২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাজারে গিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করলেন যোগী

ভারত
যোগী আদিত্যনাথ - ছবি: সংগৃহীত

বিতর্ক সৃষ্টিতে জুড়ি নেই ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের। এবার এক মাজারে গিয়ে যা করেছেন তা নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা।

ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের খবরে প্রকাশ, আজ বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের সন্তকবীরনগরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগে এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গতকাল বুধবার ওই জেলায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আর সেখানেই নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সন্ত কবীরের মাজারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তাকে মাথায় ফেজ টুপি পরতে অনুরোধ জানালে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

খবরে প্রকাশ, মাজারের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা খাদিম হোসেন মুখ্যমন্ত্রীকে এ টুপি পরিয়ে দিতে গেলে তিনি তাকে থামিয়ে দেন। এরপর খাদিম হোসেন তাকে টুপিটি হাতে নিতে অনুরোধ জানালে তিনি তাতে সম্মত হন এবং পরে তা নিয়ে ছবি তুলেন। খাদিম অবশ্য বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী খুবই ভদ্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যোগীর এ কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতারাও।

কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, ‘এ টুপিটি কোনো বিশেষ ধর্মের হিসেবে নয়, শুধু সম্মান দেখানোর জন্য পরা উচিত ছিল। একজন মুখ্যমন্ত্রীর সবাই সমান হওয়া উচিত।’

‘এক মিনিটের জন্য টুপিটি পরলেই আপনার ধর্ম পরিবর্তন হয়ে যাবে না, না এটি হবে আপনার ধর্মের প্রতি কোনো আঘাত’, যোগ করেন তিনি।

জানা যায়, সন্ত কবীরের ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মোদি ওই মাজারে গিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১১ সালে যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনিও একবার এ ধরনের টুপি পরতে অস্বীকার করেন।

সন্ত কবীরের কথা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করছে সরকার। তার সমাধিস্থলে শিগগিরই তৈরি হচ্ছে এক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তৈরি হতে চলেছে একটি অ্যাকাডেমিও, যাতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা জানতে পারেন কবীরের কীর্তি সম্পর্কে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অ্যাকাডেমির শিলান্যাস করবেন বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন :

ভারতের যোগী মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলল অ্যামনেস্টি
নয়া দিগন্ত ডেস্ক, ২১ মার্চ ২০১৭
ক্ষমতায় আসার একদিনের মধ্যেই ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের যোগী মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে যোগী আদিত্যনাথ যা যা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সবগুলো প্রকাশ্যে ফিরিয়ে নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেলের দাবি, রাজ্যের সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্যকারীদের মধ্যে যোগী আদিত্যনাথ সবার ওপরে রয়েছেন। অ্যামনেস্টির আশঙ্কা, দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে নিজের এই চিন্তাধারা ও মনোভাবকে তিনি বাস্তবায়িত করতে পারেন। নির্বাচনের আগেই হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার কথা বলেছিলেন যোগী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে হিন্দু ভোটকে সংহত করার জন্যই এক কট্টরপন্থী হিন্দু নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বাছাই করা নেতাদের দাবি। এর আগে মধ্যপ্রদেশে সন্ন্যাসিনী উমাভারতীকে মুখ্যমন্ত্রী করে সেই কাজটিই করা হয়েছিল।

তাজমহল নিয়ে এখন যা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ০৫ অক্টোবর ২০১৭
তাজমহল যে উত্তরপ্রদেশের ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তা বুধবার কনৌরের একটি সভায় স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে আদিত্যনাথ বলেন, তাজের মতো একটি ঐতিহাসিক সৌধের অসম্মান করার কোনো চেষ্টাই করেনি তার সরকার। ভ্রমণ ইস্তেহারে তাজের উল্লেখ না থাকার মানে এই নয় যে, উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজ্যের এই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছে বা কোনোভাবে তাকে ছোট করার চেষ্টা করছে। কিছু ব্যক্তি কায়েমি স্বার্থের জন্যেই এমন রটাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, ঠিক আগের মতোই এখনও রাজ্যের পর্যটনের অন্যতম স্মারক তাজ মহল। এমন একটি সৌধের রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাজ্য সরকারের এবং সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে। তাজ মহল সংরক্ষণের জন্যে অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।

ভারতে পর্যটন পুস্তিকা থেকে তাজমহল বাদ
বিবিসি বাংলা, ০৪ অক্টোবর ২০১৭
উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পর্যটন বিভাগের নতুন এক পুস্তিকায় বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল নিয়ে কোনো কথা না থাকায় তা নিয়ে বিস্ময় ও ক্রোধ তৈরি হয়েছে।

সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সাধারণ মানুষের অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ নিয়ে ১২ হাজার টুইট হয়েছে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় আসার ছয় মাস পর এই পুস্তিকা প্রকাশ করা হলো।

এই পুস্তিকায় রাজ্যের চলতি এবং আসন্ন বেশ কয়েকটি পর্যটন প্রকল্পের কথা কথা ছাড়াও, বেশ কিছু বিখ্যাত পর্যটন স্পটের উল্লেখ রয়েছে।

এসব জায়গার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ গোরকপুর শহরে যে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, সেই মন্দিরের কথা থাকলেও রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থাপনা তাজমহলের কোনো উল্লেখই নেই।

তাজমহল সম্পর্কে যোগী আদিত্যনাথের চিন্তা-ভাবনা খুব স্পষ্ট। জুন মাসে তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে তাজমহলের কোনো সম্পর্ক নেই।

সপ্তদশ শতাব্দীতে তৎকালীন মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রীর স্মরণে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

প্রেরণা বক্সি নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘তাজমহল এখন আর পর্যটন গন্তব্য নয়। ইউনেস্কোর এখন উচিৎ গোরকপুরে যোগী আদিত্যনাথের গোশালাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা।’

ধ্রুব রথি নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘যোগী সরকার আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে অসম্মান করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এ নিয়ে এখন পরিহাস চলবে।’

মাধু পূর্ণিমা কিশওয়ার নামে একজন লিখেছেন, ‘তাজমহল নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের এই বিতর্ক তৈরি করা নিতান্তই আহাম্মকি।’

চাপে পড়ে উত্তর প্রদেশ রাজ্য পর্যটন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই পুস্তিকাটি উত্তর প্রদেশের পর্যটনের কোনো গাইড হিসাবে ছাপা হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement