৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অনলাইনে ক্লাস : একজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি

-

করোনা মহামারীর কারণে গত চার মাসে পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনোভাবে পড়ালেখার পরিবেশ গতিশীল রাখতে পারলে করোনা মহামারীর দুর্যোগ মুহূর্তে অনেকাংশে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস একটি জুতসই মাধ্যম। তবে অনলাইনে ক্লাস করতে একজন শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোন এবং নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন। কিন্তু যে দেশের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করে, যাদের পরিবার অতিকষ্টে পড়ালেখার খরচ জোগায়, অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ বহন করে, সেখানে অনলাইনে ক্লাস করতে কতজন শিক্ষার্থী ওই সব সামগ্রী সংগ্রহ করতে সক্ষম, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
অনলাইনে ক্লাস করতে গেলে একজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। এ ছাড়া আছে খরচের বিষয়টি। ধরে নিলাম শিক্ষকরা হয়তো খরচ বহন করে নেবেন যেভাবেই হোক। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর পক্ষে কি এ খরচ বহন করা সম্ভব? যেখানে এই মহামারী পরিস্থিতিতে শত শত পরিবার আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত।
অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে চাই পাঠক ও সরকারের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে। বতর্মান কোম্পানিগুলো যে ইন্টারনেট রেট করেছে তাতে একজন শিক্ষার্থীর এক মাস ক্লাস করতে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার প্রয়োজন পড়বে; যার জোগান দিতে একটি পরিবারকে হিমশিম খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মেনে নিলাম, একবেলা না খেয়ে তবু অনলাইনে ক্লাস করবেন অনেক ছাত্রছাত্রী। কিন্তু বর্তমানে দেশের গ্রামপর্যায়ে ইন্টারনেটের যে গতি সেখানে এসেই সবাই ধরাশায়ী হয়ে পড়ছি আমরা। এত কম গতির ইন্টারনেট দিয়ে কোনোভাবেই অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব নয়।
আমার নিজের কথাই বলছি। দেশের একটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের ব্যাচে মোট ৪০ জন ছাত্রছাত্রী সেখানে অনলাইন ক্লাসে সর্বোচ্চ ১৫ জনও যুক্ত হতে পারেন না একমাত্র ইন্টারনেটের স্বল্প গতির কারণে। কারণ তারা বেশির ভাগই থাকেন গ্রামে। এ ছাড়া কয়েকজনের তো স্মার্ট ফোনই নেই। এ সমস্যা কাটাতে শিক্ষকরা ক্লাসের পর বঞ্চিতদের জন্য ফের পাঠ সৃষ্টি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে দিয়ে দেন। সেখান থেকে বঞ্চিতরা পাঠ বুঝে নিয়ে নিজেদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিচ্ছেন।
অনলাইন ক্লাসে ব্যবহৃত জুম, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, সিসকো ওয়েবেক্স, ওয়েবনার প্রভৃতি সফট ওয়ারের জন্য উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন। তুলনামূলক সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যবহৃত ইন্টারনেটের গতি কম হলেও চলে। ব্যান্ডউইথ কাক্সিক্ষত মানের না হওয়ায় লাইন বারবার কেটে যায়, ভিডিওসহ যুক্ত হওয়া যায় না। অথবা কথা কেটে কেটে শোনা যায়। এমন নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
আমি ব্যক্তিগতভাবে করোনাকালীন অচলাবস্থায় অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থার পক্ষে। কিন্তু ইন্টারনেট গতির কারণে যে বারবার হোঁচট খেয়ে কাজে বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে; এর আশু সমাধানে নজর দিতে সরকারকে নজর দিতে হবে। একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, কোনো শিক্ষার্থীই চান না সেশনজটে পড়ে পিছিয়ে পড়তে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তো নয়ই। কিন্তু বাস্তবতার কাছে হার মানতে হচ্ছে আমাদের। সরকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে ক্লাস ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো নিরসনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরছি। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয় সমাধান দেয়া হলে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম অধিকাংশে সফলতা অর্জন করবে বলে আমাদের ধারণা। বিবেচ্য বিষয়গুলো হলোÑ এক. অনলাইনে ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে অথবা সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজের ব্যবস্থা করা। যত দিন অনলাইনে ক্লাস চলবে তত দিন পর্যন্ত এই প্যাকেজ কার্যকর থাকতে হবে। দুই. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের যেন ন্যূনতম গতি থাকে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, মোবাইল অপারেটররা ঠিকমতো শিক্ষার্থীদের ব্যান্ডউইথ দিচ্ছে কি না। সরকার চাইলে খুব তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা করতে পারে। সরকার যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখতে চায় এবং শিক্ষার্থীর কল্যাণ চায় তা হলে অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধান করে তার পর অনলাইনে ক্লাসের চিন্তা করবে বলে আশা করি। নয়তো শিক্ষার্থীর উপকার শুধু কাগজ কলমেই থাকবে, উপকারের ছোঁয়াও লাগবে না।হ
লেখক : শিক্ষার্থী, রাবি


আরো সংবাদ



premium cement