২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রিনল্যান্ড : কেনার খায়েশ ও কষ্টের কথা

-

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যতিক্রমী বহুলালোচিত ব্যক্তি। বৃহত্তম পরাশক্তির প্রধান কিংবা বিশ্বের ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’ হওয়ার কারণে যতটা, তার চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, উদ্ভট বক্তব্য এবং উগ্র স্বভাবের জন্য। তিনি কিছু দিন আগে একটি কথা বলে দুনিয়ার মানুষকে হতবাক করেছেন অথবা হাসিয়েছেন। আর গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্ককে চটিয়ে দিয়েছেন।

ঘটনা হলো, ট্রাম্প হঠাৎ প্রকাশ্যে বলে দিলেন, ‘আহ, যদি গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারতাম।’ একজন ক্ষ্যাপাটে রিয়েল এস্টেট কারবারির মুখে এ কথা হয়তো বেশি বেমানান নয়। তবে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এটা বলা অপ্রত্যাশিত, অযৌক্তিক ও অবাঞ্ছিত বটে। ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করার সাথে সাথে এর প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন গ্রিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ও ডেনমার্ক সরকার। তারা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড কেনার জিনিস নয়। এটা একটা বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবস্থা বেগতিক দেখে তার ডেনমার্ক সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। সেখানে রাজধানী কোপেনহেগেনে তার বৈঠক করার কথা ছিল গ্রিনল্যান্ডের নেতার সাথে।

খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়া যতই হাস্যকর ও অযৌক্তিক হোক, এই মেরুদ্বীপ অঞ্চলের নেতারা মনে করেন, এ ঘটনায় ‘আর্কটিক আইল্যান্ড’টির প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রতি সংশ্লিষ্ট মহলের আগ্রহ অনেক বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেয়া নিয়ে যতই হাসাহাসি হোক, এতে সেখানে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়া এবং গ্রিনল্যান্ডে আগে থেকেই চলমান মার্কিন সামরিক তৎপরতা থেকে আয় বাড়ানোর ব্যাপার কিন্তু নিছক হাসির বিষয় নয়। গ্রিনল্যান্ডের কিছু ব্যবসায়ী নেতা আর কর্মকর্তা মনে করেন, আমেরিকার মতো বৃহৎশক্তির স্বয়ং প্রেসিডেন্টের মতো বহুলালোচিত ব্যক্তি গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার মাধ্যমে দ্বীপটির অপ্রত্যাশিত প্রচার হয়ে গেছে সারা বিশ্বে। এটাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন সড়কসহ অবকাঠামো, বিমানবন্দর, পর্যটন, খনি প্রভৃতি খাতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য। এটা গ্রিনল্যান্ডের জন্য একান্ত প্রয়োজন। সেখানকার জাহাজ কোম্পানি, রয়েল আর্কটিক লাইনের প্রধান নির্বাহী বার্নার হ্যামেকেন বললেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের মতো জায়গায় বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা গেলে জাদুর মতো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’

গ্রিনল্যান্ড শুধু এস্কিমোদের ইগলুর রাজ্যই নয় কিংবা উত্তর মেরু সংলগ্ন এই সুবৃহৎ দ্বীপে কেবল শ্বেতশুভ্র বরফই নেই। বর্তমান পৃথিবীর বৃহত্তম পরাশক্তির কাছে এর গুরুত্ব ও চাহিদা সামরিক দিক থেকেও। এখানে মার্কিন সৈন্যদের সাথে দেশটার ব্যালিস্টিক মিসাইলের আগাম সতর্ক ব্যবস্থাও রয়েছে। আর্কটিক বা উত্তর মেরু অঞ্চলে রাশিয়া ও চীন প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তার বিপরীতে ভারসাম্য বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রিনল্যান্ড একান্ত অপরিহার্য। দ্বীপটির উত্তর-পশ্চিম অংশে, থুলে নামক স্থানে মার্কিন বিমান ঘাঁটি রয়েছে। তবে এ জন্য আমেরিকাকে ভাড়া বাবদ কোনো অর্থ এ জায়গার মালিক, ডেনমার্ককে দিতে হয় না। বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ক্ষুদ্র দেশ ডেনমার্কের সাথে ১৯৫১ সালে যে চুক্তি করেছিল, তাতে উল্লেখ রয়েছে বিনা ভাড়ায় আমেরিকার এই সুবিধা ভোগ করার কথা। অবশ্য গ্রিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এ জন্য বিনিময় দাবি করে আসছে মার্কিন প্রশাসনের কাছে।

২০১৪ সালে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে যখন মার্কিন সামরিক বাহিনী গ্রিনল্যান্ডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে দেয়। আংশিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে পরিষেবা দিয়ে আসছিল সেখানকার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিকে। ২০১৭ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর গ্রিনল্যান্ডের রয়েল আর্কটিক লাইনকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিকে কাজ দেয় এ ঘাঁটিতে পণ্য সরবরাহ করার জন্য। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে এবং রাজনৈতিক মহলে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। এ দিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার ব্যাপারে গ্রিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানে লোন ব্যাগার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমেরিকাকে আমাদের ভূমিতে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে জায়গা দিয়েছি। তাদের এই উপস্থিতি থেকে সর্বাধিক ফায়দা উঠাতে আমাদের চেষ্টা থাকাই স্বাভাবিক।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়ে অঞ্চলটির সরকার ও জনগণকে অপমান করেছেন বলে এবার অনেক সমালোচনা করা হয়েছে। ট্রাম্পের দেশ এর আগে যে আচরণ করেছে, সেটাও গ্রিনল্যান্ডের জন্য কম অবমাননাকর নয়। গ্রিনল্যান্ড কন্ট্রাকটার্স নামের আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘাঁটিতে পণ্য সরবরাহের চুক্তি করেছিল ৬০০ মিলিয়ন ড্যানিশ ক্রাউন মূল্যের, যা ৮৯ মিলিয়ন ডলারের সমান। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই মার্কিন কর্তৃপক্ষ চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। অথচ গ্রিনল্যান্ডের ক্ষুদ্র অর্থনীতির জন্য এটা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গ্রিনল্যান্ডকে আজো নির্ভর করতে হয় মাছ ধরা এবং ডেনমার্কের বার্ষিক মঞ্জুরির অর্থের ওপর। তাই গ্রিনল্যান্ড প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই এখানকার কোম্পানি ও কর্মীরা মার্কিন ঘাঁটিতে সার্ভিস দেবে। আমাদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করাই স্বাভাবিক।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক প্রকার অচলাবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রিনল্যান্ড, ডেনমার্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের একটি যৌথ কমিটির বার্ষিক বৈঠক হওয়া খুবই গুরুত্ববহ। কিন্তু ২০১৪ থেকে এ বৈঠক একবারও হয়নি। গ্রিনল্যান্ডের বিরোধী দল ‘ইনুইট আটাকাটিগিট’-এর আইন সভাসদস্য আজা চেমিটজ লার্সেন তাই বলেছেন, ‘পাঁচ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেছি যাতে মার্কিন ঘাঁটি সংক্রান্ত চুক্তি মেনে চলা যায়। তবে আশার আলো দেখছি না।’ এই মহিলা রাজনীতিক আরো বলেন, “(ট্রাম্পের) ‘আমেরিকাই সর্বপ্রথম’ কৌশল গ্রিনল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উপকার করেনি।’

লক্ষণীয় হলো, হোয়াইট হাউজ এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলছে না। কিন্তু তারা যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা করে চলেছে। পেন্টাগন বলেছে কৌশলী ভাষায়, ‘উত্তর মেরু অঞ্চলে আমরা ওইসব কাজকে অগ্রাধিকার দেবো, যা স্বদেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন। তা ছাড়া, ইন্দো-প্রশান্ত সাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে আমরা সচেষ্ট থাকব।’

ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার খায়েশের চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হলো, তার সরকার গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কী করতে চায়। বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অব্যাহত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সাদা বরফভর্তি গ্রিনল্যান্ডের ওপর ওয়াশিংটনের সাদা বাড়ির (হোয়াইট হাউজ) শ্যেন দৃষ্টি। গত বছর মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলে দিয়েছে, ‘কৌশলগত কারণে আমরা জোরালো উদ্যোগ নিতে চাই গ্রিনল্যান্ডে একাধিক বিমানবন্দর নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে। এসব বিমানবন্দর সামরিক ও বেসামরিক উভয় প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।’

আমেরিকা যতই আগ্রাসী মনোভাব দেখাক না কেন, তার বিপরীতে গ্রিনল্যান্ড ও তার অভিভাবক ডেনমার্ক সঙ্ঘাত পরিহার ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য উন্মুখ। ইউরোপের উত্তরাংশে, বাল্টিক সাগর ও উত্তর সাগরের মধ্যবর্তী, সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের উন্নত রাষ্ট্র ডেনমার্ক বিশাল গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণকারী দেশ। এলাকাটি স্বায়ত্তশাসিত হলেও এর নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র বিষয় দেখাশোনা করে থাকে ডেনমার্কই। উল্লেখ্য, ডেনমার্কের আয়তন মাত্র ৪৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। অপর দিকে, গ্রিনল্যান্ড ২১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে অবস্থিত। অর্থাৎ এটি তার মুরব্বি দেশের চেয়ে ৫০ গুণেরও বেশি বড়। যা হোক, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যৌথ কমিটির বৈঠক যাতে বসে, এ জন্য আমরা মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখছি। গ্রিনল্যান্ডের জন্য সর্বাধিক সুফল নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাবো।’

অপর দিকে, রয়েল আর্কটিক লাইন নামের জাহাজ কোম্পানি আমেরিকার হাতে ‘থাপ্পড় খেয়ে’ মার্কিন ঘাঁটির কাছে-কিনারে অন্যান্য শহরে পণ্য সরবরাহ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের এখন হা-হুতাশ করা ছাড়া উপায় নেই। এর প্রধান নির্বাহী হ্যামেকেন অতীতে কাজ করতেন ডেনমার্কের বিরাট জাহাজ কোম্পানি গঅঊজঝক-এ। তিনি বলেছেন, ‘আপনি কোনো দেশের অবকাঠামো উন্নত না করে এর একটা এলাকা ব্যবহার করা বিস্ময়কর বৈকি।’ ইঙ্গিতটা যে, আমেরিকার দিকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি আমেরিকার চুক্তি বাতিলে আফসোস করে বলেন, ‘সামরিক কার্যক্রমের জন্য বেসামরিক সরবরাহ গুরুত্বের দাবিদার, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে- যেখানে যাওয়া কঠিন।

গ্রিনল্যান্ড অর্থ, সবুজ ভূমি। আসলে সেখানে সবুজ-শ্যামল নিসর্গের অভাব থাকলেও সাদা বরফের অভাব নেই। সেখানকার ভূপ্রকৃতি ও তাপমাত্রা এমন, কৃত্রিমভাবে সবুজায়ন সহজ নয়। গ্রিনল্যান্ডের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ক্রমেই স্বাভাবিক করার প্রয়াসের চেয়ে নিজ নিজ স্বার্থে দখলদারী কায়েম আর মূল্যবান খনিজের অনুসন্ধানই সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর বেশি প্রিয়।

বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ অস্ট্রেলিয়া- এটাই অনেকে বলে থাকেন। তবে অস্ট্রেলিয়াকে ‘ক্ষুদ্রতম’ হলেও মহাদেশরূপে গণ্য করা হলে, গ্রিনল্যান্ডই বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। অস্ট্রেলিয়ার আয়তন ৭৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার; আর গ্রিনল্যান্ডের ২১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। এর পরই স্থান আফ্রিকার মাদাগাস্কার দ্বীপের, যা নিকট অতীতে বেশ কয়েক বছর পরিচিত ছিল ‘মালাগাসি’ হিসেবে। এর আয়তন পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। গ্রিনল্যান্ডের প্রতিবেশীতুল্য ব্যাফিন দ্বীপ (পাঁচ লাখ সাত হাজার ৪৫১ বর্গকিলোমিটার) আয়তনে মাদাগাস্কার থেকে কিছু ছোট।

গ্রিনল্যান্ড ভূখণ্ডের পরিসরের দিক দিয়ে যত বড়ই হোক না কেন, দ্বীপটি ভিন্ন কোনো দেশের মর্যাদার অধিকারী হতে পারেনি; বরং এটা ইউরোপের ডেনমার্ক রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসিত একটি অংশ হিসেবেই পরিগণিত। জনসংখ্যা মাত্র ৫৭ থেকে ৫৯ হাজার। গত দু-তিন দশকে অধিবাসী ক্রমেই বেড়ে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজধানী গড্থাব গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাংশে। দ্বীপটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রলম্বিত। নি¤œাংশের কিছুটা বাদ দিলে প্রায় পুরোটাই পৃথিবীর সুমেরু বৃত্তের অন্তর্ভুক্ত। অ্যাটলাস খুললে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের সর্বোত্তরে গ্রিনল্যান্ড নজরে পড়বে। গ্রিনল্যান্ডের নিকটতম দেশ হলো পশ্চিমে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাডা এবং পূর্বে ইউরোপের আইসল্যান্ড দ্বীপ (আয়তন মাত্র এক লাখ তিন হাজার বর্গকিলোমিটার)।

গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণে ব্যাফিন উপসাগর, ডেভিস প্রণালী ও ল্যাব্রাডর সাগর। এগুলো কানাডাকে পৃথক করে রেখেছে গ্রিনল্যান্ড থেকে। গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব পাশে এলিস্যামিয়ার দ্বীপ। তা ছাড়া, ডেনমার্ক প্রণালী গ্রিনল্যান্ড থেকে আইসল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতা নির্দেশ করছে। উল্লেখ্য, মানুষের নামসহ নানা দিক দিয়ে আইসল্যান্ড ও ডেনমার্কের মাঝে রয়েছে মিল।

উত্তর আমেরিকার ম্যাপে একেবারে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আলাস্কার অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্টেট বা রাজ্যটি কানাডার ভূখণ্ড দিয়ে বিচ্ছিন্ন হলেও নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আলাস্কার প্রধান শহর অ্যাংকোরেজ। বেরিং প্রণালীর মাধ্যমে আলাস্কা এশিয়া, তথা বৃহত্তর রাশিয়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন। আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়ে এর বদলে ধিক্কার পাচ্ছেন। ১৮৬৭ সালে তদানীন্তন রুশ সম্রাট (জার) এই আমেরিকাকেই গোটা আলাস্কা অঞ্চল দিয়েছিলেন অল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে। অর্থাৎ খোদ উত্তর আমেরিকার বুকে রাশিয়ার এই বিরাট ভূখণ্ড ছিল। এটা শুনলে অনেকের চোখ উঠবে কপালে। বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া তখন ছিল পূর্ব ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়ার গোটা উত্তরাংশ পেরিয়ে আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম অংশ অবধি, তিন মহাদেশে

বিস্তৃত। এখন দুই মহাদেশে রাশিয়ার বিস্তার। আজ থেকে ১৫২ বছর আগে রাশিয়ার জার শাসক যদি আলাস্কা বেচে না দিতেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে বিপুল তেল-গ্যাস তো বটেই; সর্বোপরি ভূকৌশলগত বিরাট অর্জন হতো রাশিয়ার। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকা কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়ে পড়ত।

ট্রাম্প যে আস্ত গ্রিনল্যান্ড অঞ্চল কিনে নিতে চাইলেন, এটা নেহায়েত ব্যক্তিবিশেষের বাতিক কিংবা নিছক ক্ষ্যাপাটের পাগলামি নয়। আগ্রাসী পুঁজিবাদ বা ধনিকতন্ত্র বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিষেবাসমেত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ সব কিছুকেই নিছক পণ্যে পর্যবসিত করেছে। তাদের কাছে গ্রিনল্যান্ড ও মেইনল্যান্ড, কোথাও নৈসর্গিক বৈশিষ্ট্য অথবা বৃহত্তর মানবিক কল্যাণের মূল্য নেই। মার্কিন দেশটি কেবল গায়ে-গতরে বড় নয়, এর লোভও অনেক বেশি। আধিপত্যবাদী ও কর্তৃত্বকামী কোনো রাষ্ট্রশক্তি দুনিয়ার দেশে দেশে অকারণে হামলে পড়ার স্বভাব অর্জন করলে, তার এই প্রবণতা সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান কর্তাদের মাঝেও সংক্রমিত হয়। তখন তাদের কাছে মনে হয়, গোটা পৃথিবীটা ‘বাপের তালুক’। একইভাবে তাদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বের বিশেষত নিরীহ, ছোট ও পরনির্ভর দেশগুলোকে মনে করে নিজেদের উপনিবেশতুল্য। এসব দেশের জনগণকে তারা গণতন্ত্রের দাওয়াই, সুশাসনের বটিকা এবং মানবাধিকারের মিকশ্চার সেবন করালেও (অনেক সময় জোর করে), এই জনগণকে ওরা এক প্রকার ‘প্রজা’ হিসেবেই গণ্য করে।

প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। ২০০০ সালের দিকে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন এশিয়া সফরে। তখন প্রাচ্যের একটি গণতান্ত্রিক দেশে গিয়ে তিনি বর্তমান বিশ্বে মার্কিন মোড়লিপনার ‘প্রয়োজনীয়তা’ বোঝাতে বললেন, ‘আপনাদের এখানে প্রত্যেক গ্রামে একজন মোড়ল আছেন যার কথা অন্যরা মেনে চলেন।’ তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট মেহমানকে শুনিয়ে দিলেন, ‘না, মোড়ল একাই সিদ্ধান্ত নেন না। পঞ্চায়েত আছে প্রত্যেক গ্রামে। তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুসারেই সমাজ পরিচালিত হয়ে থাকে।’


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু

সকল