কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
- মো: মুহিব হাসান, ওসমানীনগর (সিলেট)
- ১৯ জুন ২০১৮, ২০:৪২
সিলেটের ওসমানীনগর বালাগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতের পানিতে বন্যার তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই উপজেলার পাশ ঘেষে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর ডাইকের ২৫/২৬টি স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় হুমড়ি খেয়ে নদীর পানি শতাধিক গ্রামে ঢুকে পড়ায় মানুষের ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ওসমানীনগরের তিন ইউনিয়নে বন্যর্তদের জন্য ১২টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ না বলে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
পূর্ব পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, ইউনিয়নে ১৩টি গ্রামের মধ্যে ১৩টিই প্লাবিত রয়েছে। ১৩টি গ্রামের শত শত ঘর-বাড়ি, মসজিদ-মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত থাকায় ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকের ২০/২২টি স্থানে ভাঙ্গন পড়েছে। এতে গ্রামের ভেতরে বানের পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত গ্রামসমূহ হচ্ছে পূর্ব ঐয়া, পশ্চিম ঐয়া, কিত্তেজালালপুর, পশ্চিম ইছাপুর, পূর্ব ইছাপুর, ফাজিলপুর, পৈলনপুর, ভাটপাড়া, গালিমপুর, জালালপুর, সাদেকপুর, হামছাপুর, রশিদপুর। এসব গ্রামের প্রায় সকল বাড়ি ঘরে পানি উঠে মানুষ পানিবন্ধী রয়েছেন।
পূর্ব গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস জানান, ইউনিয়নের ২/৩টি স্থানে কুশিয়ারা ডাইকে ভাঙ্গন পড়েছে। স্থানীয়ভাবে এলাকার মানুষদের নিয়ে ডাইকের ভাঙ্গনকৃত স্থানে বস্তা দিয়ে মাটি ভরাট করলে আপাতত কিছুটা রক্ষা হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম পানিবন্ধী রয়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ ঘর বাড়ি, বাড়ির আঙ্গিনা, কাঁচা রাস্তা প্লাবিত রযেছে।
অন্যদিকে সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব জানান, লামা তাজপুর ও সৈয়দপুর নামক স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করছে। নদীর পানি গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লামা তাজপুর নামক স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন বস্তা দিয়ে আটকানোর প্রচেষ্টা চলছে। নদীর পানি না কমলে ভাঙ্গন আটকানো সম্ভব নয়।
আর বালাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় বালাগঞ্জ উপজেলা হেডকোয়ার্টার,বালাগঞ্জ সদরের পূর্ব বাজার, মদনপুর,নবীনগর পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা হেডকোয়ার্টারে ১ফুট পানি রয়েছে। তাছাড়া রাধাকোনা, কড়চারপাড়,শাহজানপুর, কালীগঞ্জ, কালিয়ারগাঁও, উত্তর হাসামপুর গ্রামে পানি উঠে মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। বোয়ালজুর ইউপি চেয়ারম্যান আনহার মিয়া জানান, ইউনিয়নের মাকড়সি, মকবেলপুর, সিংড়াকোনা, সর্বানন্দপুর, একালিমাসহ ৬টি গ্রাম সম্পূর্ণ পানির নিচে রয়েছে। তাছাড়া মনোহরপুর, সোনাপুর, মোহাম্মদপুর, মজলিসপুর, কাদিপুর গ্রাম আংশিক পানির নিচে রয়েছে।
তাছাড়া এসব ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরীপুর, উছমানপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর, গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামসমূহে পানি উঠেছে। পানিবন্দি রয়েছেন দুই উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের হাজার হাজার গ্রামের বাসিন্দা।
এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হক বলেন, বন্যার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের চাহিদার আলোকে ত্রাণ বরাদ্ধ চলছে। তার পরিমাণ কত সঠিক করে বলা যাবেনা।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলার বন্যার্তদের মধ্যে ১২ টন চাল বরাদ্ধ এসেছে। আরো বরাদ্ধের জন্যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সাদীপুর ইউনিয়নে ৭ টন, উমরপুর ইউনিয়নে ৩ টন ও পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে ২ টন বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন নিয়ে সাদীপুরে কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন ভরাট করার প্রচেষ্টা চলছে। নদীর পানি বেশি তাই বাঁধ আটকানো যাচ্ছেনা। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা