২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুস্থ জীবনের মূলমন্ত্র

-

একদিন একটি ভালো রেস্টুরেন্টে খেয়েও আমার পেটের পীড়া দেখা দেয়। ওষুধের দোকান থেকে কয়েকটি মেট্রোনিডাজল-জাতীয় ট্যাবলেট কিনে খেলাম। ভালো না হওয়ায় ফের গেলাম ওই দোকানে। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে রোগ ভালো হলো না কেন? দোকানি জিজ্ঞেস করলেন, কী কিনে খেয়েছেন এবং কেন? বিস্তারিত শুনে তিনি বললেন, সবাই ডাক্তার হলে চলবে? শুধু ফ্লাজিল খেলে হবে? এর সাথে আরেকটি ট্যাবলেট খেতে হবে। ট্যাবলেটটি ফ্লাজিলের সাথে খেতে বললেন। ট্যাবলেটটির দাম ফ্লাজিলের চেয়ে দশ গুণ বেশি। সেটি অ্যান্টিবায়োটিক।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো সব ওষুধের সাথে এ রকম একটি করে বিশেষ ট্যাবলেট খেতে হয়? জ্বর হলেও, প্যারাসিটামলের সাথেও। দোকানি বললেন, বিষয়টি সে রকমই। তিনি বিজ্ঞের মতো বললেন, আমরা ওষুধ বিক্রি করি। চিকিৎসকেরা কী কারণে কোন ওষুধের সাথে আর কোন কোন ওষুুধ কেন প্রেসক্রাইব করেন তা ভালো বুঝি।
ওই দোকান থেকে ওষুধ কিনিনি। ঘরে গিয়ে গরম ভাত নুন-পানি দিয়ে আচ্ছা করে চটকে সুপ বানিয়ে খেলাম। এরপর মুন্সীগঞ্জের গ্রামে চলে গেলাম। আপা ওখানে ডাক্তারি করেন। একদিন তিনি বলেছিলেন, দু-একটি সরকারি ট্যাবলেট খেলেই রোগ ভালো হয়ে যায়। গিয়ে দেখি তিনি ঢাকা গেছেন। ভরদুপুরে বেরোলাম থানকুনি পাতা খুঁজতে। ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে থানকুনি পাতা ছিল অতি পরিচিত। এখন ভুলে গেছি। তবুও খুঁজতে লাগলাম। যে থানকুনি পাতা গ্রামে সহজেই পাওয়া যেত; তা খুঁজে পাচ্ছি না কেন?
এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। পরিচয় দিতেই তিনি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। আপার প্যাশেন্ট ছিলেন তিনি। তার স্কুলপড়–য়া মেয়েদের ডেকে এনে থানকুনি পাতা খুঁজতে শুরু করলেন। বিষয়টি দেখতে আরো অনেক নারী জড়ো হলেন। সবাই মিলে আমার জন্য অনেকগুলো থানকুনি পাতা জোগাড় করে দিলেন। কয়েকজন বললেন, এখন পেটের অসুখ হলে কেউ এ পাতা খায় না। সোজা চলে যায় ডাক্তারের কাছে। কিংবা কোনো ওষুধের দোকানে। এক বৃদ্ধ বললেন, বেশ কয়েকদিন এ পাতার রস পান করলে রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। ফের সহজে রোগ হয় না। সিদ্ধ করে এবং কাঁচা বেটে রস দু’ভাবেই খেতে শুরু করলাম। পরের দিন আপা এলে তিনি দু’টি সরকারি ফ্লাজিল ট্যাবলেট দিলেন। বললেন, এতেই ভালো হয়ে যাবি। দুটো ট্যাবলেট খেয়েই ভালো হয়ে গেলাম। পরে ঢাকা ফিরে আসি।
এ কথা শুনে আপনারা হয়তো মুখটিপে হাসছেন। তবে আমার ভাবনার বিষয় নিয়ে। আমাদের দেশে ঘরে-বাইরে সবখানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্নতা জ্ঞানের বড়ই অভাব। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে এর বালাই নেই। পথের ধারের খাবার দোকান থেকে চমকদার সাজানো-গোছানো রেস্টুরেন্টগুলোর একই হাল। পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে কর্মীদের জ্ঞান খুবই সীমিত। দেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মীদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার।
বছরখানেক আগে ঢাকার এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসিতে সদ্য মাস্টার্স করা এক শিক্ষার্থীর সাথে। ভাজা রূপচাঁদা মাছের একটুখানি মুখে দিয়েই বুঝলাম, মাছটি পচা এবং দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা। রেস্তোরাঁ কর্মীদের বিষয়টি বলতেই তারা উল্টো তর্ক জুড়ে দিলেন। ঘটনাটি মনে করিয়ে দিলো ব্রাজিল থেকে আনা নিম্নমানের গমের কথা। আদালত খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিলেন, কাউকে জোর করে ওই গম দেয়া যাবে না। সরকার কাউকে জোর করে ওই গম দেয়নি। তারপরও তা অবিক্রীত থাকেনি।
কথা হচ্ছে, দেশে পরিচ্ছন্নতা জ্ঞানের অভাবে ঘরে-বাইরে খেয়ে কেউ যদি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়; তাহলে প্রতিবারই কি মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধের সাথে অন্য একটি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে? জ্বর, এসিডিটি বা অন্য কোনো সাধারণ রোগে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে যদি এমন হাল হয়; তবে কয়েক বছর পরে আমাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে? প্রায়ই শোনা যায়, অনেক রোগীর শরীরে স্বাভাবিক ওষুধ কাজ করছে না। হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। কিন্তু কেন?
কেন ওষুধ কো¤পানিগুলো সরকারি হাসপাতালে এবং রফতানির সময় ওষুধের মান বজায় রাখলেও দেশের বাজারে ওষুধের মান বজায় রাখে না? কোম্পানিগুলো প্রলুব্ধকর সব অফার দিয়ে চিকিৎসকদের ভুলিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্ট করে। ওষুধের গুণগত মান রক্ষায় কোনো খেয়াল থাকে না।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক চিকিৎসক প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বহু ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন।
অনেকে হয়তো বলবেন, আমি তো সুস্থ আছি। জীবনে আমাশয়, জ্বর-সর্দি এবং এসিডিটির বাইরে কোনো রোগ হয়নি। এর বাইরে কোনো ওষুধ খেতে হয়নি। ভালো কথা। কিন্তু এসব রোগের কারণে মেট্রোনিডাজল, প্যারাসিটামল এবং হাইড্রোক্লোরাইডের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সমস্যা সেখানেই। এতে অ্যান্টিবায়োটিক শরীর হয়ে যাবে। সাধারণ ওষুধে তখন আর কাজ হবে না। আপনি চান বা না চান, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলেও আপনি শঙ্কামুক্ত নন। ওই সব ওষুধের হাইপাওয়ারের ডোজ বলে এমন কিছু আপনাকে দিয়ে দেয়া হবে, যেগুলো সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক সাবসট্যান্স মিশিয়ে তৈরি করা হয়। দাম বেশি তবে অসুখ সারে দ্রুত। তখন আপনি কী করবেন?
কলকাতা থাকাকালে বাংলাদেশী হার্টের রোগীর সংখ্যা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। চেনাজানা ওই সব রোগীর কারণে কলকাতার অনেক বড় ডাক্তারের সাথে সখ্য গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তখন ভাবছিলাম অন্য কথা। কিভাবে নিজেকে দীর্ঘ দিন রোগমুক্ত রাখা যায়। দৌড়াতে শুরু করলাম। সেই সাথে সতর্ক থাকতাম কোনো কারণে যাতে পেটের পীড়াসহ অন্য সাধারণ রোগ না হয়। ইউরোপে গিয়েও সে চেষ্টা বজায় ছিল। প্রতিদিন দৌড়ানো বা জগিং করা বন্ধ রাখিনি। ফলে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পরিপূর্ণ শান্তি অনুভব করতাম।
ঢাকায় এসে ওই অভ্যাসের ব্যত্যয় ঘটে। ঢাকার উন্নয়ন কর্ম চলেছে অপরিকল্পিত। ফলে দৈনন্দিন সুস্থ থাকতে দৌড়ানোর জন্য মাঠের অভাব রাজধানীর সবখানে। ঘরের কাছে শিশুদের খেলার মাঠ নেই। শিশুকালে অভ্যাস গড়ে না উঠলে সুস্থতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। অসুস্থ হলেই ডাক্তার বলবেন, প্রতিদিন হাঁটতে। দৌড় বা জগিং করতে। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট দৌড় বা জগিং করলে দৈনন্দিন স্ট্রেস কমাতে খুবই কার্যকর। এটিই সুস্থ জীবনের গ্যারান্টি। রোগমুক্ত এবং ওষুধমুক্ত জীবনের প্রশান্তি। হ


আরো সংবাদ



premium cement
পাংশায় সজনে পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু কক্সবাজারে পুলিশের অভিযানে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা জব্দ প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হক আর নেই নোয়াখালীতে ফের নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান, খনন উদ্বোধন বরিশালে তীব্র তাপদাহে ৩ স্কুলছাত্রী অসুস্থ বগুড়ায় জব মেলায় চাকরি পেলেন বেকার প্রকৌশলীরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার নীলনকশা থামছে না : রিজভী তাজউদ্দীন মেডিক্যাল দুদকের অভিযান : নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য মিলেছে পূর্ব কালুরঘাটে বেইলিব্রিজে টেম্পু চাপায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত কুবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী শনাক্ত দিনাজপুরে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১

সকল