২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরকীয়ায় আসলো বাসনা রাণীর সন্তান, বাবা কে?

সদ্যভূমিষ্ট কন্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় বাসনা রাণী - নয়া দিগন্ত

রংপুর মহানগরীর একটি বেসরকারী হাসাপাতালে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বাসনা রাণী। কিন্তু তার পাশে কেউ নেই। চার বছরের পরকীয়ার সম্পর্কে বিয়ে না করে উজ্জল সরকার নামের এক ব্যক্তির সাথে অবৈধ মেলামেশায় এই সন্তান হওয়ায় নিজ সম্প্রদায় এবং স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে দেয়া হলেও টাকার অভাবে ক্লিনিকেই সন্তানসহ অবস্থান করছেন তিনি। বের হয়ে শিশুসহ কোথায় যাবেনও তারও কোন ঠিকানা নেই। অন্যদিকে অভিযুক্ত উজ্জল সরকার সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তিনি নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নিজের সদ্যোজাত সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে থানায় মামলা করতে গেলেও বাসনা রাণীর মামলা নেয়নি পুলিশ।

রংপুর মহানগরীর আপডেট ক্লিনিকের ৩০২ নম্বর রুমে সদ্য কন্যা সন্তান জন্মদানকারী বাসনা রাণী জানান, আমার স্বামী নগরীর পালাপাড়া এলাকার অলোক সরকার ভারতে ব্যবসার কাজে থাকায় রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সাহবাজপুর গ্রামের মৃত পুলক সরকারের ছেলে উজ্জল সরকারের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিগত চার বছর ধরে উজ্জল আমাকে বিয়ে না করেই স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতে থাকে। আমি বিয়ে করার কথা বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এরপরও আমি তাকে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রদান করি।

তিনি আরো বলেন, একপর্যায়ে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উজ্জল আমার পেটের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে রাজি না হলে উজ্জল সরকার আমাকে কুড়িগ্রামের একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় আমি বেঁচে গেলে উজ্জল আমাকে সেখানে রেখে পালিয়ে আসে। আমি সেখান থেকে বেঁচে এসে রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করতে যাই। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি ধর্ষণ নয় বলে মামলা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেয়।

বাসনা রাণী জানান, পুলিশ মামলা না নেয়ায় আদালতে মামলা করতে গেলে উজ্জল কোর্টে উপস্থিত হয়ে আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে সন্তানের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়। এসময় কোর্টে উপস্থিত লোকজন নিশ্চয়তা চাইলে উজ্জল আমার সাথে দৈহিক মেলামেশা এবং আমার গর্ভে সন্তানের দায় স্বীকার করে লিখিত স্বীকারোক্তি দেয়। এ সময় উজ্জল সরকারের বড় ভাই বিপ্লব সরকার ও ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র সরকার মিমাংসার কথা বলে উজ্জল সরকারকে নিয়ে কৌশলে আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে আদালত চত্বরেই আমার প্রসব বেদনা উঠলে স্থানীয় লোকজন আমাকে রংপুর মহানগরীর আপডেট ক্লিনিকে ভর্তি করায়। সেখানে আমি গত ২ আগস্ট শুক্রবার কন্যা সন্তানের জন্ম দেই।

বাসনা রাণী আরো জানান, আমার এখানে উজ্জল বা তার পরিবারের কেউ এখনও খোঁজ নিতে আসেনি। আগের স্বামীও আমাকে নিচ্ছে না। আমার পিতামাতাও আমাকে বাড়িতে তুলছে না। গ্রামবাসীও আমাকে একঘরে করে রেখেছে। আমি এখন কোথায় যাবো। আমি আমার কন্যা সন্তানের পিতৃপরিচয় চাই। হাসাপাতালে কেউ আমাকে দেখতেও আসছে না। আমাকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ দিয়েছে কিন্তু টাকা না দিতে পারায় আমি ক্লিনিক থেকেও যেতে পারছি না। আবার ক্লিনিক থেকে বের হয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় উঠবো, তারও কোন ঠিকানা নেই। বাবা-মাও মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। আমি এখন কি করবো। ক্লিনিক থেকে বের হয়ে আদালতেও যেতে পারছি না। পুলিশের কাছে যেতেও পারছি না। উজ্জল সরকার প্রভাবশালী হওয়ায় সেসব কিছু নিজেদের মতো ম্যানেজ করে নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, ১৪ বছর আগে রংপুর মহানগরীর পালপাড়ার অপু চন্দ্র দাসের সাথে পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর গ্রামের সুবাসের কন্যা বাসনা রাণীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে বাসনা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এরপর বাসনার স্বামী অপু চন্দ্র দাস ব্যবসার কাজে ভারতে যায় এবং ৭ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করে। এই সুযোগে বাসনাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৪ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে (ছদ্মনামে) আনন্দনগর, ভিন্নজগৎ, স্বপ্নপুরী ঘুরতে যায় এবং একাধিকবার রংপুর নগরীর ভাড়া বাসা- কট্টিপাড়ার ১নং রোডের ৮৭ নং বাসায় বাসনার সাথে দৈহিক মেলামেশা করে উজ্জল সরকার। একপর্যায়ে বাসনা গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে তাকে বিয়ে করার জন্য উজ্জল বাসনার কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে বাসনা রাণীর পিতা সুবাস চন্দ্র জানান, উজ্জল সরকার আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমাদের পরিবারের কিছুই করার নেই। উজ্জল সরকার ওকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সন্তানের স্বীকৃতি দিক- এটাই আমি চাই। তা না হলে আমি ওই মেয়েকে কখনই ঘরে তুলবো না।

এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা উজ্জল সরকারের সাথে ফোনে এবং তার বাসায় গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বরং সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করায় মুশফিক নামে এক ব্যক্তি পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বাসনা রাণী ও সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে অবশ্যই সেটা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল