হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা মুক্তার মোল্লা
- আব্দুল আওয়াল, বাগাতিপাড়া (নাটোর)
- ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৩২, আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৪১
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কথা তো শুনেছেন। ওই যে জার্মানির ছোট্ট একটি শহরে ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করতে বাঁশি বাজিয়ে ইঁদুর তাড়ায়। নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দেখা মিলেছে তেমনই এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার। তবে তিনি বাঁশি বাজিয়ে নয়, ফাঁদ পেতে শিকার করেন ইঁদুর। তার নাম মুক্তার মোল্লা। বয়স ৪৬ বছর।
মানুষের কষ্টে ফলানো ফসল ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠ থেকে ইঁদুর তাড়ানোর কাজটি করেন মুক্তার মোল্লা। তার এ ব্যতিক্রমি উদ্যোগ রীতিমতো এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চকহরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মোল্লার ছেলে। পেশায় দিনমজুর।
দিন কয়েক আগে ফাঁদে আটকা পড়া বেশ কিছু ইঁদুরসহ উপজেলা কৃষি অফিসে হাজির হয়েছিলেন মুক্তার মোল্লা। জানা যায়, দশ বছর ধরে উপজেলার ভেতরের চকহরিরামপুর, হরিরামপুর, তমালতলা, যোগীপাড়া, কোয়ালীপাড়াসহ আশে-পাশের মাঠে মাঠে ইঁদুর শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়ান। একসময় তিনি শ্যালোমেশিন দিয়ে মানুষের জমিতে পানি সেচের ব্যবসা করতেন। ফসলের ক্ষেতে পানি দেয়ার সময় গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা ইঁদুর মারতেন। পরে শ্যালোমেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষের জমিতে পানি সেচের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ইঁদুর শিকারের নেশা ছাড়তে পারেননি তিনি।
প্রায় দুই বছর ধরে ফাঁদে ইঁদুর শিকার করেন তিনি। এভাবে ইঁদুর মারার নেশা তাকে পেয়ে বসে। এখন তিনি অর্ধশত সিটকা ফাঁদ কিনেছেন। প্রতিদিন বিকাল হলেই ময়দার টোপ ফাঁদে লাগিয়ে ক্ষেতের আইলে রেখে দেন। একবার রাত ৯টার দিকে এবং আরেকবার পরদিন সকালে মাঠে নেমে ফাঁদে ইঁদুর পড়েছে কিনা যাচাই করেন।
পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরগুলো তিনি মাটিতে পুঁতে দেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ইঁদুর মারেন। একদিনে তিনি সর্বোচ্চ ৩৪৪টি ইঁদুর শিকার করেছেন। নিজের জমি নাই তবুও এভাবে দশ বছর ধরে চলছে তার ইঁদুর নিধনের ব্যতিক্রমী নেশা। এ দশ বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার ইঁদুর মারার দাবি করেছেন তিনি।
মুক্তার মোল্লা বলেন, ‘একসময় কামলা দিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে ধান নিতাম। একদিন মাটির ঘরের মেঝেতে রাখা সব ধান গর্ত করে ইঁদুর নামিয়ে নেয়। সেসময় ইঁদুর মারতে সিটকা ফাঁদ পেতেছিলাম। ওই ফাঁদে আটকা পড়ে হাতের একটি আঙ্গুলের মাথা কাটা পড়ে। তখন থেকে ইঁদুর শিকারের জিদটা আরো বেড়ে যায়। এখন কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল রক্ষায় ইঁদুর মারতে মাঠে মাঠে ঘুরি।’
এ ব্যাপারে চকহরিরামপুর গ্রামের জাফর প্রামানিক জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের মাঠে মুক্তার মোল্লাকে ইঁদুর শিকার করতে দেখছেন তিনি। এলাকায় তিনি 'ইঁদুর মারার মুক্তার মোল্লা' নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, ধান, গম, মসুর, কলাইসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য ক্ষতিকর ইঁদুর নিধনে প্রতি বছর বিশেষ সপ্তাহ পালন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। কিন্তু স্বেচ্ছায় মুক্তার মোল্লার এই উদ্যোগে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা