২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অ ভি ম ত : উপেক্ষিত কৃষক

-

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই কৃষক। এ দেশের কৃষক সমাজ সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা শহুরে জনগোষ্ঠী ও উচ্চবিত্তের খাবারের সংস্থান করে থাকেন। বলা যায়, বড়লোকদের সব প্রয়োজন মেটান। যারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনির দ্বারা অন্যের প্রয়োজন মেটান, তাদের নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর দায় কারো নেই। কৃষকরা বেশি কিছু চান না। তারা ক্ষমতার ভাগ চান না, তাদের পরিশ্রমের ফসলের যৌক্তিক দামের নিশ্চয়তাটুকু চান। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দামের জন্য প্রায়ই সেগুলো রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করতে হয়। তাদের পানির দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। অথচ কয়েক মাইল দূরেই শহরের বাজারে একই পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয় আমাদের। প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়ে আসছে। এসব দেখার কেউ কি নেই? নিশ্চয় আছে কিন্তু মুশকিল হলো কৃষকের স্বার্থ রক্ষা পেলে যে ব্যবসায়ীদের ভাগ কমে যায়! এ দেশে যারা ক্ষমতার বলয়ে থাকে তাদের ভাগ কমায়, সাধ্য কার? তারা ঋণখেলাপি হলে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়া যায়, অন্যায় আবদার মেনে নেয়া যায় কিন্তু কৃষকের পণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার প্রশ্নে তেমন কিছুই করার থাকে না কেন রাষ্ট্রের? সর্বংসহা আমাদের কৃষক সমাজ। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রধানত তাদের ওপর দিয়েই যায়। বন্যা, ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক সম্পদ ও ফসলহানি হয়। এসব বিপর্যয়ের পর দেশী-বিদেশী যে সাহায্য আসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য, তার বেশির ভাগ চলে যায় স্থানীয় অসাধু জনপ্রতিনিধি বা ক্ষমতার বলয়ে থাকা সুবিধাভোগীদের পকেটে। কৃষকের দুর্যোগ তাদের জন্য ‘সৌভাগ্য’ নিয়ে আসে। কৃষিকাজে ভর্তুকি যেটুকু দেয়া হয়, ক’জন প্রকৃত কৃষক তা পাচ্ছেন? কৃষক হয় উপলক্ষ আর ‘পিঁপড়া খায় চিনি’। এভাবেই এ দেশের কৃষকরা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে সব লাঞ্ছনা বঞ্চনা সহ্য করে সুদিনের আশায় চেয়ে থাকেন, যদিও সেদিন আর আসে না। যদি আসত, তাহলে টাঙ্গাইলের কৃষক আবদুল মালেক সিকদারকে এবার পাকা ধান ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করতে হতো না। কতটা দুঃখ ও ক্ষোভে একজন কৃষক তারই কষ্টের উৎপাদিত ফসলের ক্ষেতে আগুন দিতে পারেন? কেন তাদের বারবার এভাবে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হতে হয়? রাষ্ট্র কি ধান ক্ষেতে আগুন দেয়ার আগে বোঝেনি ধানের দাম অনেক কম? বুঝতে না পারলে সে ব্যর্থতার দায় তাদের। কেন সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? চালের দাম কমে না কিন্তু ধানের দাম কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ কেন হলো? সেই কারণ না খুঁজে উল্টো এই প্রতিবাদের পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ খুঁজছেন ক্ষমতাশালী কেউ কেউ। প্রতিবাদে নতুনত্ব আছে কিন্তু ষড়যন্ত্র নেই। খাদ্যমন্ত্রী কিভাবে বলেই বসলেন, ‘এটা সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’। কৃষিমন্ত্রী হাস্যকর ভঙ্গিতে বললেন, ‘দেশের উন্নয়ন হয়েছে বলেই কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না’। তিনি আরো বলেছেন, ‘ধানের উৎপাদন এবার আশাতীতভাবে বেশি হয়েছে। তাই কৃষকের এবার একটু ক্ষতি হবেই’ (বিবিসি ১৯ মে)। কৃষকের ক্ষতি হলে তাদের অনেক করণীয় আছে। বেশি ধান উৎপাদনের মাশুল শুধু কৃষকদের দিতেই হচ্ছে। ধানের উৎপাদন বেশি হবে, তা মন্ত্রীরা আগে আঁচ করতে পারা উচিত। দেশের গুদামে ধান রাখার জায়গা নেই, গুদাম তৈরি করতে হবে, তার উদ্যোগ না থাকলেও বুঝি সমস্যা নেই। যত দোষ ‘নন্দ ঘোষ’ কৃষকের। কারণ তারা বেশি ধান উৎপাদন করেছেন। বলা হচ্ছে, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা যাবে না, আবার গুদামেও নাকি জায়গা নেই। কিন্তু ভরা মৌসুমে টনে টনে ভারতীয় চাল আমদানি করার হেতু কী (দৈনিক যুগান্তর, ১৮ মে)? দেশের কৃষক বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, এটা মেনে নেয়া যায় না। ক্ষমতাকেন্দ্রিক নীতিতে রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার ক্ষেত্রে তো উল্টো চিত্র দেখা যায়। তারা না চাইতেই অনেক কিছু পাচ্ছেন। যাদের ব্যবসা করার কথা নয়, তারাও দেদার মুনাফা করছেন। জনগণের করের টাকা অনেকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। তাদের বেলায় ‘না’ বলতে মানা। ‘না’ বলা যাবে শুধু হতভাগা কৃষকদের? হ
এস এম আবদুর রাজ্জাক
ৎধুুধশ৯১@ুধযড়ড়.পড়স

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি দুর্নীতির মামলায় কৃষিমন্ত্রীকে আটক করল ইউক্রেন মোরেলগঞ্জে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা দেবীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু

সকল