৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মেয়েটির সাহস একটু বেশি

-

কাস শেষে নিজের হলরুমে ফিরে সিয়াম মোবাইল হাতে নিয়ে রীতিমতো টাসকি খায়! মিস মাহেরা পুষ্পা মায়ার মোবাইল থেকে গুনে গুনে চুরানব্বইটা মিসকল! অল্পের জন্য সেঞ্চুরিটা মিস! ক্রিকেটের ভাষায় একে বলে নার্ভাস নাইনটিজের শিকার! গিনেস বুকে রেকর্ড হওয়ার মতোই ঘটনা! বেচারি মায়ার জন্য সত্যি খুব মায়া হচ্ছে। সিয়ামকে খুঁজে না পেয়ে মেয়েটা নিশ্চয় কতই-না উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও টেনশনে ছিল! আগের দিন দু’জনের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি ও খুনসুটিও হয়েছিল। ফোন না ধরায় মায়া ভেবেছিল সিয়াম নির্ঘাৎ অভিমান-টভিমান করেছে। কিন্তু এদিকে সিয়াম ফোন ধরবে কোত্থেকে? সে তো ভুলবশত হলের রুমে মোবাইল রেখে তড়িঘড়ি কাসে চলে এসেছে। ব্যস, ওদিকে যা হবার তাই হলো। বেচারি মায়াও জাতীয় দলের সালমা-রোমানাদের মতো বেধড়ক চার ছক্কা ও সিঙ্গেল হাঁকাচ্ছিল, কিন্তু অল্পের জন্য সেঞ্চুরিটা মিস হয়ে গেল! ইশ, আর একটা মাত্র ছক্কা (ছয়টা মিসকল) হাঁকালেই ইতিহাসের পাতায় মায়ার নামটা উঠে যেত! ডিরেক্ট ফেসবুক থেকে একলাফে গিনেস বুকে!! হাহাহা... বিষয়টা সহজ ও চাট্টেখানি কথা নয়। এমনিতে মায়া দেখতে অনেকটা পাকিস্তানি টিভি অভিনেত্রী আয়েজা খানের মতো। তার ওপর মায়ার নিটোল দু’গালে রয়েছে দু-দুটো আকর্ষণীয় তিল। যেগুলো প্রতিনিয়ত সিয়ামকে উন্মাদ করে তোলে। সিয়ামের কাছে এখন পুরো বিষয়টা জবা পুষ্পের মতো পরিষ্কার। বুঝতেও আর কোনো ধাঁধা রইল না, কেন আজ মায়া সিয়ামের কাসে অতর্কিত এসে উপস্থিত হয়। বাহ! কত মিহি ও মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে এসে বলে, ‘মে আই কামিং স্যার?’
পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে রাশভারি ও গুরুগম্ভীর টাইপের জাঁদরেল স্যারের কাস চলছিল তখন। মোটা চশমার ওপর দিয়ে তিনি ভ্রƒ কুঁচকে কিছুণ মায়াকে দেখলেন। চেনার চেষ্টা করলেন। না, চিনতে পারেননি। মায়া আর সিয়ামের ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন, সঙ্গত কারণে তাদের বিষয়গুলোতেও রয়েছে ভিন্নতা। ওর পরনে কালো সালোয়ার-কামিজ। শান্ত নির্মল ও স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ একজোড়া শীতল চু পিটপিট করছেÑ লুকিং ফর সিয়াম বিন আহমাদ!
প্রৌঢ় স্যার বললেন, ‘হুঁ, ভেতরে আসো।’
‘থ্যাংক ইউ স্যার।’
এই বলে হনহন করে সোজা ঢুকে পড়ে মায়া। একটু ইতিউতি করে সিয়ামের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথাটা কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ফিসফিস করে, ‘অ্যাই একটু চাপত।’
‘কী চাপব?’
‘হায়রে, বোকারাম! কিচ্ছু না একটু চেপে বসো!’
‘ও আচ্ছা, বুঝেছি। কিন্তু তুমি এখানে কী জন্য এসেছ সোনা?’
‘তোমার আস্তো মুণ্ডুটা চিবিয়ে খেতে!’
এই বলে টুপ করে বসে পড়ে মায়া। এদিকে সিয়ামের তো ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা! ঘটনার আকস্মিকতায় ঘামতে থাকে। কাসের অন্য ছেলেমেয়েরাও চুপচাপ বসে নেই। ভেতরে ভেতরে মৃদু কানাঘুষা, হাসাহাসি ও পরস্পর চোখ টেপাটেপি করতে থাকে। ডান পাশে বসা বন্ধুটি ইতোমধ্যে বলেই ওঠেÑ ‘নে বাবা এবার ঠ্যালা সামলা! ডুবে ডুবে জল খাওয়ার দিন তোর শেষ!’
এদিকে মায়ার থোড়াই কেয়ার! ভালোবাসা এমনি। কোনো ভয়ডর নেই। বসেই সিয়ামের প্যান্টের পকেটে বাটি চালান থুক্কু হাত চালান দিয়ে এক প্রকার গরু খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়। সিয়াম রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রশ্ন করে, ‘কী করছ!’
‘তোমার মোবাইল ফোনটা কই?’
‘আজ আনা হয়নি, ভুল করে আমার হলের রুমে রেখে চলে এসেছি!’
‘বলো কী!’
‘হ্যাঁ।’
‘ওহ শিট!’
সবার অলে তাদের ফুসুর ফুসুর, গুজুরগুজুর চলছিল। ওদিকে স্যার বোর্ডে কিছু লিখতে যাবেন, অমনি মায়া চট করে বেরিয়ে পড়ে! কাসের সব ছাত্রছাত্রী বুঝতে পারলেও স্যার কিন্তু মোটেও বুঝতে পারেনি, কী মারাত্মক একখান ‘মায়াঝড়’ এলো আর গেল! স্যার এখনো নিশ্চয়ই সেই ‘সিডর’ ও ‘নার্গিস’ নিয়েই পড়ে রয়েছেন! পুরো কাসের ছেলেমেয়েরা থ! কী ধড়িবাজ মেয়েরে বাবা! সবাইকে আচ্ছামতো ঘোল খাইয়ে ছাড়ল! সিয়ামও ততণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল! কিন্তু যে পরিমাণ লবণাক্ত ঘাম তার শরীর থেকে মাইনাস হয়েছে, নির্ঘাৎ ডিহাইড্রেশন হওয়ার চান্স আছে। তার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

খবর চাউর হতে সময় লাগল না। উৎসুক ছাত্রজনতা এসে হাজির! এতদিনকার সিক্রেট রিলেশনশিপটা হঠাৎ-ই পাবলিকের সম্পত্তি হয়ে গেল। পুরো ক্যাম্পাসে একটাই খবরÑ রোমিও ভার্সেস জুলিয়েন্ট। ‘সিয়াম অ্যান্ড মায়া লাভ ফিচারিং’ টক অব দ্য ক্যাম্পাস! মুহূর্তে ভাইরাল হতে থাকে তাদের প্রেম ভালোবাসার খবর। সবার মুখে মুখে মায়া আর সিয়াম। খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। প্রথম দিকে সিয়াম একটু বিব্রত হলেও, এখন বিষয়টা সে ভালোই উপভোগ করে। সেলিব্রেটি বলে কথা। মায়াও কুচপরোয়া নেহি! এসবে মোটেও কান দেয় না। বরং সুযোগ পেলেই দু’জনে চুটিয়ে প্রেম করে বেড়ায়। মায়ার মতো এমন স্মার্ট ও সুন্দরী একটা মেয়ে কয়জনের ভাগ্যে আছে? এরকম একটা মেয়ে সিয়ামের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেটা ভাবতেই অন্যরকম আনন্দ। অন্য বন্ধুরা তো প্রায় হিংসায় মরছে। বাপরে বাপ! স্রেফ সাদাকালো পোশাকেও একটা মেয়েকে দেখতে এতটা সুন্দরী লাগে! সিয়ামও সেদিন কম অবাক হয়নি, পাশাপাশি রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছে মায়াকে দেখে। কেমন জানি সিনেমেটিক সিনেমেটিক একটা ব্যাপার। কী অপূর্ব ও মনোমুগ্ধকর মোহনীয় রূপ!

মায়ার সঙ্গে সিয়ামের পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে। পড়াশোনা ছাড়াও এমনিতেই সিয়ামের টুকটাক লেখালেখি করার অভ্যাস আছে। একদিন সে দেখতে পায়, মায়া নামের কেউ একজন তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে! সিয়াম কিছুটা অবাক হয়। অপরিচিতা মেয়েরাও আজকাল তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে! বাহ, তাহলে তো পুরোদস্তুর লেখক বন গায়া! কিন্তু প্রোফাইলে মায়ার কোনো পিক নেই, শুধু লাল টুকটুকে একটা গোলাপ শোভা পাচ্ছে। সিয়াম মনে মনে ভাবছে, ‘ধুর, ফেক আইডি নয়তো!’ একসেপ্ট করবে কী করবে না এরকম সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ততদিনে প্রায় তিন মাস শেষ। তারপর একদিন কী মনে করে সিয়াম হুট করে মায়াকে একসেপ্ট করে বসে। মেসেঞ্জার কনভার্সেশনে গিয়ে ছোট্ট করে একটা মেসেজ লিখে, ‘সরি’। মায়াও কম যায় না, পাল্টা লেখেÑ সেকি! গণ্ডারও আজকাল ফেসবুক চালায় নাকি?
সিয়াম ভিমরি খায়! কিছুটা অপমানিতবোধ করে।
‘গণ্ডার বলছেন কেন?’
‘ওম্মা, বলব নাহ? কাতুকুতু দিলাম তিন মাস আগে, হাসি দিলেন এখন! তাই ভাবলাম নিশ্চয় গণ্ডারের চামড়াই হবে!’
সিয়াম এবার সত্যি সত্যি লজ্জা পায়। দাঁতে দাঁত কাটে। বুঝতে পারে দোষটা তো তার নিজেরই। তবে এটুকুও বুঝতে বাকি নেই, মায়া মেয়েটা একখান জিনিস বটে! ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন হলেও একই ক্যাম্পাস হওয়ার সুবাদে দেখা সাাতে তাদের অসুবিধে খুব একটা হয় না। এখন তো ইতিহাস! আজ পুরো দেশই ওদের নিয়ে বিভোর। দু’জনই সেলিব্রেটি। সর্বত্র তাদের নিয়ে মুখরোচক আলাপ-আলোচনা ও আড্ডা চলছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই প্রেমিক যুগল কেউ কাউকে আজতক প্রপোজ না করলেও ভালোবাসা কিন্তু বসে নেই। সেটা ফোরজি স্পিডে চলছে। কেউ কাউকে চোখে হারায় না। মায়ার মোহনীয় বাঁকা বাঁকা চাহনি ও পাগলকরা কালো তিলে শুধু সিয়াম কেন, ফিদা হয়ে আছে দেশের ছেলেবুড়ো সবাই। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement