২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংস্কৃতিতে নারীর অবদান ও অবস্থান

- ফাইল ছবি

নারী মানবজাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ ও নারী উভয়ই মানবজাতির অংশ। সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যেটা পাই, সে উত্তরাধিকারে নারীদের ভূমিকা আমরা বিশেষভাবে দেখতে পেয়েছি। নারী বা পুরুষের সংস্কৃতি আলাদা নয়। তবে কতগুলো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা যায়। যেমন, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের স্থানান্তর। অর্থাৎ প্রজন্মের কাছে উত্তরাধিকার স্থানান্তরের বিষয়টির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এটা মায়েরাই বেশি করেছেন। মায়ের সাথেই তার সন্তানদের থাকে বেশি ঘনিষ্ঠতা। তাদের মাধ্যমেই কৃষ্টি-কালচার সন্তানদের মধ্যে বেশি প্রবেশ করে থাকে। মায়ের সাথেই বন্ধন বেশি থাকে। অন্যদেরও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ভূমিকা অবশ্যই থাকে; কিন্তু মায়েদের ভূমিকাই এক্ষেত্রে বেশি। এটা আমরা স্বীকার না করে পারি না।

সংস্কৃতির সাথে আরেকটি ইস্যু হচ্ছে- আমাদের যে সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছে, সংস্কৃতিকে যে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে থাকি, তার প্রধান অংশ হলো জীবনাচার। যদি আমরা এটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাই, যেমন আর্টের ক্ষেত্রে- আর্টকে যদি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নিয়ে আসি, তাহলে আমরা সেখানে আজকাল যে বিষয় দেখতে পাই সেটি হলো নারীকেন্দ্রিক ফিগারাইজেশন। আজকে নারীর ফিগারাইজেশন বেশি চলছে। নারীকে যেভাবে বর্তমানে উপস্থাপন করা হয়, সেটাই হয়ে গেছে আজকের আর্ট। এটা আমরা ইসলামের ক্ষেত্রে দেখিনি। ইসলাম আর্টকে দেখিয়েছে স্টাইলাইজেশন অর্থাৎ লতাপাতা অথবা জ্যামিতিক ফর্মের স্টাইলাইজেশন। ইসলাম নারীর ফিগারাইজেশন চায়নি। এ কারণেই ইসলামে নারীর মর্যাদা রক্ষিত হয়েছে অনেক বেশি। ইসলাম নারীকে নিছক যৌনতার আলোকে বিচার করেনি। তাদের আদর্শ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলামে নারীর একটি আইডিয়াল লেভেল আছে, যা পাশ্চাত্যে নেই। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নারীর এটা একটা অপব্যবহার। ইসলামে নারীকে সম্মান করতে দেখা গেছে।

আমরা যদি আধুনিককালে ফিরে আসি তাহলে দেখতে পাই, নারী সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে সাহিত্য, নাটক ও মিডিয়ায় ভূমিকা রাখছে; প্রধানত নাচে, গানে। আমরা দেখি, নারীর উপস্থাপন তুলনামূলকভাবে যৌনতাকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতে, এটা একটা মানসিক রোগ; এটা যৌনতাকেন্দ্রিক একটা অবসেশন, এটা মনোবিকার। ফলে সব কিছুতে একটা যৌনতা নিয়ে আসা হয়। সবখানে যৌনতা আনার তো কোনো প্রয়োজন নেই। যৌনতা নির্দিষ্ট একটা ক্ষেত্রেই তাই হয়েছে। অথচ সবখানেই আজ এটা হয়ে গেছে। আবার সেই যৌনতার বিস্তার ঘটেছে নারীকে কেন্দ্র করে। নাটক, সিনেমা ও পত্রপত্রিকা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। নাচে, গানে সবখানেই নারীকে প্রধান হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এখানে পুরুষের ভূমিকা খুবই কম। পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রেও নারীকে প্রধান চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনে নারীকে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, তা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে পাশ্চাত্য প্যাটার্নে নারীর অমর্যাদাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা তাদের লক্ষ্য কি না জানি না, তবে এটা আজকের বাস্তবতা।

এ দিক থেকে ইসলামের যে সংস্কৃতির মডেল তা অত্যন্ত উন্নত; এটা তৌহিদভিত্তিক। মহান স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তাকে মানতে হবে। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। মূর্তি বা দেবী নন। এ দিকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দিকে ইসলামে কোনো ধরনের অশ্লীলতা নেই। বিশেষ করে পোশাকের ব্যাপারে কুরআন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পোশাকের ব্যাপারে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। তাকওয়ার একটা গুরুত্ব এখানে রয়েছে। সূরাতুল আরাফে শরীর ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে। পোশাকের অন্য উদ্দেশ্য, সৌন্দর্য বর্ধন। এ দুটোর মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটাই সঠিক ও বাস্তবসম্মত। অথচ অভিযোগ করা হচ্ছে, ইসলামই নারীকে অবমূল্যায়ন করেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। ইসলামই তার মর্যাদা দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। নারীর যা কিছু অবমূল্যায়ন তা পাশ্চাত্যই করেছে।

নারীর অব্যাহত অপব্যবহার এমন নয় যে তারা এ ব্যাপারে অসচেতন। তবে নারীরা অসহায়। বস্তুবাদের প্রভাবও আছে। নারীর বস্তুবাদ ও পুঁজিবাদ তো ক্ষতি করছেই। বস্তুবাদের এক অর্থ নাস্তিকতা ধরনের চিন্তাধারা, অন্য অর্থ ভোগবাদ, অর্থাৎ যেভাবে পারো মানুষের মাঝে যৌনতা ছড়িয়ে দাও। এর মাধ্যমে বাজার বাড়াও, বিক্রি করো। পুঁজিবাদে একই কথা। পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজম মুনাফা চায়। মুনাফা যত পারে বাড়াতে চায়। তারা যদি মনে করে, যৌনতাকে বিক্রি করে তা করা যায়, তখন তারা তাই করবে এবং করছে। সেখানে নৈতিকতা মোরালিটির স্থান নেই। নৈতিকতাহীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় তারা কিছু করতে পারে না। কিন্তু তারা যখন অন্য নারীকে বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখে, তখন কষ্ট পায়। এটা তো আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা যখন নাটকে এসব দেখি, মনে কষ্ট পাই। কিন্তু আমরা কিইবা করতে পারি?

সুতরাং এ কথা ঠিক, বস্তুবাদ ও পুঁজিবাদের প্রভাব নানাভাবে পাবলিক লেভেল, ইকোনমিক লেভেল এবং মার্কেটিং লেভেলে পড়েছে। এটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক, পড়েছে। বস্তুবাদের প্রভাব এখন সব কিছুতেই পড়ছে। নারীরা অপব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু তারা যাতে এটা না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আসলে একটা অদ্ভুত মানসিক জটের মধ্যে আটকে গেছি। ফলে আমরা এগোতে পারছি না। নারীরা যদি পুরুষদের মর্যাদা ও সম্মান দিতে পারে, তাহলে পুরুষেরা কেন নারীদের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দিতে পারবে না? মায়ের ক্ষেত্রে এক নিয়ম, বউয়ের ক্ষেত্রে আরেক নিয়ম, মেয়ের ক্ষেত্রে আরেক নিয়ম। কিন্তু তারা সবাই তো একই নারী জাতির অংশ। এটাও আমরা ভুলে যাই যে, তারা মানবজাতিরই একটা অংশ।

লেখক : সাবেক সচিব


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ গৃহবধূ গ্রেফতার জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী

সকল