২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেতুটি লক্করঝক্কর,কয়েকমাস ধরেই ছিল না স্লিপারের নাট-ক্লিপ

-

গত চার মাস ধরে দুর্ঘটনাকবলিত কুলাউড়ার বরমচালের এই সেতু দিয়ে যখন ট্রেন চলত তখনই লক্করঝক্কর করত। স্লিপারের কোথাও নাট নেই আবার কোথাও ক্লিপ নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অনেক সময় রেল কর্মীরা মেইনটেনেন্স করতেন না।

সরেজমিনে জানা যায়, ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে আসার পরই অতিরিক্ত গতি বাড়ানো হয়। কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনে ঢুকার পরপর চালক আরোও গতি বাড়িয়ে দেন। স্থানীয়রা বলছেন, পূর্ব থেকেই ঘটনাস্থলে কয়েকটি স্লিপারে ক্লিপ ছিল না। যার কারণে ট্রেনটি ওবার স্পিডে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্লিপারে ক্লিপ বসানোর জন্য স্থানীয়রা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে বললেও তারা কর্ণপাত করেনি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী ও কুলাউড়ার প্রাক্তন সংবাদকর্মী লুৎফুর রহমান রাজু চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন। এর পরেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। তবে বরমচাল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাষ্টারের রুমান আহমদের বক্তব্য হলো, নিয়মিত চেকআপ করা হয় রেললাইন। এবং ক্লিপ ও নাট সেখানে সংকট পড়ে সেখানে লাগানো হয়। তবে পুরো লাইনেই কিছু ক্লিপ ও নাট সংকটতো রয়েছেই।

এলাকার সুহেল রানা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যম সহ সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছি। সবাই বিষয়টি দফায় দফায় রেল স্টেশনে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরাও একিই অভিযোগ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, যখন ট্রেন আসত তখন এই জায়গাটা কম গতি দিয়ে অতিক্রম করত। কিন্তু দুর্ঘটনার রাতে খুব স্পিডে ট্রেনটি আসছিল। তারপরই ধসে পরে যায়। খুবই বিকট আওয়াজ হয়।

সিলেট থেকে কুলাউড়ার লংলাগামী যাত্রী ফয়ছল আলী (২৫) জানান, বিকট শব্দে প্রথমে আতংকিত হয়ে অনেক যাত্রী ভয় পান। তিনি বলেন, প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি। অনেক সময় আটকে থাকার পর রেল থেকে নেমে দেখতে পান পেছনের দিকে ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। তখন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসও আসে। তারা তখন বুঝতে পারেন বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল লাইনের নিকটস্থ বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক মিয়া জানান, শব্দ পেয়ে আমরা এলাকাবাসি এসে আহতদের উদ্ধার করি।

সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেস ওভার স্পীড ও রেললাইনের ত্রুটি’র কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে ট্রেনের ৭ টি বগি লাইনচ্যুত ও খাদে পড়ে। ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের অদূরে কালা মিয়া বাজার সংলগ্ন একটি ব্রীজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। রাতে নিহতদের লাশ ও আহতদের উদ্ধারের পর সোমবার সকাল থেকে চলে রেল লাইন মেরামতের কাজ। সন্ধার সাথে সাথে ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।


আরো সংবাদ



premium cement