০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কোরবানির গরুর দাম এবার কেমন হবে বাংলাদেশে

কোরবানির গরুর দাম এবার কেমন হবে বাংলাদেশে। - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে আর কিছু দিন পরেই কোরবানির ঈদ। বিভিন্ন এলাকায় গরুর খামারিরা প্রস্তুতি নিচ্ছে হাটে গরু তোলার। তবে চলতি বছর সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় পশুপালনের খরচও বেড়েছে। ফলে খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, গরুর দাম বাড়তি থাকবে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোরবানির জন্য পশুর যে চাহিদা তার বিপরীতে সরবরাহ কি যথেষ্ট আছে?

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, চলতি বছর চাহিদার চেয়েও বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে।

কিন্তু পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে গরুর দাম।

পশুর চাহিদা কত?
বাংলাদেশে গত বছর পশুর চাহিদা ছিল এক কোটি ২১ লাখ। এর বিপরীতে কোরবানি হয়েছে ৯৯ লাখ।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর চাহিদা ও যোগান দু’টিই বাড়বে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চলতি বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে এক কোটি ২৫ লাখের বেশি।

কিন্তু সম্ভাব্য চাহিদা হবে প্রায় এক কোটি তিন লাখ ৯৬ হাজার। সবমিলিয়ে কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ২১ লাখের বেশি।

কোরবানির জন্য যেসব গবাদিপশু প্রস্তুত আছে তার মধ্যে ৪৮ লাখের বেশি হচ্ছে গরু ও মহিষ।

সম্প্রতি প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তার দফতরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদে গবাদিপশুর কোনো সঙ্কট হবে না এবং বিশেষ করে গরুর যোগানও যথেষ্ট আছে।

খামারিরা কী বলছে?
মাদারীপুরের কৃষক লিটন মিয়া। নিজ বাড়িতে ছোট এক খামারে গরু পালেন তিনি। গত বছর কোরবানির ঈদে ছয়টি গরু থাকলেও এবার তিনি খামারে রেখেছেন ১০টি গরু। আশা করছেন, ১০টি গরুই কোরবানির ঈদে বিক্রি হবে।

তবে দাম কেমন হবে, কতটা লাভ করতে পারবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আছে লিটনের মনে।

তিনি বলেন, ‘দাম তো এবার বাড়বেই। এখন কেমন বাড়বে তা বুঝতে পারছি না। খরচ যে হারে বাড়ছে, তা ওঠাতে পারব কি-না সন্দেহ আছে।’

লিটন খান জানিয়েছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। ঘাসের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, প্রতিটি পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। তাই গরুর দাম গতবারের তুলনায় এবার তারা বেশি চাইবেন।

লিটন মিয়ার মতো একই চিত্র মাদারীপুরের অন্য খামারগুলোতেও।

মাদারীপুরের আরেকজন গরুর খামারের উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু না এলে এবার গরুর বাজার চড়া থাকবে। আর বাজার চড়া থাকলে খামারিরা খরচ তুলে লাভ করতে পারবে।

তিনি বলেন, গত বছর মাঝারি সাইজের যেসব গরু তারা এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন, এবার ওই একই আকারের গরুর জন্য তারা দাম চাইছেন এক লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার। অর্থাৎ প্রতি গরুতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দাম বেশি।

তবে দাম বেশি হলেও গরুর সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।

মাদারীপুরের প্রাণিসম্পদ দফতর বলছে, এবারের ঈদে মাদারীপুরে গরুর চাহিদা ৩৬ হাজার। কিন্তু সরবরাহ আছে প্রায় ৩৯ হাজার। অর্থাৎ তিন হাজার গরু উদ্বৃত্ত আছে।

সরবরাহ এবং দাম কেমন?
মাদারীপুরের মতো সারাদেশেও অনেকটা একই চিত্র। গরুর সরবরাহ বেশি, কিন্তু দাম কম নেই। বরং দাম গত বছরের তুলনায় বাড়তি।

গাবতলী গরুর হাটে কথা হয় তৈয়ব আলী নামে এক গরু বেপারীর সাথে। তিনি গরু সংগ্রহ করেন কুষ্টিয়া, পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে।

চলতি বছর তিনি ঢাকায় শতাধিক বেশি গরু হাটে তোলার পরিকল্পনা করেছেন। অর্ধেক গরু ইতোমধ্যে সংগ্রহও করেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে।

তৈয়ব আলী বলেন, ‘দেখলাম খামারিরা দাম বেশি চায়। গরু অনেক আছে। কিন্তু খরচের কারণে দাম বেশি। ধরেন, ১০ লাখ টাকা দামের গরু এবার ১২ লাখ টাকা। আর মাঝারি গরুতে প্রতিটাতে দাম বাড়তি ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।’

তিনি জানিয়েছেন, এবার ছোট ও বড় গরুর দাম তুলনামূলক বেশি হবে। কারণ এসব গরুর চাহিদা বেশি।

কিন্তু প্রান্তিকভাবে খামার পর্যায়েই যখন গরুর দাম বাড়তি, তখন শেষ পর্যন্ত ওই দাম মধ্যস্বত্তভোগীদের হাত ঘুরে কোরবানির হাটগুলোতে কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে, তা একটা বড় প্রশ্ন।

সরকার কী বলছে?
এবার যে দাম বাড়বে তা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরও স্বীকার করছে। তবে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, দাম যেন অযৌক্তিকভাবে না বেড়ে যায় তার জন্য ‘প্রচেষ্টা’ চালাবেন তারা।

তিনি বলেন, ‘দাম নির্ধারণ তো আমরা করে দিতে পারি না। কিন্তু আমরা বলতে পারি, উৎপাদন খরচ কত। যেমন গবাদি পশুর উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি প্রায় ৫৫০ টাকা। মাঝে মধ্যস্বত্ত্বভোগী আছে। তাদেরও খরচ আছে, লাভ ধরতে হয়। তাই তারা যৌক্তিক পর্যায়ে একটা দাম নিতে পারে।’

কিন্তু বাংলাদেশে গরুর হাটে দাম অনেকসময়ই হুহু করে বাড়তে দেখা যায়। কৃত্রিমভাবে গরুর সঙ্কট তৈরি করে দাম বেড়ানোর চেষ্টা অতীতে দেখা গেছে। ফলে হাটগুলোতে শেষ পর্যন্ত গরুর দাম যৌক্তিক থাকবে তো?

তিনি বলেন, ‘আমরা হাটে প্রচার চালাব। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা যেন অতিরিক্ত দাম নিতে না পারে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দাম নিয়ে নজরদারির কথা বললেও বাস্তবে তার প্রভাব কতটা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদিও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করে, এবার অনলাইনে, সরাসরি খামার ও বাড়ি থেকে গরু কেনার পাশাপাশি কেউ চাইলে হাটে নেয়ার আগে চলতি পথেও গরু বিক্রি করতে পারবে।

সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কিংবা অন্য কেউ যেন বাধা দিতে না পারে তার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। ফলে গরুর জন্য মানুষ শুধু হাট-বাজারের ওপর আগের মতো আর নির্ভরশীল থাকবে না। এতে করে গবাদিপশুর দামের নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়াভাবে কারো হাতে থাকবে না।

তাছাড়া যেহেতু পশুর সরবরাহ বেশি, ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধির সুযোগও কমে যাবে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement