২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেতের নান্দনিক ফার্নিচার : রঙের ফিচার

-

আমাদের দেশে প্রাচীন শিল্পগুলোর মধ্যে বেত অন্যতম। বহুকাল ধরে দেশীয় শিল্প হিসেবে বেতের ব্যবহার হয়ে আসছে। একটা সময়ে বেতের তৈরি জিনিসপত্র অত্যধিক ব্যবহার হতো। ঘর গৃহস্থালি থেকে শুরু করে বেতের বহুবিধ ব্যবহার চোখে পড়ত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে অন্যান্য শিল্পের আগ্রাসনে কমে গেছে বেতের ব্যবহার। তারপরও একশ্রেণীর মানুষের কাছে বেতের কদর রয়ে গেছে।
কেবল ঐতিহ্য নয়, বেতের তৈরি ফার্নিচার সৌন্দর্যে, গুণে ও মানে অতুলনীয়। দেশীয় আবহ তৈরি, নান্দনিক নকশা, সহজে বহনযোগ্য, টেকসই, ডেকোরেশনে ভিন্নতা, দামে সহজলভ্যতার কারণে বর্তমানে বেতের ফার্নিচার মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তাই যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে বেতের ফার্নিচার। একসময় মনে করা হতো, এ দেশের অভিজাত পরিবারের লোকজনই বেতের তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহার করে থাকে। সে ধারণা পাল্টে গিয়ে বেতের ব্যবহার বাড়ছে সারা দেশে। চাইনিজ রেস্টুুরেন্ট থেকে শুরু করে শোয়ার ঘরে দেখা যায় বেতের ফার্নিচার। সবারই প্রত্যাশা থাকে, তার বাসস্থান হোক মনের মতো সাজানো। স্বল্প খরচে ঘর কিংবা অফিস সাজাতে ব্যবহার করা যেতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের বেতের সব ফার্নিচার।
দিন বদলের সাথে পরিবর্তন এসেছে মানুষের চাহিদা ও রুচির। আধুনিক স্টাইলে ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বাসাবাড়িসহ অফিসগুলোতেও ব্যবহার করা যেতে পারে বেতের ফার্নিচার। তবে ঘরের কোন জায়গায় কোন ধরনের ফার্নিচার ব্যবহার করতে হবে সেটি নির্বাচন করতে পারলে বেতের ফার্নিচারই হবে অনিন্দ্য সুন্দর। অন্য যেকোনো ফার্নিচারের চেয়ে তুলনামূলক বেতের ফার্নিচার টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন হওয়াতে এখনো অভিজাত মানুষের কাছে বেতের কদর রয়েছে। তবে বেতের ফার্নিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো ঘরের ডেকোরেশনের সাথে মানাইসই হচ্ছে কিনা। বাসাবাড়ি কিংবা অফিস-আদালতেও বেতের ফার্নিচার ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার বাসায় যে কেউ এলেই প্রথমে যে জায়গায় বসবে তা হচ্ছে বাসার ড্রয়িং রুম। আর তাই এই রুমটাকে সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন বেতের তৈরি সোফা। বেতের সোফার সাথে মিল রেখে টেবিল ব্যবহার করবেন। রাখবেন প্রয়োজনীয় ফুলদানি, তাতে রুমটি সুন্দর দেখাবে। বেড রুমে কাঠ ও স্টিলের খাটের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন বেতের সিঙ্গেল ও ডাবল খাট। থাকতে পারে বইয়ের একটি তাকও। বেতের ফুলদানিসহ থাকতে পারে একটি আয়না। এ ছাড়া বেতের মোড়া চেয়ার, ইজি চেয়ারও থাকতে পারে। বারান্দাই বসার জন্য থাকতে পারে চেয়ার কিংবা মোড়া। বাগানে থাকতে পারে টেবিল ও চেয়ার। থাকতে পারে বেতের তৈরি দোলনা। আগের দিনে গ্রামের বাড়িতে অনেক অভিজাত পরিবারে বেতের ফার্র্নিচারের প্রচলন দেখা যেত। অফিসে বা রেস্টুরেন্টে দেশীয় ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে বেতের ফার্নিচার। রিসিপশন, ওয়েটিং এরিয়া, মিনি কনফারেন্স রুমে বেতের সোফা বা অন্যান্য ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারেন। এসব স্থানে বেতের তৈরি কিছু শো-পিস রাখলে দেখতে মন্দ হবে না।
যেকোনো ফার্নিচারের দাম নির্ভর করে তার আকার ও ডিজাইনের ওপর। বেতের ফার্নিচারও এর ব্যতিক্রম নয়। মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার ডিন ফার্নিচারের দোকানের কর্মরত সুমন এর দরদাম সম্পর্কে জানালেনÑ এখানো অন্য যেকোনো ফার্নিচারের তুলনায় কম মূল্যে পাওয়া যায়। সে হিসাবে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফার্নিচারের সেট পাওয়া যায়।
বিভিন্ন রকম বেতের ফার্নিচারের মধ্যে সোফা সেট আট থেকে ৫০ হাজার টাকা, চেয়ার এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, খাট দুই হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা, ডাইনিং টেবিল আট থেকে ৪০ হাজার টাকা, ডিভান পাঁচ থেকে ২৫ হাজার টাকা, দোলনা এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা, বুক শেলফ এক থেকে তিন হাজার টাকা, ডালা ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জুতার র্যাক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা, শোপিস স্ট্যান্ড ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, টেবিল ল্যাম্প, রুম পার্টিশন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ইজি চেয়ার এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, বেতের আয়না ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ও বিভিন্ন সাইজের ঝুড়ি ১০০ থেকে ৮০০ টাকা, মোড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে।
পাওয়া যাবে : রাজধানীর নবাবপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-২ নম্বর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম মার্কেট, পান্থপথ, মোহাম্মদপুর, গ্রিনরোড, উত্তর যাত্রাবাড়ী, উত্তরার মাসকাট প্লাজা, গুলশানসহ ঢাকার বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ফার্নিচার পাওয়া যাবে। একটু যতœ করে ব্যবহার করলে অনেক দিন টেকসই হবে বেতের ফার্নিচার।


আরো সংবাদ



premium cement