০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চামড়া শিল্প এখন ‘দায় না সম্পদ’?

-

চামড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি শিল্প। তবে রফতানিমুখী এ শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। উদ্বেগের বিষয়, এ শিল্প থেকে গত দুই বছরে অব্যাহতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমছে। কাঁচামালের সহজ লভ্যতার পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়ের অন্যতম বড় উৎস চামড়া শিল্প। কিন্তু এ সত্য শুধু কাগজে কলমেই। বাস্তবতা হলো, নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ এখন প্রতি মাসে আমদানি করছে প্রায় ৫০ লাখ বর্গফুট চামড়া। করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের চামড়াই আজো প্রক্রিয়াজাত করা যায়নি। এতে সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যাচ্ছে। নতুন চামড়া সংরক্ষণে স্থান সঙ্কট রয়েছে। অনেক ট্যানারি এখনো উৎপাদনে যায়নি। এসব কারণে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে। এ দিকে এবার দেশে ৫০ শতাংশ কোরবানি কম বলে শঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে সংখ্যায় কমেছে। ৭০ লাখ গরু জবাই হবে বলে ধারণা করা হলেও হয়েছে ৫০ লাখের মতোÑ এ দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাগল ২০ লাখ জবাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংখ্যায় কম কোরবানি হলেও পশুর চামড়া নিয়ে ঠকবাজি একটু বেশিই হয়েছে। দাম না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ঘটনা আগাম আঁচ করতে পেরে অনেকে কোরবানির চামড়া মাদরাসা, এতিমখানায় দান করেছেন। সরকারিভাবেই এবার কমিয়ে দেয়া হয়েছে গরু-ছাগলের চামড়ার দর। বৈঠক করে এ দাম জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত বছরের চেয়ে কমিয়ে এবার ঢাকার জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তা গত বছর ঢাকায় ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অন্য দিকে খাসির চামড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়ার দামসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলাপ করে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বছর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য এবং নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে কী হলো? আড়তদার সরকারের ধরে দেয়া দামের অর্ধেকে বা পারলে পানির দরে হাতিয়ে নেয়ার মওকা পেয়েছেন। আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা বলেছেন, চলতি বছর গতবারের চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম চামড়া আসবে। তাই চামড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। তার পরও চামড়ার দাম কম হওয়ার পেছনে ‘পুরোনো যুক্তি’ই দেখানো হচ্ছে।
‘সোনালি আঁশ’ নামের পাটশিল্প শেষ হয়েছে আগে। বিদেশে একসময় বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এ দেশের কৃষি খাত বিশেষ করে ধান ব্যবসাও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক, তৈরি হয়েছে বহু সঙ্কট। চা শিল্প টিকে আছে কোনো মতে। গার্মেন্ট শিল্প যায় যায়। প্রায় একইভাবে চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শিল্পটি বিপন্ন হতে চলেছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সাথে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। এ দুইয়ের কারসাজিতে চামড়া শিল্প আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চামড়া শিল্পে সঙ্কটের নেপথ্যে রয়েছে ২৯টি কারণ। কারণগুলো হচ্ছেÑ ১. সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ২. সাভারে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণকাজ শেষ না করে কারখানা স্থানান্তর, ৩. সাভারে ট্যানারি পল্লীতে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন না করা, ৪. নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও সময়মতো গ্যাস সংযোগ দিতে না পারা, ৫. লোডশেডিং, ৬. জেনারেটর ব্যবস্থা ভালো না হওয়া, ৭. সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা, ৮. চামড়া কাটার পর বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে সেটি নির্ধারণ করতে না পারা, ৯. জমির দলিল হস্তান্তরসহ নানা বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সরকারের দূরত্ব, ১০. তিন বছরেও চামড়া শিল্প নগরীতে সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারা, ১১. কারখানা স্থানান্তরের পরও অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে না পারায় রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়া, ১২. হাজারীবাগে ২০৫টি কারখানা থাকলেও সাভারে মাত্র ১৫০টি প্লট বরাদ্দ দেয়া, ১৩. প্লট না পাওয়া ৫৪টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় এসব কারখানার শ্রমিকদের বেকার হয়ে যাওয়া, ১৪. অবৈধ পথে চামড়া পাচার, ১৫. বিশ্ববাজারের দরপতনে দেশের চামড়া শিল্পের অবস্থান আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল হয়ে যাওয়া, ১৬. একটানা কয়েক বছর ধরে চামড়া রফতানি আয় কমে যাওয়া, ১৭. আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে পণ্যের আধুনিকায়ন না করা, ১৮. চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, ১৯. বিশ্ববাজারে চামড়ার জুতার পরিবর্তে সিনথেটিক বা কাপড়জাতীয় জুতার আগ্রহ বৃদ্ধি, ২০. চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়া, ২১. চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে না তোলা, ২২. ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কারখানার পরিবেশ উন্নত না করা, ২৩. পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, ২৪. পুঁজি সঙ্কট, ২৫. দক্ষ শ্রমিকের সঙ্কট, ২৬. গতবারের চামড়া আজো প্রক্রিয়াজাত করতে না পারা, ২৭. আগের বছরের সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যাওয়া, ২৮. নতুন চামড়া সংরক্ষণে স্থান সঙ্কট, ২৯. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বশেষ করোনা। এ দিকে প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত ২২ কোটি ঘনফুট চামড়ার প্রায় অর্ধেকই ব্যবহৃত হচ্ছে না রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনে। চামড়ার আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ-এলডব্লিউজির ছাড়পত্র না থাকাই এর মূল কারণ। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাভারে নতুন শিল্পনগরীই পারত সব সঙ্কটের সমাধান করতে, যদিও তাদের দাবি ‘বিসিকের গাফিলতিতে সঙ্কট বেড়েছে’ আরো।
গত বছরের কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য দেয়া প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণের বেশির ভাগই আদায় হয়নি। এবার কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক থেকে ট্যানারি মালিকদের এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত বছরের ঋণের অর্থ আদায় না হওয়ায় এ ঋণ বিতরণ নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
চামড়ার টাকাকে ‘গরিবের হক’ বলা হলেও দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। গরিব, এতিম ও মিসকিনদের পক্ষে কথা বলার লোক নেই। মন্ত্রী-সচিবরা কোরবানির আগে চামড়ার দাম ঠিক করবেন, কমিটি বানাবেন। আর ব্যবসায়ীরা তাদের মন-মর্জি মতো চামড়া কিনবেন। কোরবানির লাখ লাখ গরু-ছাগলের চামড়া নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ কোনোকালেই জোরালো ছিল না। গত কয়েক বছরে আরো বিশৃঙ্খলা যোগ হয়েছে। ঋণ দেয়া, সেল গঠনসহ অনেক কিছু শোনা গেলেও গোলমাল আরো পেকেছে। বছর কয়েক আগেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাড়ামহল্লায় চামড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। চামড়া নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হতো। মারামারিও হতো। কে কোন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে চামড়া কিনবে তা নিয়ে টেন্ডারবাজির মতো বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেত। দুই বছর ধরে তা কমে গেছে। এ সময়টায় তাদের অভিজ্ঞতা বড় খারাপ। হাতেগোনা যে ক’জন নেমেছেন তারাও বড় সাবধানী। দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম তারা পারলে মাত্র ২০০ টাকায় নিতে চান। দুই লাখ টাকার গরুর চামড়া ৩০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়নি ঢাকায়। ‘চাহিদা না থাকা’র গল্প শোনানো হচ্ছে মানুষকে। চাহিদা না থাকলে ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া রফতানির বিরোধিতা করেন কেন? জবাব নেই এ প্রশ্নের। চামড়া কেনার জন্য সরকারের দেয়া ঋণ কারা পেলেন, ঋণের টাকাটা কোথায় গেল, শোধ হলো কি না, এসব প্রশ্ন তলানিতেই চলে যায়। সামনে আসে না।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে চামড়া শিল্পকে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়ার সময় বলা হয়েছিলÑ ট্যানারিগুলো পরিকল্পিত শিল্পনগরে এলে বুড়িগঙ্গা দূষণ থেকে বাঁচবে। আর পরিবেশ দূষণের অপবাদ ঘুচিয়ে চামড়া হবে ‘কমপ্লায়েন্ট’। তখন বড় ব্র্যান্ডগুলোর আর বাংলাদেশী চামড়ায় তৈরি জুতা-ব্যাগ কিনতে কোনো দ্বিধা থাকবে না। চামড়া খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু, কী হয়েছে বাস্তবে? গতবার চামড়া কিনে পুঁজি হারানোর জেরে এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ছিলেন খুব সতর্ক। মাঠেই নামেননি অনেকে। এর পরও যারা নেমেছেন ‘ধরা কম খাননি’। করোনার কারণে কোরবানির পরিমাণ অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে চামড়ার যে পরিমাণ আমদানি তাতে প্রতীয়মান ঢাকায় গতবারের চেয়ে কোরবানি তত কম হয়নি। বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া গড়ে ২৫-৩০ বর্গফুট এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৬-২০ বর্গফুটের হয়ে থাকে। তাতে সরকারের নির্ধারিত দাম হিসাব করলে বড় চামড়া কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা, মাঝারি চামড়া হাজার টাকা এবং ছোট চামড়ার দাম হওয়ার কথা কমপক্ষে ৬০০ টাকা। তার থেকে প্রক্রিয়াজাত, শ্রমিকের মজুরি ও আড়তদারের মুনাফা বাদ দিলেও যা দাঁড়ায় তার কাছাকাছি দামেও চামড়া বিক্রি হয়নি।
গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চামড়ার অস্থায়ী বাজারে ছোট গরুর একেকটি চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা, মাঝারি গরুর চামড়া ৫০০-৬০০ এবং বড় চামড়া হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। ২৫০-৩০০ টাকার বেশি দামে কোনো চামড়া বিক্রি হয়নি। পরদিন লালবাগের পোস্তায় ১৫০-২০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করতেও কষ্ট হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ঢাকার বাইরে কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে চামড়া সড়কে ফেলে দেয়া ও পুঁতে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। গত বছর কোরবানির পশুর প্রায় ১ লাখ চামড়া সড়কে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তখন অভিযোগ উঠেছিল, আড়তদাররা ‘সিন্ডিকেট’ করে অস্বাভাবিক কম দামে চামড়ার দর নির্ধারণ করতে শুরু করেন এবং একপর্যায়ে চামড়া কেনা বন্ধ করে দেন। বাধ্য হয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তায় ফেলে দিয়ে চামড়া নষ্ট করেছিলেন। এবার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তেমন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কেন?
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ চামড়ার সব মোকামে অবস্থা কমবেশি একই। তবে সিন্ডিকেটের ধরনে একটু ভিন্নতা ছিল। চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আড়তদারের কাছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে এসে আশানুরূপ সাড়া পাননি অনেকে। অভিযোগ উঠেছে, আড়তদাররা উপজেলা থেকে আসা চামড়াগুলো কিনতে প্রথমে অনীহা দেখান এবং পরে অস্বাভাবিক কম দামে কিনতে সম্মত হন। কিন্তু লোকসান দিয়ে বিক্রি না করে বিক্রেতারা সেগুলো ফেলে দিয়েই চলে যান। পাল্টা দাবি ও যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন আড়তদাররা। তারা বলছেন, চামড়াগুলো আড়তে আনতে দেরি হওয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে জন্য তারা কিনতে অনীহা দেখিয়েছেন। এবার আরো কিছু ঘটনা রয়েছে। সারা দেশে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘কোনোভাবেই চামড়া না কেনা’র সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন আড়তদাররা।
চামড়ার দাম কম হলেও গরুর গোশতের কেজি ৬০০ টাকার নিচে নয়। একটি গরুর ভুঁড়ির দামই ১৫-১৬ শ’ টাকা। এমনকি গোবর মেশানো এক ব্যাগ মাটি বিক্রি হয় ২০০-২২৫ টাকায়। গরুর চমড়ায় তৈরি করা জুতা ব্যাগ, বেল্টের দাম জিজ্ঞাস করতেও সাহস লাগে। কেন এই প্রতারণা চামড়া নিয়ে? এসব প্রশ্নের জবাবে অবশ্য ‘অজুহাত’ রয়েছে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে। তারা বলতে চান, বহু ট্যানারির কাছে গত বছরের চামড়াই জমে রয়েছে। ইউরোপে মন্দার কারণে রফতানি আদেশ চার ভাগের মাত্র এক ভাগে নেমে এসেছে। ইউরোপে তিন ডলারের পণ্যের দাম নেমে গেছে দেড় ডলারে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে ফিনিশড লেদারের সবচেয়ে বড় বাজার চীনেও এ ব্যবসা থমকে গেছে। এ ছাড়া ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া ১৩০ টাকায়ও বেচাকেনা হয়েছে। এখন সেটা মাত্র ৩০ টাকায় নেমে এসেছে বিশ্ববাজারের দরপতনে। ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের শত শত কোটি টাকা বকেয়া পাওনা নিয়ে কী চলছে সে ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে রাখঢাক করছে সব পক্ষই। আবার দরপতনের সুযোগে দালাল, ফড়িয়া, ব্যাপারি, আড়তদার এমনকি এই খাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ট্যানারিগুলোর মুনাফা বাড়ার পথ উন্মুক্ত হলেও সবাই দায় নিতে নারাজ।
চামড়া সাধারণ কোনো শিল্প নয়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শিল্প। তাই এ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে সরকারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব এ শিল্পের সমস্যার সমাধান করা।হ
লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
হিলি বন্দর দিয়ে ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর : মন্ত্রী রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় ওআইসি’র সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টর্চার সেলে শিশু-বৃদ্ধদের পেটাতেন মিল্টন : হারুন গাজা ত্যাগ করবে না ইউএনআরডব্লিউএ শৈলকুপায় সাংবাদিক মফিজুলের ওপর হামলা : প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন বিএনপির ভাবনায় ক্লান্ত ওবায়দুল কাদের : রিজভী অনলাইন জুয়ায় ২০ লাখ টাকা হেরে যুবকের আত্মহত্যা আল-জাজিরার অফিসে ইসরাইলি পুলিশের হানা মালয়েশিয়ায় কাল বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্মেলন রাস্তা প্রশস্ত করতে কাটা হবে ৮৫৬টি গাছ

সকল