেরা এই মহামারী আমার ক্ষুদ্র যতেœ লেখা প্রচেষ্টাকেও ঘিরে ফেলবে।
ছোটবেলায় আমরা অনেক ধরনের গল্প শুনেছি। এক দেশে ছিল এক রাজা। তার ছিল অনেক প্রজা। তার প্রসাদ ছিল সুখে শান্তিতে ভরা। আসলে কি এই জীবনে কোনো গল্পের শেষ ঠিক এইভাবে হয়েছে? নাকি আমাদের কোনো গল্প ঠিক সেই রাজার রাজপ্রাসাদের মতো। বাস্তব জীবনে তো রাজার প্রাসাদ দূরে থাক চারদিকে শুধু আমি হাহাকার দেখি। মানুষের হাহাকার, দম বন্ধ হয়ে যাবার হাহাকার, কোনো পথ না খুঁজে পাওয়ার হাহাকার। এগুলো কি আদৌ বইয়ের কোনো গল্প? এই গল্পগুলো তো কোথাও কোনো বইতে কেউ লেখেনি। আর লিখলেও সেগুলো তো সামান্য কোনো গল্প নয় যা আমরা গল্প নামে শুনি বা পড়ি। রাজার রাজপ্রাসাদ একটি গল্প। তবে আমাদের জীবন কোনো গল্প নয়। পৃথিবী নামক বইয়ের মলাটে আমাদের এই অধ্যায়গুলো চাপা পড়ে গেছে। যার আমরা গল্প নাম দিয়েছি। সেই গল্প যে গল্পগুলো শুনতে চাইলেই হাসিমুখে বলা যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement