২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ধান আবাদ আর করমো না বাহে’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ধান আবাদ আর করমো না বাহে, ধান আবাদ করে এখন মাতাত হাত পইছে, ধান ব্যাচে যে টাকা হছে, তাতে আবাদ করার দামও হছেনা, হারা খামো কি? আবাদ করমো কি দিয়া?

কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক আফছার আলী। বাজারে ধানের দাম না থাকায়, ধান ভাল ফলন হলেও একর প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে কৃষককে।

একই কথা বলছেন উপজেলার বাসুদেবপুরের ধান চাষি পল্লী চিকিৎসক ওয়াজেদুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, এক একর ধান চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আর প্রান্তিক চাষিদের জমির ভাড়া রয়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, অথচ এক একর জমির ধান বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছে ২৭ থেকে২৮ হাজার টাকা।

ধান চাষ করে একর প্রতি কৃষককে লোকশান গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আর বর্গা চাষিদের গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, প্রতিবছর যদি কৃষক ধান চাষ করে শুধু লোকশান গুনতে হয়, তাহলে এই কৃষক পরিবারগুলো বাঁচবে কিভাবে?

ফুলবাড়ী পৌরসভার ধান হাটে ধান বিক্রি করতে আসা চকচকা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ধান চাষ করার বিবরণ দিয়ে বলেন, এক একর জমিতে ধান চাষ করতে খরছ হয়েছে, সেচ ৪ হাজার টাকা, রোপনের মজুরী ৪ হাজার টাকা, সার ৪ হাজার ৬০০ টাকা, ঔষধ ২ হাজার টাকা, নিড়ানী খরচ ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ধান কাটা-মাড়াই ১২ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে বীজতলা তৈরী ও বীজের দাম।

তিনি বলেন, বোরো ধান একর প্রতি উৎপাদন হয়েছে (৪০ কেজিতে মণ হিসেবে) ৬০ থেকে ৬২ মন, যার বাজার মূল্য ২৭ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা, অথচ একর প্রতি ধান চাষ করতে খরছ হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা, এর সাথে রয়েছে (বর্গাচাষিদের জন্য) জমির ভাড়া।

কৃষকরা জানান, প্রান্তিক চাষিরা এনজিও কিংবা মহাজনদের নিকট টাকা ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে, এখন সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না, আমন চাষ করবে কিভাবে?

উপজেলার কয়েকটি ধানের হাট ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট (চিকন/সরু) ধান প্রতিবস্থা (৮০ কেজি) ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ২৮ জাতের ধান ৯০০ টাকা ও হাইব্রীট ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ উৎপাদন খরচ হয়েছে এর থেকে অনেক বেশি।

ধান বিক্রি করতে আসা উপজেলার বারকোনা গ্রামের ধানচাষী বাবলু বলেন, সরকার কৃষকের নিকট ধান কিনছে, ধান কিনছে বলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, আসলে কয়েকজন কৃষকের নিকট ধান কিনছে সরকার, আর কতটুকু ধান কিনবে।

তিনি বলেন, কৃষক ধান চাষ করে এখন বিপাকে পড়েছে, কৃষক ধান বিক্রিও করতে পারছেনা, রাখতেও পারছেনা। এই ধান চাষি বলেন, এই ভাবে ঋণের বোঝা বইতে বইতে কৃষকের জমি গেছে, এখন কৃষক পরিবারগুলো পথে বসতে শুরু করেছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী জানান, এই উপজেলায় ৫২০ কেজি করে ৪৩৩ জন কৃষকের নিকট থেকে সরসরি ধান ক্রয় করা হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের শেষ জরিপ অনুযায়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৩২ হাজার ৫৫৫ জন কৃষক রয়েছে, সেখানে মাত্র ৪৩৩ জন কৃষক সরসরি সরকারকে ধান দিতে পারবে, তাও আবার মাত্র ৫২০ কেজি করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিম আশরাফ জানান, এই বছর বোরো চাষের লক্ষমাত্র ছিল ১৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর, সেখানে চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর। তিনি বলেন, এই বছর এই উপজেলায় ৯৯ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, যেখানে এই উপজেলায় কৃষক রয়েঝে ৩২ হাজার ৫৫৬ জন, সেখানে সরকারকে ধান দিতে পারবে মাত্র ৪৩৩ জন, আর সরকারী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে ৩২ হাজার ১২২ জন কৃষক।

এছাড়া ধান উৎপাদন হয়েছে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে সরকার কিনবে মাত্র ২২৫ মেট্রিক টন, এই সিদ্ধান্ত কৃষকের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।


আরো সংবাদ



premium cement
শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

সকল