২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্তন ক্যান্সার সচেতনতাই সুস্থতা

-

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশের নারীদের এক নম্বর ক্যান্সার সমস্যা। প্রতি চারজন ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার। আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারী নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তেমন একটা সচেতন নন। সমস্যা যতক্ষণ তীব্র না হয় ততক্ষণ শারীরিক যন্ত্রণা তারা লুকিয়েই রাখেন। ফলে স্তন ক্যান্সারের মতো নীরব ঘাতক কখন যে শরীরে বাসা বাঁধে, তা বুঝে উঠতে পারেন না। অক্টোবর মাসটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালিত হয় সারা বিশ্বেই। বাংলাদেশেও মাসটি সচেতনতার মাস হিসেবে পালিত হয় নানা সংস্থার বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে। ক্যান্সার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সংস্থার অনুষ্ঠানে গোলাপি রিবনও প্রতিকৃতি রয়েছে, যা স্তন ক্যান্সার সচেতনতার প্রতীক।
উন্নত বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্তন ক্যান্সারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১৮ লাখের বেশি নারী এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১৩ মিনিটে একজন (অর্থাৎ বছরে ৪০ হাজার) নারী মৃত্যুবরণ করছে।
বাংলাদেশে আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ হাজার নারী প্রতি বছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় বা অপ্রতুল চিকিৎসায় মারা যায় প্রায় ১৭ হাজার নারী। এ পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। তবে কথা হলো এ রোগ অঙ্কুরে শনাক্ত করা গেলে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভিমত তাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা এমন সময় চিকিৎসকের কাছে আসে যখন আর করার কিছুই করার থাকে না। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্তকরণ ও তা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আন্দোলনই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী এ সচেতনতা প্রোগ্রামের মুখ্য উদ্দেশ্য। স্তন ক্যান্সারে নারীর মৃত্যু হার সবচয়ে বেশি। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত ৬০ শতাংশ রোগীর বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এমনকি ৫ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। একটা সময় ছিল যখন স্তন ক্যান্সারে শুধু নারীদেরই সচেতন করা হতো। এখন পুরুষদেরও সচেতন করা হচ্ছে। কারণ স্তন ক্যান্সার পুরুষেরও হতে পারে। তবে পুরুষের মধ্যে এ হার খুবই কম। অন্যান্য ক্যান্সারের সাথে স্তন ক্যান্সারের পার্থক্য হলো সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা একজন সচেতন নারী চিকিৎসকের আগে নিজেই শনাক্ত করতে পারেন।
সচেতনতামূলক কর্মসূচিকে সার্থক করার জন্য চিকিৎসকেরা কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা
একটি সহজ ও খরচবিহীন পরীক্ষার মাধ্যমে বেশির ভাগ নারীই তাদের স্তনে কোনো রোগকে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে পারে। এ সহজ পরীক্ষাটি মাসে একবার গোসলের পর আপনি সহজেই করতে পারেন। প্রাক মেনোপজ গ্রুপ মাসিকের পর বা মাঝামাঝি সময়ে এবং মেনোপজে যারা গেছেন তারা মাসের প্রথম বা শেষ দিনটিতে করতে পারেন।
কী দেখবেন
১। স্তনের আকার পরিবর্তন হয়েছে কি না।
২। স্তনে কোনো চাকা অনুভূত হয় কি না।
৩। স্তনের ত্বকের রঙের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।
৪। স্তনের উপরের ত্বকে কুচকে কিংবা ঢোল পড়েছে কিনা। অথবা কমলালেবুর খোসার মতো পুরু কিনা।
৫। স্তন বোঁটার চারপাশে ফুসকুড়ি পড়া।
৫। স্তন বোঁটা থেকে কোনো ধরনের তরল নিঃসরণ।
৬। স্তন বোঁটা ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকা।
এর যেকোনো একটি কিংবা একাধিক উপসর্গ থাকলে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষার জন্য যাবেন।
চিকিৎসক প্রয়োজনে স্তনে হাই-পাওয়ার এক্স-রে, মেমোগ্রাফি বা সনোগ্রাফি করতে পারেন।
ঝুঁকিতে আছেন যারা
১। ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস।
২। অল্প বয়সে মাসিক শুরু, দেরিতে শেষ হওয়া।
৩। দেরিতে প্রথম সন্তান ধারণ।
৪। স্তনের কোনো রোগ বা জরায়ুর ক্যান্সার।
৫। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের রোগী ও বেশি ওজন।
প্রতিরোধের উপায়
১। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো।
২। জীবনযাপন হতে হবে সহজ সরল অনাড়ম্বর ও শৃঙ্খলার। গুরুপাক চর্বিযুক্ত খাদ্য বর্জন করা। খাবারের তালিকায় মাছ, প্রচুর শাকসবজি যোগ করা।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় যে ধারণটা জরুরি তা হলোÑ ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যত দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে নিরাময়ের সম্ভাবনা ততই বাড়বে। তবে দেরি হলে চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি কষ্টকর।
আমাদের দেশে নারীরা এ জাতীয় সমস্যা সহজে বলতে চান না। সমাজ ও লোকলজ্জা এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যায়। এ জাতীয় কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে প্রত্যেক নারীকে। কারণ একমাত্র সচেতনতাই হতে পারে রক্ষাকবচ। কমিয়ে আনতে পারে ক্যান্সারের মৃত্যু ঝুঁকি।

 


আরো সংবাদ



premium cement